জয়পুরহাটে চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্র মোয়াজ্জেম হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি দেওয়ান বেদারুল ইসলাম বেদিনের কাছ থেকে জয়পুরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পেশকার এস এম শাহীন ঘুষের টাকা নিচ্ছেন- এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ফাঁসির আসামি দেওয়ান বেদারুল ইসলাম তার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি পোস্ট করেছেন।
ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘সাধু সাবধান, জয়পুরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পেশকার শাহীন আমার মামলার রায়ে ফাঁসির ভয় দেখিয়ে খালাস করে দেবে বলে আমার বসার ঘর থেকে প্রত্যাহারকৃত বিচারক আব্বাস উদ্দীনের নাম করে টাকা নেওয়ার ভিডিও ফুটেজ। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
গত শুক্রবার (২৮ জুন) ভিডিওটি আপলোডের পর রবিবার (৩০ জুন) বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ৩৫টি কমেন্ট, ২২টি শেয়ার ও ১১ হাজার ৭০০ ভিউ এবং ২২২টি রি-অ্যাকশন পড়েছে। ওই ভিডিওর স্ক্রিনে ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ লেখা রয়েছে।
৬ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, দেওয়ান বেদারুল ইসলাম বেদিনের বাসার একটি ঘরে এক ব্যক্তি গায়ে জ্যাকেট ও মাথায় মাফলার পরে ঢোকেন। তাকে ঘরে বসিয়ে রেখে বেদিন কিছুক্ষণের জন্য চলে যান। এরপর বেদিন একটি লাল রঙের ব্যাগ নিয়ে ঘরে ঢুকে পাশের টেবিলের ওপর রাখেন। তখন ওই ব্যক্তি বেদিনকে কিছু বলছিলেন। বেদিন এদিক-ওদিক তাকিয়ে কথার উত্তর দিচ্ছিলেন। তাদের মধ্যে কিছু কথোপকথনের পর বেদিন টেবিলের ওপর রাখা লাল ব্যাগটি নিজের হাতে নিয়ে ব্যাগের ভেতর থেকে টাকার বান্ডিল বের করে ওই ব্যক্তির হাতে দেন। ওই ব্যক্তি টাকার বান্ডিলগুলো দেখে লাল ব্যাগটি চেয়ে নিয়ে সেই ব্যাগে টাকাগুলো ঢুকিয়ে নেন।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বেদারুলের বাসায় গিয়ে তার কাছ থেকে টাকা নেওয়া ব্যক্তিটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী এস এম শাহীন।
এদিকে ভিডিওতে টাকা নেওয়া ব্যক্তিটি তিনি বলে স্বীকার করেছেন বেঞ্চ সহকারী এস এম শাহীন। তবে তিনি কোনো ঘুষ নেননি বলে দাবি করে বলেন, ‘আমার বড় ভাইয়ের বন্ধু ছিলেন বেদারুল ইসলাম বেদিন। তিনি আমার ভাই ও আমার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়েছিলেন। সেই টাকা তিনি আমাকে ফেরত দিয়েছেন। তার মামলা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ছিল না। তাই মামলা থেকে খালাসের কথা বলে তার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা সত্য নয়।’
জয়পুরহাট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহনূর রহমান শাহীন বলেন, ‘ভিডিওটি আমাকে একজন আইনজীবী দেখিয়েছেন। টাকা নেওয়া ব্যক্তিটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী শাহীন বলে মনে হয়েছে। এটি তদন্ত করে দেখা উচিত।’
জয়পুরহাট শহরের প্রামাণিকপাড়ার ফজলুর রহমানের ছেলে মোয়াজ্জেম স্থানীয় একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। ২০০২ সালের ২৮ জুন বিকেলে বাড়ি থেকে বেড়ানোর কথা বলে বের হয় মোয়াজ্জেম। দুর্বৃত্তরা অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে জামালগঞ্জ রোডের একটি আমগাছের নিচে তাকে ফেলে রেখে যায়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেই রাতেই মোয়াজ্জেম মারা যায়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা জয়পুরহাট সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ওই মামলার রায়ে বেদারুল ইসলাম বেদিনসহ ১১ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত।