ঢাকা ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪

চাঁদের নমুনা নিয়ে পৃথিবীতে ফিরেছে চীনের চন্দ্রযান

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ০২:৫০ পিএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ০২:৫০ পিএম
চাঁদের নমুনা নিয়ে পৃথিবীতে ফিরেছে চীনের চন্দ্রযান
ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর মতো চাঁদ কি বসবাসের যোগ্য? চাঁদের মাটিতে কি প্রাণের সঞ্চার হতে পারে? মানুষ এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে, অনেক আগে থেকে। এবার এই উত্তরের সন্ধানে চাঁদের কঠিনতম প্রান্তে মহাকাশযান পাঠিয়েছে চীন। সেখানকার মাটি খুঁড়ে পৃথিবীতে নমুনা নিয়ে ফিরেছে নভোযানটি।

চীনের চ্যাংই-সিক্স লুনার মডিউল গত মঙ্গলবার পৃথিবীতে ফিরে এসেছে। দেশটির উচ্চাকাঙ্ক্ষী মহাকাশ কর্মসূচির জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে চাঁদের দূরবর্তী দিক থেকে প্রথমবারের মতো নমুনা সংগ্রহের ঐতিহাসিক অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিসিটিভি জানিয়েছে, পুনঃপ্রবেশ করা মডিউলটি মঙ্গলবার চীনের উত্তরাঞ্চলীয় অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়া অঞ্চলে নির্ধারিত এলাকায় সফলভাবে অবতরণ করেছে। সিসিটিভির সরাসরি সম্প্রচারে দেখা যায়, মডিউল প্যারাসুটের মাধ্যমে অবতরণ করছে এবং মিশন নিয়ন্ত্রণ কক্ষে তালি দিচ্ছে সবাই।

নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে চীনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিএনএসএ)-এর প্রধান ঝাং কেইজিয়ান বলেন, চ্যাংই-সিক্স চন্দ্র অনুসন্ধান অভিযান সম্পূর্ণ সফল হয়েছে।

সিসিটিভি জানিয়েছে, অবতরণের কয়েক মিনিটের মধ্যেই একটি অনুসন্ধান দল মডিউলটি উদ্ধার করে। সরাসরি সম্প্রচারের সময় দেখা যায়, একজন কর্মী মডিউলটির পরীক্ষা করছেন, যা একটি চীনা পতাকার পাশে ঘাসের ওপর রয়েছে।

এই সফল মিশনকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ‘চিরকালের স্বপ্ন’ বলে প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনাটি এমন সময় ঘটেছে যখন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশও নিজেদের চাঁদে অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করছে। গত মঙ্গলবারের এক অভিনন্দন বার্তায় সি চিন পিং মিশনটিকে ‘মহাকাশ ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে শক্তিশালী দেশ গড়ার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন’ হিসেবে অভিহিত করেন।

বেইজিং ২০৩০ সালের মধ্যে মহাকাশে মহাকাশচারী পাঠানোর এবং চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে একটি গবেষণা কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা করেছে। ধারণা করা হয়, চন্দ্রের দক্ষিণ মেরুতে জলীয় বরফ রেয়েছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রও একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করতে চায়।

সিএনএসএ জানিয়েছে, চ্যাংই-সিক্স অনুসন্ধান যানটি চাঁদের দূরবর্তী দিক থেকে প্রায় দুই কেজি চাঁদের ধুলা ও পাথর নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে এসেছে, যা চীনের গবেষকরা বিশ্লেষণ করবেন। এরপর আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীরা এটি নিয়ে গবেষণা করবেন।

মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই চাঁদে পাড়ি জমিয়েছিল চীন। গত ৩ মে দেশটির দক্ষিণ প্রান্তের হাইনান প্রদেশ থেকে ‘লং মার্চ-ফাইভ’ নামক রকেটে চড়ে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল চ্যাং-৬।

চন্দ্রযান চ্যাংই-৬-এর লক্ষ্য ছিল চাঁদ থেকে মাটি এবং পাথর সংগ্রহ করে পৃথিবীতে নিয়ে আসা। বিজ্ঞানীদের একাংশ ভেবেছিলেন চিনের চন্দ্রযান বোধ হয় চাঁদের মাটিতে অবতরণ করতেই ব্যর্থ হবে।

