![আশালতার খুনি তারই প্রতিবেশী](uploads/2024/02/14/1707894111.Ashalota-Devi.jpg)
দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন আশালতা দাসের প্রতিবেশ বিশ্বজিৎ বিশ্বাস। তাদের বাপ-দাদারা বংশানুক্রমে ঠাকুরুন বাড়িতে কাজ করতেন। তাদের বাড়িটিও ঠাকুরুন বাড়ির দানের জমিতে। আর এই বাড়ির সন্তানের হাতেই খুন হলেন গৃহকর্ত্রী আশালতা।
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের প্রেমটিয়া গ্রামের আশালতা দাস (৭৫)। স্বামী সন্তোষ দাস মারা গেছেন ১১ বছর আগে। দুই মেয়ে বিয়ে হয়েছে অনেক বছর। বাড়িতে একাই বসবাস করতেন তিনি। মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনিরা তাদের কাছে রাখার জন্য অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বাড়িতে কাজের লোক ছিল। মেয়ে-জামাই বাজার করে দিতেন। কয়েকশ বছরের পুরাতন বাড়িটিতে এভাবেই বাস করতেন আশালতা দাস।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাড়ির দেখভালের দায়িত্বে থাকা সুকুমার মজুমদার গেটে এসে অনেক ডাকাডাকির পরও ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে তার ছেলে সীমানাপ্রাচীর টপকে বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখে আশালতার রক্তাক্ত দেহ ঘরের বারান্দায় পড়ে রয়েছে।
আশালতার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার মানুষ বাড়িতে ভিড় করেন। কারণ আশালতার বাড়ি ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল। তাদের দান করা জমিতে এলাকায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কারও সঙ্গে কোনো শত্রুতা নেই। আশালতার বাড়িটি এলাকায় ঠাকুরুন বাড়ি হিসেবে পরিচিত। এমন মানুষকে কে হত্যা করবে! কেনই-বা হত্যা করবে!
পুলিশ এসে দেখে, আশালতার শরীরে কোনো সোনার গহনা নেই। পরে পুলিশ আশালতার প্রতিবেশী বিশ্বজিৎ বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করে। বিশ্বজিতের ঘর আশালতার ঘর থেকে ১০ ফুট দূরে। তার বাবার নাম সুজিত বিশ্বাস। তিনি পেশায় একজন ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি। স্থানীয় সরিষা বাজারে তার একটা ইলেক্ট্রনিক্সের দোকান রয়েছে। বিশ্বজিতের দেড় বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে।
পরে পুলিশ বিশ্বজিতের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার দোকান থেকে আশালতার গলার স্বর্ণের চেইন, কানের দুল ও হাতের বালা উদ্ধার করে। এ ছাড়া একটি নালা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়িটি উদ্ধার করে পুলিশ।
আশালতার ছোট মেয়ে পলি দাস বলেন, ‘আমার মা সব সময় সোনার গহনা পরতেন। এই গহনার জন্যই আমার মাকে খুন করল। ওরা আমাদের বাড়ির খাবার খেয়েই বড় হয়েছে। আমাদের জমিতে বসবাস করেছে। তারাই এ কাজ করল। আমার মায়ের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা ছিল না।’
আশালতার বড় জামাই রাজবাড়ী আদালতের সিনিয়র আইনজীবী স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘এই বাড়িটি একটি ঐতিহাসিক বাড়ি। বাড়ি ছেড়ে আমার শাশুড়ি আমার বাসায় গিয়েও থাকত না। বাড়িটাকে এত ভালোবাসত। কিন্তু প্রতিবেশী ছেলেটা কী করল! কিছু বলার ভাষা নেই।’
প্রতিবেশী স্কুলশিক্ষক দ্বীপক দাস বলেন, ‘আমরা খুবই মর্মাহত। বলার ভাষা আমাদের নেই। এখনো আমাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। কারণ দুইজনের দুই বাড়ির দূরত্ব কয়েক হাত। বিশ্বজিতের বাবা, তার বাবা সবাই আশালতার বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছে। এখনো এই ঠাকুরুন বাড়ির সাহায্য-সহযোগিতা নিয়েই ওরা বেঁচে আছে। তাদের দ্বারা এই কাণ্ড এটা আসলে ভাবাই যায় না।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জিএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঘটনার পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে আমরা আসামিকে ধরতে পেরেছি। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের রহস্যও উদ্ঘাটন করতে পেরেছে পুলিশ। বিশ্বজিৎ একটি বিদ্যালয়ে দপ্তরি পদে চাকরির জন্য ঘুষ দেয়। কিন্তু চাকরি হয়নি, টাকাও ফেরত পায়নি। এসব মিলিয়ে তার অনেক টাকার দেনা হয়ে যায়। তখন সিদ্ধান্ত নেয় আশালতার গহনা ছিনতাই করবে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী গহনা ছিনতাই করতেই এ হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়ি, গামছা এগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডটি সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে হয়। প্রথমে গামছা দিয়ে আশালতাকে গলায় ফাঁস দেয় বিশ্বজিৎ। পরে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় বাড়ি দেয়।
সুমন বিশ্বাস/জোবাইদা/অমিয়/