![মতিউরের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ](uploads/2024/06/21/nbrr-1718947610.jpg)
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সভাপতি ড. মো. মতিউর রহমানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ, আয় ও ব্যয়ের তথ্য খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। খোদ এনবিআরও তার আয়কর রিটার্নে দেওয়া তথ্য খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা যায়।
মূলত মতিউর রহমান কাস্টমস কমিশনার হিসেবে কর্মরত থাকার সময় থেকেই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। দুদকসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে শাস্তির আওতায় আনতে একাধিক আবেদন জমা পড়ে।
যত অভিযোগ: সাধারণ একজন চাকরিজীবী হয়েও এ পর্যন্ত শতকোটি টাকা সাদা করেছেন। বসুন্ধরায় দুই কোটি টাকার একটি ফ্ল্যাট এবং ধানমন্ডিতে ৫ কাঠায় আলিশান ৭ তলা বাড়ির মালিক। যার মূল্য ৪০ কোটি টাকা। ভালুকার সিডস্টোর এলাকার পাশেই প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর গ্লোবাল জুতার ফ্যাক্টরি। এ ছাড়া রয়েছে ৬০ শতাংশ জমি। জেসিক্স নামে একটি যৌথ ডেভেলপার কোম্পানি রয়েছে। বসুন্ধরার ১৪ তলা বাণিজ্যিক ভবন আছে। গাজীপুর সদরে ৮টি খতিয়ানে ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। তার স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে সাভার থানার বিলামালিয়া মৌজায় ১৪.০৩ শতাংশ, গাজীপুর থানার খিলগাঁও মৌজায় ৬২.১৬ শতাংশ জমি রয়েছে। ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে ১৪.৫০ শতাংশ জমি আছে গাজীপুরে। যার মূল্য প্রায় ৯০ কোটি টাকা। তার নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে আছে একাধিক দামি গাড়ি। তার নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৫০ কোটি টাকার বেশি এফডিআর করা আছে। তিনি একাধিক বিয়ে করেছেন। বিভিন্ন নারীর সঙ্গেও তার অবৈধ সম্পর্ক আছে।
মতিউর রহমানের সঙ্গে কথা বলা জন্য মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। সম্প্রতি সাদিক অ্যাগ্রোর ১৫ লাখ টাকার ছাগলকাণ্ড নিয়ে আলোচনায় আসেন মতিউর রহমান। ১৫ লাখ টাকার ছাগল ১২ লাখে কিনে আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টিকারী ইফাতের পিতৃপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানাজন নানাভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। কেউ কেউ ট্রল করেন। ইফাতের জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবা হিসেবে মতিউর রহমানের নাম পাওয়া যায়।
এ পরিস্থিতিতে ইফাতের বিষয়ে মুখ খোলেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘মুশফিকুর রহমান ইফাত রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানেরই ছেলে। ইফাত আমার মামাতো বোনের সন্তান। মতিউর রহমানই তার বাবা।’
নিজাম উদ্দিন হাজারী আরও বলেন, ইফাত এনবিআর সদস্য মতিউর রহমানের দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে। ধারণা করছি, রাগ করে মতিউর রহমান ইফাতের সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করেছেন। মতিউর রহমান নিয়মিত দ্বিতীয় স্ত্রীর নানা পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
অন্যদিকে ইফাত তাকে বাবা বলে পরিচয় দিলেও তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। মতিউর ইফাতকে ছেলে বলে স্বীকার করেননি এবং এ ঘটনাকে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলেছেন।
এর আগে গণমাধ্যমে মতিউর রহমান বলেন, ছাগলকাণ্ডে ভাইরাল হওয়া ওই ছেলেকে আমি চিনি না। সে আমার সন্তান নয়। আমার নাম জড়ানোয় আমি এবং আমার পরিবার অনেক বিব্রত। ওই ছেলে আমার আত্মীয় বা পরিচিতও নয়। আমার এক ছেলে, নাম তৌফিকুর রহমান। আমি আনুষ্ঠানিকভাবে এসব অপ্রচারের প্রতিবাদ করব।
সূত্র জানায়, ঢাকার আশপাশে এ বছর সাতটি খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন ইফাত। তবে ফেসবুকে বিতর্কের মুখে সাদিক অ্যাগ্রো থেকে কেনা ওই ছাগল তিনি আর বাসায় নেননি। অন্য খামার ও হাট থেকে কেনা পশু তিনি ডেলিভারি নিয়েছেন।
ইফাত দামি গাড়ি আর দামি ঘড়ি কিনতেও পছন্দ করেন। ফেসবুকে লাখ টাকার ঘড়ি আর দামি গাড়ির অসংখ্য ভিডিও আপলোড করেছেন তিনি। ঢাকার রাস্তায় দামি গাড়ির রেসিংয়ের ভিডিও আপলোড করেছেন। চলতি বছরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিলেন ইফাত। তখন সাধারণ মানুষ তাকে পিটুনি দেয়। রাজধানীর ধানমন্ডির ৮ নম্বর রোডের ইমপেরিয়াল সুলতানা ভবনের পঞ্চম তলায় থাকেন ইফাত।
ড. মতিউর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইন্যান্স বিষয়ে সম্মান ডিগ্রি এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রিস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ভ্যাট এবং কাস্টমস বিষয়ে দেশ-বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।