 

নভোচারী আটকা পড়েছেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ০২:৫৭ পিএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ০২:৫৭ পিএম
নভোচারী আটকা পড়েছেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে
ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার দুই নভোচারী আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) আটকা পড়েছেন। বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানের বেশ কয়েকটি যান্ত্রিক সমস্যার কারণে নাসার নভোচারী ব্যারি উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস সেখানেই অবস্থান করছেন। এ দুইজন নভোচারীকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে। তবে তাদের ফিরে আসার কোনো নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।

৫ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থিত কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন থেকে স্টারলাইনার মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। ফ্লাইট কমান্ডার ব্যারি উইলমোর ও ফ্লাইট পাইলট সুনিতা উইলিয়ামসসহ একদিন পর নভোযানটি  আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছায়। এই মিশন নাসার কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রামের অংশ, যা বোয়িংয়ের নভোযান আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নিয়মিত মিশন পরিচালনা করার জন্য যোগ্য কি-না তা পরীক্ষা করছে। মূলত এই নভোচারীদের ১৪ জুন পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা ছিল। তবে তাদের ফিরে আসা বেশ কয়েকবার পিছিয়েছে। এখনো পৃথিবীতে ফিরে আসার দিন-ক্ষণ অনির্ধারিত।

নাসার কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রামের পরিচালক স্টিভ স্টিচ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা সময় নিচ্ছি ও ভালোভাবে মিশন ব্যবস্থাপনা দলের প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি। রনডেইভু (rendezvous) ও ডকিং (docking)-এর সময় আমরা হিলিয়াম সিস্টেমে ছোট লিকেজ ও থ্রাস্টারের কার্যক্রমের সমস্যা দেখেছি। সে জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত ডেটা ব্যবহার করছি।’

বোয়িং ও নাসা জানিয়েছে, নভোযানটিতে সমস্যা দেখা দেওয়ার পরও মহাকাশচারীরা বর্তমানে নিরাপদে আছেন। তারা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আছেন, যেখানে তাদের জন্য খাবার, পানি ও অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় সব সরবরাহ রয়েছে। আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত স্টেশনের কার্যসূচি তুলনামূলকভাবে ফাঁকা রয়েছে। মহাকাশচারীদের পৃথিবীতে ফিরে আসার জন্য কোনো চাপ নেই। 

নাসা ও বোয়িং আরও জানিয়েছে, ব্যারি উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস আইএসএসের ‘এক্সপিডিশন ৭১’ ক্রুদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। প্রয়োজন অনুসারে স্টেশন অপারেশনে সহায়তা করছেন। নাসার স্টারলাইনারের সম্ভাব্য প্রত্যয়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করছেন।

বোয়িংয়ের স্টারলাইনার প্রোগ্রামের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্ক ন্যাপি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ক্রুদের প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল। তারা জানেন ক্রু ফ্লাইট টেস্টে আমরা যা শিখেছি, তা ভবিষ্যতের ক্রুদের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত ও সুচারু করবে।’

স্টারলাইনার উৎক্ষেপণের আগে থেকে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়েছে। পরীক্ষামূলক এই উৎক্ষেপণের কথা ছিল চলতি বছরের ৬ মে। তবে মহাকাশযান কক্ষপথে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্সের (ইউএলএ) রকেটের অক্সিজেন ভাল্বের সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে উৎক্ষেপণটি বাতিল করা হয়েছে।

২৫ মে নতুন করে উৎক্ষেপণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে পরে মহাকাশযান পরিচালনার জন্য সাপোর্ট সিস্টেম ও যন্ত্রপাতি রয়েছে, এমন সার্ভিস মডিউলে হিলিয়াম সিস্টেমে লিকেজ ধরা পড়ে।

এরপর হিলিয়াম লিকেজ ও থ্রাস্টারের সমস্যা স্টারলাইনারের ডকিং বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কায় পড়ে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ডকিংয়ের পাঁচ দিন পর নাসা ও বোয়িং জানায়, মহাকাশযানটিতে পাঁচটি ছোট হিলিয়াম লিকেজ হয়েছে। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, ফিরতি যাত্রার জন্য যথেষ্ট হিলিয়াম জ্বালানি রয়েছে।

