![ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা](uploads/2024/06/11/Bangladesh_Bank-1718118030.jpg)
ডলার সাশ্রয় করতে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণ আবারও বন্ধ করে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নির্দেশনার আওতায় ব্যাংক কোম্পানির অর্থায়নে কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও স্টাডি ট্যুরে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে।
কেবল ব্যক্তিগত ব্যয়ে জরুরি চিকিৎসা, হজ পালন ও বিশেষ ব্যক্তিগত কাজে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে বিদেশ ভ্রমণ করার সুযোগ পাবেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ পদক্ষেপের পক্ষে দেওয়া যুক্তিতে বলেছে, ডলার বাঁচাতেই এ উদ্যোগ।
মঙ্গলবার (১১ জুন) ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি) থেকে দেওয়া সার্কুলারে বলা হয়, এই মর্মে নির্দেশ প্রদান করা যাচ্ছে যে, ব্যাংক-কোম্পানির অর্থায়নে প্রশিক্ষণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও স্টাডি ট্যুরে অংশগ্রহণের জন্য ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাংলাদেশের বাইরে ভ্রমণ বন্ধ থাকবে।
এর আগে ২০২২ সালের ২২ ও ২৩ মে পরপর ২টি নির্দেশে ব্যাংক-কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাংলাদেশের বাইরে ভ্রমণ সীমিতকরণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
পরবর্তী সময়ে এ নির্দেশ কিছুটা শিথিল করা হলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতা বেড়ে যায়। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করার এ পদক্ষেপ নিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক খবরের কাগজকে বলেন, এ ব্যাপারে আগের একটা নির্দেশ ছিল। তখন বলা হয়েছিল যে, মূলত ডলার সংকট ও রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণ বাতিল করা হয়েছে।
মুখপাত্র জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থায়নেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণের জন্য জারি করা সব আদেশও বাতিল করা হয়েছে।
এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক পরিপত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত, আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিলের অর্থে বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ থাকার কথা বলা হয়।
কারা বিদেশ ভ্রমণে অনুমতি পাবেন?
(ক) নিজস্ব অর্থায়নে বিশেষ প্রয়োজনে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে, পবিত্র হজ পালন ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সুপারিশ থাকা সাপেক্ষে জরুরি চিকিৎসা গ্রহণ। (খ) ব্যাংকে কর্মরত বিদেশি নাগরিকের নিজ দেশে গমন। (গ) বিদেশি ব্যাংকের বাংলাদেশের শাখায় কর্মরত কর্মকর্তাদের প্রধান কার্যালয়ে গমন।
(ঘ) বিদেশে প্রতিসংগী বা অংশীদারি ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসায়িক সভায় অংশগ্রহণসহ দাপ্তরিক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এরূপ সভায় অংশগ্রহণ। এবং (ঙ) বিদেশি আয়োজক সংস্থার সম্পূর্ণ অর্থায়নে পরিচালিত প্রশিক্ষণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, স্টাডি ট্যুরে অংশগ্রহণ।
ব্যাংক কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) উদ্দেশ্যে দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয় যে, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত বিদেশ ভ্রমণসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও স্টাডি ট্যুরে অংশগ্রহণের জন্য বহির্বাংলাদেশ গমন অব্যাহত থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, বর্ণিত প্রেক্ষাপটে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত বহির্বাংলাদেশ ভ্রমণসহ প্রশিক্ষণ, সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও স্টাডি ট্যুরে অংশগ্রহণের জন্য বহির্বাংলাদেশ ভ্রমণ বন্ধ থাকবে।
এদিকে, পরপর রেমিট্যান্স বাড়ায় দেশে ডলারের সরবরাহ পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। একই সঙ্গে আমদানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলার চাহিদা ও যোগানে ভারসাম্য ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণেও চলছে নিষেধাজ্ঞা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্থিতি রয়েছে ২৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ এর বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে এ রিজার্ভের পরিমাণ ১৮ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার।
সম্প্রতি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অফশোর ব্যাংকিংয়ে আমানত সংগ্রহের প্রচার চালানোর পর ব্যাংকগুলোতে ডলারের মজুত কিছুটা বেড়েছে।