নিষেধাজ্ঞার ২৯ দিন পার হলেও লক্ষ্মীপুরের মেঘনার ৪৬ শতাংশ জেলে এখনো পাননি প্রণোদনার ভিজিএফের চাল। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন তারা। কবে নাগাদ তারা চাল পাবেন বা আদৌ পাবে কি না, তা নিশ্চিত করতে পারছে না জেলা মৎস্য অফিস।
তবে অভিযোগ রয়েছে, জেলে নয় এমন আত্মীয়স্বজনকে জেলে কার্ড করে দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। এতে প্রকৃত জেলেরা কার্ড ও চাল না পেলেও এলাকার যুবলীগ সভাপতি ও পুলিশের এক এসআইয়ের বাবা ঠিকই চাল পেয়েছেন। বিষয়টি স্বীকার করেছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
জানা গেছে, ইলিশের অভয়ারণ্য ঘোষিত চাঁদপুর জেলার ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। গত ১ মার্চ থেকে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এ সময় নদীতে মাছ ধরা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। এতে জেলার উপকূলীয় মেঘনা নদীর ৪০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা চলমান রয়েছে।
এ সময় নদীর তালিকাভুক্ত প্রত্যেক জেলের জন্য মৎস্য অধিদপ্তর ৮০ কেজি করে ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু জেলার মেঘনার ৫২ হাজার ৩৫১ জন জেলের মধ্যে ২৮ হাজার ৩৪৪ জন জেলের জন্য ২ হাজার ২৬৭ দশমিক ৫২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ করা চাল তালিকাভুক্ত ৫৪ শতাংশ জেলের মধ্যে বিতরণ করা হলেও বাকি ৪৬ শতাংশ এখনো কোনো চাল পাননি। এই ৪৬ শতাংশ জেলের জন্য কবে নাগাদ চাল বরাদ্দ আসবে, তাও জানাতে পারেননি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম।
সদর উপজেলার মজু চৌধুরীর হাট এলাকার মেঘনার জেলে বর্ষা মাঝি (৭০) ও সিরাজ মাঝি (৭২) জানান, নদীতে মাছ ধরে তাদের পরিবারের আহার জুটলেও এখন মাছ ধরা বন্ধ থাকায় তারা বেকার হয়ে আছেন। সারাজীবন নদীতে মাছ ধরে জীবন পার করলেও বারবার কাগজপত্র দিয়েও তারা জেলে তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। ফলে সরকারি চাল পাওয়া অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছেন তারা। নুরুল ইসলাম (৫৫) নামে অপর জেলে জানান, জেলে কার্ড থাকলেও এখনো তিনি চাল পাননি।
উত্তর চর রমণীমোহন এলাকার ইউপি সদস্য আহাম্মদ আলী জানান, প্রকৃত জেলেরা কার্ড ও চাল না পেলেও জেলে না হয়েও তার এলাকার যুবলীগ সভাপতি ও পুলিশের এক এসআইয়ের বাবা ঠিকই চাল পেয়েছেন। বিগত দিনে তালিকা করার সময় জনপ্রতিনিধিরা তাদের জেলে নয়, এমন আত্মীয়স্বজনকে জেলে কার্ড করে দিয়েছেন। ফলে তারা এখন চাল পাচ্ছেন। অপরদিকে জেলে হয়েও অনেকেই এখনো জেলে কার্ড পাননি।
এছাড়া জেলেদের চাল দেওয়ার তালিকাভুক্ত করার সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের থেকে নানাভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
কমলনগর উপজেলার নাছিরগঞ্জ এলাকার জেলে ইব্রাহীম, আনোয়ার ও ফারুক মাঝি জানান, চালের কার্ড পেতে তাদের স্থানীয় ইউপি সদস্যকে হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে। তাদের অভিযোগ, তালিকাভুক্ত জেলের চেয়ে চালের বরাদ্দ কম আসায় ইউপি সদস্যরা এই সুযোগ নিয়েছেন এবং জেলেরাও চাল পেতে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরে তালিকাভুক্ত জেলের সংখ্যা ৫২ হাজার ৩৫১ জন। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৭ হাজার ৪৪৬ জন, রায়পুরে ৭ হাজার ৯৯৮ জন, কমলনগরে ১২ হাজার ৯৩৮ জন এবং রামগাতিতে ২৩ হাজার ৯৬৯ জন তালিকাভুক্ত রয়েছেন।
এ তালিকায় জেলে নয় এমন ব্যক্তিরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, আগে স্থানীয় ইউপি মেম্বার চেয়ারম্যানের মাধ্যমে এ তালিকা করার সময় তারা জেলে নয়, এমন অনেক আত্মীয়স্বজনকে জেলে তালিকাভুক্ত করেছেন।