মূলত নভোচারীদের এই সফরে আট দিন থাকার কথা ছিল। তবে বর্তমানে মহাকাশচারীদের সমস্যা সমাধানের জন্য কমপক্ষে এক মাস আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

বোয়িং জানিয়েছে, আগামী ২ জুলাই নির্ধারিত স্পেসওয়াকের পর মহাকাশচারীদের ফিরতি সময়সূচি সমন্বয় করা হবে। নাসার বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, নতুন লক্ষ্য ফিরতি যাত্রার তারিখ ৬ জুলাই।

মহাকাশে থাকা সুনিতার জন্য নতুন কিছু নয়। এর আগে ৩২২ দিন মহাকাশে ছিলেন সুনিতা। নারী হিসেবে সবচেয়ে বেশি সময় মহাকাশে থাকার রেকর্ড তার। এবার নিয়ে তৃতীয়বার মহাকাশে গেলেন সুনিতা। ব্যারিও অভিজ্ঞ নভোচারী। তিনিও তিনবার মহাকাশে গিয়েছেন। সূত্র: এবিসি নিউজ

 

পছন্দের জিনিস সহজ করে মস্তিষ্কের কাজ

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪, ০৮:৫১ পিএম
পছন্দের জিনিস সহজ করে মস্তিষ্কের কাজ
ছবি: সংগৃহীত

মানুষের পছন্দের খাবার, রং, জায়গা, এমনকি মানুষের প্রতি আকর্ষণ- এ সবকিছুর পেছনেই রয়েছে মস্তিষ্কের কার্যকৌশল। বিবর্তনের ফলে মানুষের মস্তিষ্কে এই পছন্দের ধারণা গেঁথে গেছে। আমরা সাধারণত উজ্জ্বল রঙের প্রতি আকৃষ্ট হই। কারণ এগুলো আকাশ ও পানির মতো ইতিবাচক জিনিসের সঙ্গে সম্পর্কিত। আবার গাঢ় রং, যা ময়লা বা রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত- সেগুলো আমরা এড়িয়ে চলি।

আমরা সাধারণত এমন ভৌগোলিক পরিবেশ পছন্দ করি, যা আশ্রয়, সম্পদ ও সুন্দর পরিবেশের ভারসাম্য দিয়ে থাকে। সম্ভবত কারণ, বিবর্তনের ফলে আমাদের পূর্বপুরুষরা এই জায়গায় টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ সাধারণত নিখুঁত চেহারাকে সুন্দর মনে করে। কারণ এটি সুস্থ জিনের লক্ষণ হতে পারে।

পছন্দের ব্যাপারে জিনগত প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক প্রভাব ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ছেলেবেলায় হয়তো প্রিয় রং, দেশ, চলচ্চিত্র ও তারকা ইত্যাদি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হতো। এই উত্তরগুলো নির্বাচনে মিশ্রভাবে কাজ করে মৌলিক প্রবণতা ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার। এসব পছন্দের ক্ষেত্রে বিবর্তনীয় পছন্দ ও ব্যক্তিগত পছন্দের মতো বিষয় মিশ্রণ হয়। কোন ফুটবল দলকে সমর্থন করি বা কোন ছুটির অভিজ্ঞতা মনে রয়েছে, সেগুলো উত্তর নির্বাচনে কাজ করে। এসব পছন্দের তালিকা মনে রাখি ও কথায় কথায় সেগুলো বলি।

পছন্দের আরেকটি কারণ হলো সহজ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কৌশল বা সহজীকরণ। পৃথিবীতে এত বিচিত্র পছন্দের জিনিস আছে যে, সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া ক্লান্তিকর হয়। তাই মস্তিষ্ক শর্টকাট পদ্ধতি ব্যবহার করে। শর্টকাট হিসেবে মস্তিষ্ক পছন্দের জিনিসগুলোকে বেছে নেয়। রেস্টুরেন্ট বা ছুটি কাটানোর জায়গা নির্বাচন, এমনকি কোন পডকাস্ট শুনবেন, সেসব ক্ষেত্রে পছন্দের জিনিসের দিকেই ঝুঁকে পড়ি। এটা সুবিধাজনক ঠিকই, তবে নতুন কিছু চেষ্টা করে দেখার সুযোগ বা সাহসিকতার জন্য এতটা দুর্দান্ত নয়। বিশেষ করে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পছন্দের প্রবণতা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। বাবা-মায়ের যদি একটি সন্তানের প্রতি আরেক সন্তানের চেয়ে বেশি ঝোঁক থাকে অথবা কোনো কর্মকর্তার যদি একজন কর্মচারীকে বেশি পছন্দ করেন, তাহলে তা অন্যায় ও বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে। ব্যক্তি-পছন্দ পক্ষপাতিত্ব তৈরি করে,  আর  পক্ষপাত দুর্নীতি ও বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে। সূত্র: বিবিসি

