![খুলনায় গরমে বাড়ছে রোগবালাই, হাসপাতালে ঠাঁই নাই](uploads/2024/04/21/1713670020.KMCH-01-(1).jpg)
খুলনায় গত কয়েক দিনের টানা দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় ভ্যাপসা গরমও বেশি অনুভূত হচ্ছে। এদিকে অতিরিক্ত গরমে জ্বর, সর্দিকাশি, ডায়রিয়া, হিটস্ট্রোকসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া রোগীর চাপ বাড়ছে। একই সঙ্গে হাসপাতালের বহির্বিভাগেও রোগীর দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।
জানা গেছে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যাসংখ্যার প্রায় তিনগুণ রোগী ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালে ৫০০ শয্যার বিপরীতে গতকাল শনিবার সর্বোচ্চ ১৩১১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর আগে শুক্রবার ১২৮৬ জন এবং বৃহস্পতিবার ১৩০৫ জন রোগী ভর্তি ছিল। রোগীর চাপে হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা সংকুলান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায়, সিঁড়ি ঘরের সামনে চলাচলের রাস্তার মেঝেতে থাকছেন।
একইভাবে খুলনা শিশু হাসপাতালে অসুস্থ রোগীদের জায়গা দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের ২৭৪টি শয্যার একটিও খালি নেই। তার ওপর প্রতিদিন ৭০-৮০ জন অসুস্থ শিশুকে ভর্তির জন্য হাসপাতালে আনছেন অভিভাবকরা। জায়গাসংকুলান না হওয়ায় অনেককে ফেরত দিতে হচ্ছে। এর বাইরে বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে আরও ৫০০-৬০০ শিশুরোগী। যাদের অধিকাংশই জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।
আবহাওয়া অফিস জানায়, খুলনা অঞ্চলের ওপর দিয়ে বর্তমানে মাঝারি ধরনের দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। আরও কয়েক দিন এ অবস্থা থাকতে পারে। জানা যায়, গতকাল শনিবার খুলনায় বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শুক্রবার খুলনায় তাপমাত্রা ছিল ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবার খুলনায় বিগত ২৩ বছরের রেকর্ড তাপমাত্রা বেড়ে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
খুলনা শিশু হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘অত্যধিক গরমে বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। গরম যত বাড়ছে, জ্বর ডায়রিয়া শ্বাসতন্ত্রে অসুস্থতার রোগীও তত বাড়ছে।’
জ্বর ও ডায়রিয়া আক্রান্ত অসুস্থ কন্যাসন্তানকে চিকিৎসার জন্য খুলনা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করেছেন নগরীর আড়ংঘাটা এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক মশিউর রহমান। তিনি জানান, চারদিন ধরে তার এক বছরের মেয়ে জ্বর ও ডায়রিয়ায় ভুগছে। হাসপাতালে এসে জানতে পারেন শিশুটির নিউমোনিয়া হয়েছে। একইভাবে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে এসেছেন কামরুন্নাহার শিরিন। তিনদিন ধরে তার দেড় বছর বয়সী ছেলের পাতলা পায়খানা, বমি ও জ্বর। শয্যা না থাকায় হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত জানান, হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ৪৮টি শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ১১৬ জন ভর্তি হচ্ছে। এ ছাড়া ৫০০ শয্যার হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকছে ১৩শ’র মতো। ফলে রোগীদের বাড়তি চাপ সামলাতে হচ্ছে হাসপাতালকে। চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি ও জনবল সংকটও প্রকট। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
এদিকে গরমের এ সময় শারীরিক সুস্থতায় সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া, শিশুদের রোদে যেতে না দেওয়া এবং পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন পানীয় পান করতে হবে। সংক্রমণ এড়াতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থাকতে হবে।