![সভাপতি বজলুর অর্থ লেনদেনের অডিও ফাঁস](uploads/2024/06/26/Dhaka-north-awami-league-1719380650.jpg)
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে পদ দেওয়ার একটি ‘কল রেকর্ড’ ফাঁস হয়েছে। ফোনকলে কথোপকথনে একজন শেখ বজলুর রহমান বলে তিনি নিজেই খবরের কাগজের কাছে স্বীকার করেছেন। সভাপতির এই অডিও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মুঠোফোনে ছড়িয়ে পড়েছে। বজলুর রহমানের এমন কর্মকাণ্ডে মহানগর আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা বিব্রত হয়েছেন। এ বিষয়ে তারা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। ফাঁস হওয়া অডিও তার ‘আত্মসম্মানে আঘাত হেনেছে’ জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা বলেছেন বজলুর রহমান।
কল রেকর্ডটি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর (২৩ জুন) আগের হলেও গত সোমবার রাতে নেতাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এই রেকর্ডের একটি কপি পেয়েছে খবরের কাগজ। ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের রেকর্ডটি যাচাই করে দেখা যায়, ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের শীর্ষ পদ পেতে আকবর আলী নামের এক নেতা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের মোবাইলে ফোন করেন। সেখানে ওয়ার্ডের সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক পদে থাকার জন্য আকবর আলী নগর নেতা বজলুর রহমানকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে শোনা গেছে। তবে এসব বিষয়ে ওই নেতার সঙ্গে ফোনে না বলে সরাসরি এসে কথা বলতে বলেন বজলুর রহমান।
রেকর্ডটিতে শোনা যায়, ‘আকবর আলী বলেন- কেমন আছেন আপনে? বজলুর বলেন- ভালোমন্দ মিলাইয়া আছি। আকবর: আচ্ছা ভাই কমিটি নাকি দিয়া দিতাছেন? বজলুর: কমিটি তো দিতেই হবে, কমিটি কী রাইখা দেওন যাইব? বছর ঘুরাইলে আরও এক বছর ঘুরান যাইব, কমিটি তো দিতে হইব। এমন আছে কালকেই দিয়া দিতে পারি। আকবর: আমারে কোন জায়গায় (পদে) রাখছেন? এখন ভাই আপনি কি আপনার রুমের ভিত্তে (ভেতরে)? নাকি খোলা জায়গায়? বজলুর: না আমি এক্কেরে দুনিয়ার জনসভার মধ্যে আছি। আকবর: আমি তো ভাই ১০ লাখ টাকা দিছি আপনারে। বজলুর: হ হ এটা এহানে (ফোনে) কওয়ার কোনো এ না! সামনে আইসা কথা বলো। আকবর: সামনে আইসা বলমু, ঠিক আছে। আমনেরে (আপনাকে) টাকাটা দিছি এখন আমনে যদি পদ না দেন তা হলে? বজলুর: আপনে যদি টেলিফোনের মধ্যে এসব বলেন হাইলে তো আপনারে আমার না করতে হইব! আকবর: আপনি আবার অন্যভাবে নিয়েন না।’ এর পরে দুই জনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়।
টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমান। তিনি মঙ্গলবার (২৫ জুন) খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাকে ছোট করার জন্য, খাটো করার জন্য একটি গ্রুপ এই কাজটি করেছে। একটি শক্তিশালী গ্রুপ পরিকল্পিতভাবেই এই কাজটি করেছে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য। যেহেতু আমি হেয়প্রতিপন্ন হয়েছি- তাই মামলা করব।’
অডিওর একজন নিজে জানিয়ে তিনি (বজলুর রহমান) আরও বলেন, কয়েক দিন আগে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নিয়ে আমরা একটি মিটিংয়ে ছিলাম। মিটিং রুমে অসংখ্য নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তখন সে (আকবর) আমাকে ফোন করে। সে ইচ্ছা করে টাকার বিষয়টি উঠিয়েছে। তার সামনে (আকবর) অনেকে বসে থেকে রেকর্ডটি করিয়েছে। তারা আমার বিরুদ্ধে কাজ করছে। এই রেকর্ডের কারণে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়েছি। এ জন্য আমি ‘সাইবার ক্রাইম অ্যাক্টে’ মামলা করব।
ফোন কলের বিষয়ে জানতে চাইলে কিছুই মনে করতে পারছেন না বলে জানান আকবর আলী। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার কিছুই মনে নেই। কারা করেছে, কেন করেছে আমি কিছুই জানি না।’
উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমানের এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত ঢাকা মহানগরের অন্য নেতারা। মুখে কিছু না বললেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন তারা। নগর উত্তর আওয়ামী লীগের এক নেতা খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কথাই বলতে চাই না। আপনাদের মাধ্যমে আমরা এই অডিও পেয়ে খুবই বিব্রত হয়েছি। আপনি (প্রতিবেদক) দয়া করে আমার নাম ব্যবহার করবেন না। আমি মন্তব্য করতে চাই না। কারণ, উনি (বজলুর রহমান) আমাদের সভাপতি।’
মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সম্পাদক পদের তিনজন নেতার সঙ্গে এই অডিও এবং অর্থ লেনদেনের বিষয়ে কথা হলে তারা বিব্রত বলে খবরের কাগজকে জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নেতারা বলেন, তারা যে কমিটির (উত্তর আওয়ামী লীগ) সম্পাদক পদে আছেন, সে কমিটির সভাপতির (বজলুর) এমন কর্মকাণ্ড খুবই বিব্রতকর। বিশেষ করে অর্থ লেনদেন কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। বজলু ভাইয়ের মতো নেতার এমন কাণ্ডে আমাদেরও লজ্জায় পড়তে হয়। সবাই ফোন করে আমাদের কাছে এই বিষয়ে জানতে চায়, তাই নেতারা বিব্রত হচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২১ ও ২২ সালে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের থানা-ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলন হয়। সম্মেলন স্থলেই কমিটি ঘোষণা করার নিয়ম রয়েছে। তা সত্ত্বেও দীর্ঘ আড়াই বছর পরেও কমিটি ঘোষণা করতে পারেননি নগর নেতারা। কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপ ও তোপের মুখে পড়ে গত মে ও চলতি মাসে মহানগরের থানা-ওয়ার্ডের খসড়া কমিটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হাতে হস্তান্তর করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত মহানগর নেতারা। এরপর থেকে কমিটি নিয়ে বিতর্কে জড়াচ্ছেন নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।