জাহ্নবী

হাতিরা একে অপরের নাম ধরে ডাকে

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৪, ১২:২৮ পিএম
আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪, ০৮:৫০ পিএম
হাতিরা একে অপরের নাম ধরে ডাকে
ছবি: সংগৃহীত

বহু বছর ধরে আফ্রিকান হাতিদের ওপর গবেষণা চালিয়ে আসছেন গবেষকরা। এ সময় তারা একটি আকর্ষণীয় ঘটনা লক্ষ করেছেন। কখনো কোনো হাতি কোনো দলের সদস্যদের উদ্দেশে ডাক দিলে, ওই দলের সবাই সাড়া দেয়। তবে অনেক সময় একই হাতি যখন একই ধরনের ডাক দেয়, তখন শুধু একটি হাতি সাড়া দেয়।

এরকম হওয়ার কারণ কী হতে পারে? হাতিরা কি একে অপরকে নাম ধরে ডাকছে? নতুন এক গবেষণায় এই প্রশ্নেরই উত্তর মিলেছে। কেনিয়ার আফ্রিকান সাভানা হাতিদের নিয়ে এই গবেষণা করা হয়েছে। নতুন এই গবেষণা প্রতিবেদনটি চলতি মাসে ন্যাচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভল্যুশন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষকরা আম্বোসেলি ন্যাশনাল পার্ক এবং সাম্বুরু ন্যাশনাল রিজার্ভে ১০০টিরও বেশি হাতির ডাক বিশ্লেষণ করেছেন। এই ডাকগুলো বেশির ভাগই গর্জন ছিল, যা হাতিদের স্বরযন্ত্র ব্যবহার করে তৈরি করে, ঠিক মানুষের কথা বলার মতো।

একটি মেশিন লার্নিং মডেল ব্যবহার করে গবেষকরা এসব ডাকে এমন কিছু শনাক্ত করেছেন, যা কোনো নির্দিষ্ট হাতিকে ডাকার সময় ব্যবহৃত নামের মতো উপাদান নির্দেশ করে।

এরপর গবেষকরা ১৭টি হাতির কাছে অডিও বাজিয়ে পরীক্ষা করেছেন। এই পরীক্ষায় হাতিরা নিজেদের ডাক ও অন্য কোনো হাতিকে উদ্দেশ্য করে ডাকের প্রতি কীভাবে সাড়া দেয়, তা পর্যবেক্ষণ করেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, হাতিরা তাদের উদ্দেশ্য করে ডাকা হলে বেশি সাড়া দিয়েছে। যখন তারা এমন ডাক শুনেছে, তখন তারা আরও উৎসাহিত আচরণ করেছে, শব্দের উৎসের দিকে হেঁটে গেছে। অন্যদের উদ্দেশ্য করে ডাকা হলে তার চেয়ে বেশি ডাক দিয়েছে।

প্রকাশিত গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক কর্নেল ইউনিভার্সিটির (সাবেক কলোরাডো স্টেট ইউনির্ভাসিটি) বিহ্যাভিরিয়াল ইকোলজিস্ট মিকি পারডো গবেষণার ফলাফলের আলোকে জানান, ‘হাতিরা একে অপরকে নামের মতো কিছু দিয়ে ডাকাডাকি করে।’

পারডো বলেন, ‘এভাবে একে অপরকে ডাকতে হলে, হাতিদের অবশ্যই নির্দিষ্ট শব্দকে নির্দিষ্ট হাতির সঙ্গে সম্পর্কিত করে শিখতে হবে। এরপর সেই শব্দগুলো ব্যবহার করে ওই নির্দিষ্ট হাতির মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন হয় সামাজিক সম্পর্ক বোঝার সক্ষমতা ও উন্নত শিখার দক্ষতা।’

