![ব্যবসায়ে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে](uploads/2024/03/07/1709784411.women.jpg)
ব্যবসায়ে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। ছোট-বড়, খুচরা-পাইকারি সব ধরনের ব্যবসায়ে সমানভাবে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। নব্বইর আগে যারা ব্যবসায়ে এসেছেন তাদের বেশির ভাগই উত্তারাধিকার সূত্রে পাওয়া। নিজের ইচ্ছায় ব্যবসায়ে আসা নারীর সংখ্যা কম ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে এ ধারা পাল্টেছে। নারী এখন চ্যালেঞ্জ নিতে পিছপা হন না। সাহস দেখিয়ে অনেক নারী নিজের চেষ্টায় ব্যবসা খুলে তা সফলতার সঙ্গে চালিয়ে নিচ্ছেন। নিজে স্বাবলম্বী হচ্ছেন, অন্যকে আয়ের পথ দেখাচ্ছেন। দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত ‘হোলসেল অ্যান্ড রিটেইল ট্রেড সার্ভে’ শীর্ষক জরিপে বলা হয়েছে, ‘অর্থনীতিকে সচল রাখতে অন্যতম প্রভাবক খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা। এ খাতের বার্ষিক মূল্যসংযোজন ৩ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। দেড় দশক আগেও খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায় পুরুষদেরই একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল।। নারীদের অংশগ্রহণ ছিল দেড় শতাংশেরও নিচে। তবে এ পরিসংখ্যান পাল্টেছে। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায় এখন নারীদের অংশগ্রহণ ৮ শতাংশে পৌঁছেছে। এক দশকের ব্যবধানে নারী উদ্যোক্তা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। তাদের মাধ্যমে অর্থনীতিতে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকার মূল্যসংযোজন হচ্ছে। এর মাধ্যমে নারীদের স্বাবলম্বিতা ও নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে।’
মোট দেশজ উৎপাদনের বা জিডিপির হিসাবের ক্ষেত্রে ২১টি প্রধান খাতকে বিবেচনা করা হয়। এসব খাতের মধ্যে অন্যতম পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা-বাণিজ্য।
২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে নিবন্ধিত খুচরা ও পাইকারি প্রতিষ্ঠান ছিল ২৫ লাখ ৪০ হাজার ৮৯৭টি। এসব প্রতিষ্ঠানে পুরুষ উদ্যোক্তা ছিলেন ১ কোটি ৩৯ লাখ ১ হাজার ৫৬৪ জন। আর নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ২ লাখ ৩ হাজার ১৮৯। তবে পুরুষের তুলনায় এখনো কম হলেও নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা এক দশকে ১২৬ শতাংশ বেড়েছে।
২০০৯-১০ অর্থবছরে নারী উদ্যোক্তা ছিলেন ৮৯ হাজার ৮৪৮ জন। একইভাবে গত ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বেড়েছে। এ সংখ্যা ২০০২-০৩ অর্থবছরে ছিল মাত্র ২১ হাজার ৮৬৭। এভাবে গত দেড় দশকে নারী উদ্যোক্তা বাড়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ব্যবসায়ে নারীর অংশগ্রহণ বা নারী উদ্যোক্তা বেড়েছে ৮২৯ শতাংশ।
জরিপে আরও বলা হয়, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের ব্যবসায়ে নারীদের আগ্রহ বেশি। কৃষি ও মৎস্য খাত, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, পর্যটন, ফ্যাশন ও সৌন্দর্য পণ্য, স্বাস্থ্যবিষয়ক পণ্য এবং অনলাইন ব্যবসায়ে নারী ব্যবসা করছে বেশি। গার্মেন্ট ও অ্যাকসেসরিজ, বিউটি পার্লার, টেইলারিং, রিটেইল শপ, আইটি, ইলেকট্রনিকস, সফটওয়্যার, পাটজাত পণ্য ও হ্যান্ডিক্র্যাফটস খাতে নারী উদ্যোক্তা বাড়ছে।
