![সাতক্ষীরায় ৫০ মিটার সেতু বানাতেই ৩ বছর](uploads/2024/03/25/1711346976.Satkhira-Bridge.jpg)
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার রইচপুর খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ গত তিন বছরেও শেষ হয়নি। ফলে উপজেলার শিবপুর, ঘোনা, বৈকারি ইউনিয়নের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে বিকল্প কাঠের তৈরি সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে তারা যাতায়াত করছেন। তবে যাত্রীসহ পণ্যবাহী কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে ২০২১ সালে রইচপুর খালের ওপর সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়। সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয় রাজধানীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সল্যুশন ডিজাইনকে। কার্যাদেশ অনুযায়ী সেতু নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের নভেম্বরে। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও কেবল তিনটি পিলার ঢালাই ছাড়া সেতুর দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এলজিইডির প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ঠিকাদারকে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও সেতুর কাজ শেষ করানো যাচ্ছে না। সবশেষ ঠিকাদারকে ছয় মাসের সময় নির্ধারণ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। উল্লেখিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শহরের প্রবেশমুখ ইটাগাছা-ঘোনা সড়কের রইচপুর খালের ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে সেতুটি। সদর উপজেলার ঘোনা, শিবপুর, আগড়দাড়ী ইউনিয়নের ৫০ হাজার মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম হলো রইচপুর সেতু। ২০২১ সালে পুরোনো সেতু ভেঙে সেখানে শুরু হয় নতুন সেতু নির্মাণের কাজ। কিন্তু গত তিন বছরেও সেতু নির্মাণ শেষ না হওয়ায় মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিকল্প হিসেবে যে সাঁকো তৈরি করা হয়েছে তা দিয়ে কোনো রকম সাইকেল বা মোটরসাইকেল পার ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিসের সেবাও ওই এলাকায় মিলছে না।
সাতক্ষীরা পৌরসভার কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর কবির কালু জানান, পৌরসভার শেষ সীমানা হলো রইচপুর। তাছাড়া ব্যস্ততম সড়ক এটি। আশপাশে তিন-চারটি ইউনিয়নের মানুষ চলাচল করে ইটাগাছা-ঘোনা সড়ক দিয়ে। এসব ইউনিয়নের উৎপাদিত কৃষিপণ্য সবজি বা বিভিন্ন প্রকার মাছ রইচপুর সেতু পার হয়ে জেলা শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। অথচ দীর্ঘ তিন বছরেও সেতুটির নির্মাণ শেষ হলো না। স্থানীয় সংসদ সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কাজের অগ্রগতি পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সল্যুশন ডিজানের মালিক মাহবুবর হোসেনে সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। সবশেষ সেতুটি নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য তাকে ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জানান, শহরতলীর রইচপুর এলাকার সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ। এ সড়ক দিয়ে সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। জেলার একমাত্র বিনোদন পার্ক বা রিসোর্ট মোজাফফার গার্ডেন রয়েছে রইচপুর এলাকায়। ফলে শহর এবং আশপাশের বহু মানুষের বিনোদন বা চলাচলের মাধ্যম এই রইচপুর সেতু। কিন্তু তিন বছরেও মাত্র ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ শেষ হলো না, এটি আসলে মানতে কষ্ট হয়।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জান বলেন, গত সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ছয় মাসের মধ্যে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে সেতুটির কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৩০-৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।