তিনি আরও বলেন ‘হাতিরা যে একে অপরকে আলাদা আলাদা প্রাণী হিসেবে সম্বোধন করে, এটা তাদের সামাজিক বন্ধনের গুরুত্বকে তুলে ধরে। বিশেষ করে, এই প্রাণীদের জন্য বিভিন্ন সামাজিক বন্ধন বজায় রাখার গুরুত্বকে তুলে ধরে।’

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থলজ প্রাণী হাতিদের অত্যন্ত বুদ্ধি, তীক্ষ্ণ স্মৃতিশক্তি, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ও উন্নত যোগাযোগের সক্ষমতার জন্য পরিচিতি আছে। আগের গবেষণায় দেখা গেছে, একে অপরকে অভিবাদন জানানোর সময় দৃশ্যমান, শ্রাব্য ও স্পর্শগত ইশারার মতো জটিল আচরণ ব্যবহার করে।

হাতিরা কেন একে অপরকে নাম ধরে ডাকে? 
গবেষণা দলের আরেক সদস্য জর্জ উইটমেয়ার ‘আমরা সবকিছু জানি না ঠিকই, তবে আমাদের বিশ্লেষণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, সাধারণত যখন একটি হাতি অন্য একজনকে ডাকে, বিশেষ করে নাম ধরে ডাকে, তখনই এই ঘটনা ঘটে।’ জর্জ উইটেমেয়ার ‘সেভ দ্য এলিফ্যান্টস’ সংরক্ষণ সংস্থার বৈজ্ঞানিক বোর্ডের চেয়ারম্যান।

তিনি আরও বলেন, ‘মা হাতিদের বাচ্চার প্রতি গর্জনের ক্ষেত্রেও নামের মতো উপাদান সাধারণ ছিল। মা হাতিরা তাদের বাচ্চাদের শান্ত করতে বা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য প্রায়ই নাম ধরে ডাকে। আমরা মনে করেছিলাম স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে এ ধরনের নামের মতো উপাদান বেশি দেখা যাবে, তবে সেই ধরনের ডাকে এটি কম দেখা গেছে।’

প্রাণিজগতে নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট শব্দ বা নাম ব্যবহার করা বিরল, তবে অভূতপূর্ব নয়। ডলফিন ও তোতাপাখিদেরও এটি করতে দেখা যায়। তবে তখন তারা শুধু অন্য প্রাণীর তৈরি শব্দ নকল বা অনুকরণ করে। হাতিদের ক্ষেত্রে এই নাম ধরে ডাকার বিষয়, কোনো শব্দের নকল বা অনুকরণ 
করা নয়।

পারডো বলেন, ‘তাদের ডাকা নামগুলো মানুষের নামের মতো এলোমেলো মনে হয়। এভাবে একে অপরকে নাম ধরে ডাকতে কিছুটা বিমূর্ত চিন্তা ক্ষমতার প্রয়োজন হয়।’

উইটেমেয়ার বলেন, ‘হাতি অসাধারণ সামাজিক প্রাণী। তারা সবসময় পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে, স্পর্শ করে। এই নাম ধরে ডাকা, খুব সম্ভবত তাদের পরস্পরের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগাযোগ করার সক্ষমতার আরেকটি প্রমাণ। আমি মনে করি, এই গবেষণা তুলে ধরে হাতিরা কতটা বুদ্ধিমান ও আকর্ষণীয়। আশা করছি, এটি তাদের সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় আরও আগ্রহ তৈরি করবে।’

মানুষ কি একদিন হাতিদের সঙ্গে কথা বলতে পারবে?
এ বিষয়ে উইটেমেয়ার বলেন, ‘এটা খুবই চমৎকার কল্পনা, তবে আমরা এখনো সেখান থেকে অনেক দূরে আছি। হাতির ডাকের মধ্যে কীভাবে তথ্য এনকোড করা হয়, সেই সিনট্যাক্স বা মৌলিক উপাদানগুলো আমরা এখনো জানি না। সেটা বের করতে হবে, তারপর আমরা তাদের বোঝার ক্ষেত্রে আরও অগ্রগতি অর্জন করতে পারব।’ সূত্র: রয়টার্স