অন লাইন ব্যবসায়ে নারীর অংশ গ্রহণ বেড়েছে। কভিড-১৯ মহামারির মধ্যে অন লাইন ব্যবসায়ে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে।
সম্পূর্ণ দেশীয় পণ্যকেন্দ্রিক উদ্যোক্তাদের এ প্ল্যাটফর্ম এখন সারা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও বাংলাদেশিদের কাছে জনপ্রিয়।
২০১৭ সাল থেকেই অনলাইনভিত্তিক উদ্যোক্তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের সদস্য সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১২ লাখ।
ই-কমার্সভিত্তিক নারী উদ্যোক্তাদের বর্তমান সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের বিষয়ে জানতে চাইলে উইয়ের সভাপতি নাসিমা আক্তার নিশা খবরের কাগজবে বলেন, ‘গত পাঁচ/সাত বছরে নারীদের ব্যবসায়ে অংশগ্রহণ বেড়েছে। বিশেষভাবে করোনার সময়ে নারীরা ব্যবসায়ে এসেছে বেশি। শিক্ষিত নারীর সংখ্যা বাড়ছে। শিক্ষিত নারী ব্যবসায়ে বেশি আসছে। শিক্ষিত নারীরা অন লাইন ব্যবসায়ে নিজে আগ্রহী হচ্ছে। একজন নারীকে দেখে অন্যরাও আসছে।
ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার খবরের কাগজকে বলেন, ‘অন লাইন ব্যবসায়ে নারীরা ভালো করছে। তবে নারীর পুঁজিসংকট আছে। অনেক নারীর ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকে না। এ জন্য ব্যাংক ঋণ পায় না। অনেকের সব কাগজপত্র থাকার পরও শুধু নারী হওয়ার কারণে ব্যাংক ঋণ দেওয়া হয় না। এর বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। নারীদেরকে সরকারের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ পরিচালিত ‘বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৈরি পোশাকশিল্পে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ার মধ্য দিয়ে অর্থনীতিতে নারীর অবদান দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে।
গত দুই দশকে ব্যবসায়ে নারীর অংশ তার একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ব্যবসায়ে লাভ হওয়ায় পরিবারের অনেক পুরুষ সদস্য তার আগের কাজ ছেড়ে ওই নারীর ব্যবসায়ে যোগ দিয়েছে। এতে নারীর ব্যবসাটি পরিচালনায় সুবিধা হয়েছে।
ব্যবসায়ে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও প্রতিবন্ধকতা দূর হয়নি। ব্যবসায়ে নারী-পুরুষ বৈষম্য ও নারীর প্রতিবন্ধকতাগুলো খুঁজে বের করতে গবেষণা পরিচালনা করেছে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) ও ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) পরিচালিত ‘চ্যালেঞ্জেস অব ট্রেডিং অ্যাক্রস বর্ডারস ফেসিং দ্য উইমেন ট্রেডারস অব বাংলাদেশ: রিসেন্ট ফাইন্ডিংস অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘আমদানি ও রপ্তানি সংক্রান্ত বিশেষ করে ঋণপত্র (এলসি), নগদ সুবিধা ও জিএসপি সনদ পেতে ও নবায়ন করতে পুরুষ উদ্যোক্তাদের তুলনায় নারী উদ্যোক্তাদের বেশি সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হয়।
নারীদের জন্য ট্রেড ও বন্ড লাইসেন্স, এলসি খোলা ও নগদ সুবিধা পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। এ ছাড়া নারীদের সক্ষমতা তৈরি, প্রচ্ছন্ন ব্যয় (হিডেন চার্জ) বন্ধ করা, লিড টাইম কমানো, ব্যাংকিং অর্থায়ন পেতে নারী উদ্যোক্তাদের গ্যারান্টারের সংখ্যা কমানো, নারীদের জন্য সক্রিয় হেল্প ডেস্ক চালু করতে হবে। সনদায়ন ও অর্থায়ন প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সহযোগিতামূলক আচরণ ও এইচএস কোডসংক্রান্ত সমস্যা দূর করতে হবে।’