![রাজশাহীতে দাবদাহ মৌসুমি রোগে বেড়েছে তিনগুণ রোগী](uploads/2024/04/20/1713583317.RMC-Chilled1111.jpg)
রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি ও তীব্র দাবদাহ। ফলে প্রখর রোদের পাশাপাশি ভ্যাপসা গরমে রাজশাহীতে বেড়েছে ডায়রিয়াসহ মৌসুমি রোগ। এর প্রভাব পড়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডগুলোতে রোগীর চাপ বেশি। প্রচণ্ড গরমের কারণে সর্দি-কাশি-জ্বর, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, ডায়রিয়াসহ মৌসুমি রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের। এ ছাড়া হাসপাতালে বেডের চেয়ে তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় শয্যাসংকটের পাশাপাশি ওয়ার্ডের ভেতরে জায়গা না পেয়ে বহু রোগীকে বারান্দার মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। ভর্তি হওয়া রোগীর অধিকাংশ শিশু ও বৃদ্ধ। একই চিত্র হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডেও। বহির্বিভাগেও শিশু ও মেডিসিন চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে রোগীদের দীর্ঘ সিরিয়াল দেখা গেছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেল ৩টায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে প্রায় ৫০ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। শুধু ডায়রিয়া নয়; জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্টসহ গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে।
রামেক হাসপাতালে সরেজমিনে আরও দেখা যায়, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের আলাদা করে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। ভর্তি হওয়া শিশুদের কেউ কয়েকদিন থেকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। দ্রুত ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে না আসায় বেশ কয়েকদিন ধরেই আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে বাবা-মায়েরা হাসপাতালে বেডে কিংবা মেঝেতে অবস্থান করছেন।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের (শিশু ওয়ার্ড) বারান্দায় ভর্তি করা হয়েছে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ভাল্লুকগাছি ইউনিয়নের বাঁশবাড়ি গ্রামের এক বছর বয়সী শিশু জিসানকে। প্রচণ্ড গরমের কারণেই হঠাৎ শিশুটি বমি ও পাতলা পায়খানা করতে থাকে।
শিশুটির চাচা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমের কারণেই গত পরশু ছোট্ট শিশুটি বমি ও পাতলা পায়খানা করা শুরু করে। উপায় না পেয়ে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি করেছি। ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে শিশুকে বারান্দায় রেখেছি।’
রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ডায়রিয়াসহ গরমজনিত কারণে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তবে এই সংখ্যা এখনো আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যায়নি। তবে রাজশাহীতে আবহাওয়ার যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।’
রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়েও ডায়রিয়া রোগী আসছে। তবে মহামারি আকার ধারণ করেনি। আসলে মানুষ অস্বাস্থ্যকর খাবার বেশি খাচ্ছে। রাস্তার ধারের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রতি মানুষের সচেতনতা না বাড়লে ডায়রিয়া মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে। আমরা চিকিৎসার পাশাপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রমও চালাচ্ছি।’
রামেক হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘তীব্র গরমের কারণে রাজশাহী অঞ্চলে ডায়রিয়াসহ মৌসুমি রোগের প্রকোপ একটু বেড়েছে। ডায়রিয়া রোগী বর্তমানে যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে চিকিৎসাসেবা দিতে খুব বেশি বেগ পোহাতে হচ্ছে না।’