জাহ্নবী

আনারসের ভালো ও মন্দ

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪, ০৬:৪৯ পিএম
আপডেট: ১৪ জুন ২০২৪, ০৬:৪৯ পিএম
আনারসের ভালো ও মন্দ

আনারস কম-বেশি সারা বছরই পাওয়া যায়। এই ফল অনেকে খেতে পচ্ছন্দ করলেও, আবার অনেকে এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। এর বেশ কিছু কারণও রয়েছে। আনারস এমন একটি ফল, এটিকে যে খায় এটিও সেই খাদককে খাওয়ার চেষ্টা করে। যে পদার্থটি আনারসকে এই আচরণ করতে সহায়তা করে, তা হলো ব্রোমেলিন । এটি এক ধরনের এনজাইম। এই এনজাইম আনারসের রসে ও কাঁচা আনারসের কাণ্ডে পাওয়া যায়। এনজাইমটি প্রোটিন ভাঙার কাজ করে, এতে মাংস নরম করতে ও হজমে সহায়তা করে।

আনারসের মধ্যে থাকা ব্রোমেলিন খাওয়ার সময় জিব্বা ও ঠোঁটে একটি ঝাঁজালো ও জ্বালা-পোড়ার অনুভূতি তৈরি করতে পারে। কিছু লোকের জন্য যা অস্বস্তিকর হতে পারে, তবে এটি ক্ষতিকর নয়। আনারস খাওয়ার আগে লবণাক্ত পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ব্রোমেলিনের ঝাঁজালো প্রভাব কিছুটা কমে যায়।

ব্রোমেলিনের কিছু উপকারিতা রয়েছে। এটি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পাশাপাশি প্রদাহ কমাতে, এমনকি ক্যানসার প্রতিরোধেও সহায়তা করে। আনারসে ব্রোমেলিন থাকায় এটি দিয়ে ওষুধ বানানো হয়ে থাকে। তা ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিকনভালসেন্ট  ব্যবহারকালীন সময়ে ডাক্তাররা আনারস খেতে নিষেধ করে থাকেন। কারণ এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

আনারস খাওয়ার ফলে অনেকের শরীরে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। অ্যালার্জির উপসর্গ হিসেবে ঠোঁট ফুলে যাওয়া ও গলায় সুড়সুড়ি বোধ হতে পারে। তাই আনারস খাওয়ার আগে কেটে লবণ পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়া উচিত। এতে করে আর কোনো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

আনারসের কারণে নারীদের গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। গর্ভাবস্থায় থাকলে নারীদের এটি খেতে বারণ করা হয়।  গর্ভাবস্থার পরে চাইলে আনারস খেতে পারেন। তবে শরীরের অবস্থা বুঝে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।

আনারস খাওয়ার পর গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল নালির কাছে পৌঁছানোর পর এটি অ্যালকোহলে পরিণত হয়। এ কারণে মানুষের দেহে বাতের ব্যথা শুরু হতে পারে। তাই যাদের দেহে বাতের ব্যথা আছে বা বাত হতে পারে মনে হচ্ছে, তাদের আনারস না খাওয়াই ভালো।

অনেকেই কাঁচা আনারস দিয়ে জুস বানিয়ে থাকে। তবে এটি শরীরে বিরূপ প্রভাব তৈরি করতে পারে। মাঝে মাঝে কাঁচা আনারস খাওয়ার কারণে বমির প্রবণতা দেখা দেয়। কাঁচা আনারসে থাকে অনেক বেশি পরিমাণে অ্যাসিডিটি, যা মুখের ভেতর ও গলায় শ্লেষ্মা তৈরি করে। ফলটি খাওয়ার পর মাঝে মাঝে অনেকের পেটে ব্যথাও হতে পারে।
রক্ত তরল করার জন্য ওষুধ তৈরিতে আনারস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ফল দেহে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াতে বাধা দিয়ে থাকে। আনারস দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। যাদের দাঁতে ক্যাভিটিস ও জিংজাইভেটিভসের সমস্যা আছে, তাদের আনারস না খাওয়াই ভালো।

