‘আমার আইয়ুবরে তোমরা ফিরিয়ে এনে দাও, আমি আমার ছেলেরে আমার বুকে ফিরে পেতে চাই। আমি টাকা-পয়সা কিছুই চাই না। তোমরা প্রধানমন্ত্রীরে কওগো আমার ছেলেরে আমার বুকে ফিরিয়ে এনে দিতে। আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে আমি টাকা, ঘর-বাড়ি জমিজমা সব বিক্রি করে দিব রে।’
এই আহাজারি ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজে থাকা ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট আইয়ুব খানের মায়ের।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার রাখালিয়া গ্রামের বাড়িতে গেলে সাংবাদিকদের দেখে বৃদ্ধা হোমায়রা বেগম এভাবে বিলাপ করতে থাকেন।
বাংলাদেশি ২৩ নাবিকের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট আইয়ুব খান। প্রায় এক মাস আগে তার বাবা আজহার মিয়া মারা যান। এখনো মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি পরিবারটি। এর মধ্যেই পরিবারের ছোট ছেলে জলদস্যুদের কবলে পড়ায় আইয়ুবের মা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। কিছুক্ষণ পরপরই ছেলের ছবি বুকে চেয়ে আর্তনাদ করেন।
আইয়ুব লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রাখালিয়া এলাকার মৃত আজহার মিয়ার ছোট ছেলে। তিনি রাখালিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রামগঞ্জের ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া একাডেমি থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে এক বছর ইন্টার্নি করছেন।
তার মা হোময়রা জানান, সোমবার বিকেলে আইয়ুব তার সঙ্গে শেষবার কথা বলেছে। মঙ্গলবার তার অন্য ছেলেদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। কেউ তাকে কিছু জানায়নি। গত রাতে তিনি নাতিনের কাছ থেকে শুনে মেঝো ছেলেকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানতে চান। মেঝো ছেলে তাকে জানিয়েছে আইয়ুবের জন্য চিন্তা না করতে।
ভারত মহাসাগরে আইয়ুবদের জাহাজ সোমালিয়ান জলদস্যুরা অস্ত্র ঠেকিয়ে কব্জা করেছে। এসব শোনার পর থেকেই কান্নাই তার সম্বল, সারা রাত তিনি ঘুমাতে পারেননি। আইয়ুবের কোনো খবরও পাওয়া যাচ্ছে না। তার ছেলের কী অবস্থা। কোথায় আছে। কেমন আছে? এসব বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। ‘আমি আমার বাবারে চাই। আমি আর কী চাইতাম। আমি দুদিন ধরে কোরআন শরিফ পড়ছি। আইয়ুবও পরশু কোরআন শরিফ পড়া শুরু করেছিল। আমার স্বামী মারা যাওয়ার ২০-২৫ দিন আগে সবশেষ আইয়ুব বাড়িতে এসেছিল। এক দিন থেকেই পরে চলে গেছে।’
আইয়ুবসহ ২৩ নাবিককে উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুরে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। পরে তারা জাহাজটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যায়।
মোহাম্মদ রফিকুল/ইসরাত চৈতি/অমিয়/