আনারস খেলে শরীরে নানা  ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও এটি পুষ্টির বেশ বড় একটি উৎস। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এসব উপাদান মানবদেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। শুনতে অবাক লাগলেও, আনারস ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ আনারসে প্রচুর ফাইবার ও অনেক কম ফ্যাট রয়েছে।

আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ। ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ম্যাঙ্গানিজ হাড়কে করে তোলে মজবুত। নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে আনারস খেলে হাড়ের সমস্যাজনিত যে কোনো রোগপ্রতিরোধ করা সম্ভব।

/আবরার জাহিন

বিশ্বের বৃহত্তম ক্যামেরা স্থাপিত হচ্ছে চিলির মরুভূমিতে

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪, ০৬:৪৪ পিএম
আপডেট: ১৪ জুন ২০২৪, ০৬:৪৪ পিএম
বিশ্বের বৃহত্তম ক্যামেরা স্থাপিত হচ্ছে চিলির মরুভূমিতে

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলির উত্তরের খোলা আকাশের নিচে জ্যোতির্বিজ্ঞানের জন্য তৈরি সবচেয়ে বড় ডিজিটাল ক্যামেরা স্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত নির্মিত সবচেয়ে বড় ক্যামেরা, যা এক দশকব্যাপী জ্যোতির্বিজ্ঞানের জন্য অনুসন্ধান পরিচালনা করবে। 

চিলির রাজধানী সান্টিয়াগোর ৫৬৫ কিলোমিটার উত্তরে কোকিম্বো অঞ্চলের আতাকামা মরুভূমির প্রান্তে সেরো পাচোনের (Cerro Pachón) শৃঙ্গে ভেরা সি. রুবিন অবজারভেটরি স্থাপনের কাজ চলছে। এই অবজারভেটরিতে থাকবে একটি গ্রাউন্ডভিত্তিক টেলিস্কোপ এবং এক বিশাল ক্যামেরা। এর অংশগুলো ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি যানবাহনে পৌঁছেছে।

নোয়াল্যাব (NoirLab) সেন্টার পরিচালনা করবে এই অবজারভেটরি। নোয়াল্যাবের উপ-পরিচালক ও অরা সংস্থার চিফ সায়েন্স অফিসার স্টুয়ার্ট কর্ডার বলেন, ‘এই অবজারভেটরি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই পৌঁছে গেছে। আশা করা যাচ্ছে, এই বছরের শেষদিকে এটি স্থাপন করা হবে।’

ভেরা সি. রুবিন অবজারভেটরির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এটি একটি জটিল ও সমন্বিত ব্যবস্থা। এটি একটি আট মিটারের গ্রাউন্ডভিত্তিক টেলিস্কোপ, একটি ক্যামেরা ও একটি সমন্বিত তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা নিয়ে গঠিত। প্রতি দিন প্রায় ২০ টেরাবাইট ডেটা উৎপন্ন করবে এই অবজারভেটরি। দশ বছর ধরে চলা অনুসন্ধানের ফলে ১৫ পেটাবাইটের একটি ক্যাটালগ ডেটাবেস তৈরি হবে। 

এই অনুসন্ধান অভিযানের লক্ষ্য হলো মহাবিশ্বের ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জির প্রকৃতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। বর্তমানে এসব বিষয়ে খুবই কম তথ্য রয়েছে। এ ছাড়া এই অভিযান পৃথিবীর গ্রহাণু, উল্কা, সূর্যের নিকটবর্তী নক্ষত্র বা গ্রহের সঙ্গে সংঘর্ষের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করবে।

কর্ডার বলেন, ‘এটি একটি সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক মুহূর্ত। আমরা বলতে পারি- আমরা শুরু করছি। আমরা এখন সীমানার কাছে দাঁড়িয়ে আছি। এমন একটি অভিযান শুরু করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি, আশা করি যা দশ বছরের মধ্যে মহাবিশ্ব কখন সৃষ্টি ও গতিশীল হয়েছিল... এবং ভবিষ্যতে এটি কীভাবে বিবর্তিত হতে থাকবে সেসব প্রশ্নের উত্তর দেবে।’

অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি ফর রিসার্চ ইন অ্যাস্ট্রোনমি (অরা) যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭টি প্রতিষ্ঠান ও ৩টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত। এটি ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন ও নাসার জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণাগার পরিচালনা করে। অরা পরিচালিত করছে এর মধ্যে অন্যতম হলো নোয়াল্যাব সেন্টার। পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক মরুভূমি আতাকামার পরিষ্কার আকাশের কারণে জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণায় বিশ্বের বেশির ভাগ বিনিয়োগ চিলিতে করা হয়। 

যুক্তরাষ্ট্রের এসএলএসি ন্যাশনাল অ্যাক্সিলারেটর ল্যাবরেটরির গবেষক ও প্রকৌশলীরা এই বৃহত্তম ক্যামেরা নির্মাণ করেছেন। দুই দশকের গবেষণার পর এটি তৈরি করছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটির মাধ্যমে মহাবিশ্বের রহস্য উদ্ঘাটন করা যাবে। মূলত জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের জন্য এ ডিজিটাল ক্যামেরা তৈরি করা হয়েছে।

লিগ্যাসি সার্ভে অব স্পেস অ্যান্ড টাইম (এলএসএসটি) ক্যামেরার রেজ্যুলশন ৩ হাজার ২০০ মেগাপিক্সেল বা ৩ দশমিক ২ গিগাপিক্সেলেরও বেশি। আইফোনের সর্বশেষ মডেলের স্মার্টফোনের রয়েছে মাত্র ৪৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা, যা এলএসএসটি ক্যামেরার তুলনায় মাত্র ০ দশমিক ০১ শতাংশ ডিটেইল ক্যাপচার করতে পারে। 

ক্যামেরাটির ওজন ৩ হাজার কেজি বা ৩ মেট্রিক টন। গড়পড়তা এশিয়ান নারী হাতির ওজনের প্রায় সমান। ক্যামেরাটির লেন্সও বিশাল— ১ দশমিক ৫৭ মিটার বা ৫ দশমিক ১ ফুট। এই ক্যামেরার রেজ্যুলুশন এত উচ্চ যে, এর একটি ছবি পুরোপুরি দেখাতে কয়েক শ হাই-ডেফিনিশন টেলিভিশন প্রয়োজন হবে। এটির ছবি এত বিস্তৃত যে, প্রায় ১৫ মাইল দূর থেকেও একটি গলফ বলের ছবি তোলা যায়। এমনকি এটি দিয়ে চাঁদের চেয়ে ৭ গুণ বড় আকাশের একটি অংশের ছবি তোলা যাবে। এটি ব্যবহার করে আকাশের ৩ দশমিক ৫ ডিগ্রিজুড়ে ছবি তোলা যাবে।

এলএসএসটির মোট চারটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আছে। ডার্ক ম্যাটার সন্ধানের পাশাপাশি এর দ্বিতীয় কাজ মহাবিশ্বের বিভিন্ন বস্তুর আরও পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরিতে সাহায্য করা। এর আরেকটি কাজ, নিয়ত পরিবর্তনশীল আকাশের বিভিন্ন বস্তু আবিষ্কার করা। কী ধরনের পরিবর্তন ঘটছে, সেগুলো খেয়াল রাখা। সেই সঙ্গে সৌরজগতের সবচেয়ে দূরবর্তী অঞ্চল, কুইপার বেল্টের শত-সহস্র নতুন বস্তুকেও এটি চিহ্নিত করতে পারবে বলেই আশা করা হচ্ছে। এটি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের আরও পূর্ণাঙ্গ ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরিতে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করবে। ছোট, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিভিন্ন বস্তুর যে স্পষ্ট ছবি তোলার ক্ষমতা এলএসএসটির আছে, আগের কোনো টেলিস্কোপেরই তা ছিল।

এ ক্যামেরা তৈরিতে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭ হাজার ৪৪২ কোটি ২২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ২০১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন প্রকল্পটির জন্য তহবিলের অনুমোদন দেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জি এ ক্যামেরা নির্মাণে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছে।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তথ্যমতে, এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ রেজ্যুলুশন-সমৃদ্ধ ক্যামেরা। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ২০২৫ সালের প্রথম দিকে এটি ছবি তোলার কাজ শুরু করবে। তবে সাধারণ মানুষের জন্য তা প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের দিকে।  সূত্র: রয়টার্স