![জেগে উঠেছে জয়পুরহাটের কামারপাড়া](uploads/2024/06/12/joypurhat-1718177001.jpg)
কোরবানির ঈদ সামনে রেখে জেগে উঠেছে জয়পুরহাটের কামারপাড়াগুলো। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও এখন ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার কারিগররা। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাতুড়ি পেটার টু-টাং শব্দে মুখরিত কামারপাড়া। তবে কামাররা বলছেন, লোহার তৈজসপত্রের কাঁচামাল, কয়লার দাম বৃদ্ধি ও চীনের আধুনিক প্রযুক্তির তৈজসপত্রের চাহিদায় ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। এ পেশাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা চান এ শিল্পের মানুষরা।
জানা গেছে, গত ৪/৫ বছর আগেও জয়পুরহাট জেলায় প্রায় ২ হাজার মানুষ কামার পেশায় জড়িত ছিলেন। তবে ক্রমাগত লোকসানে পড়ে বর্তমানে এই সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধেকে। তারা অনেকেই কষ্ট করে ধরে রেখেছেন বাপ-দাদার এ পেশা। কামার কারিগরদের অভিযোগ, আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই পুরোনো শিল্প। এ ছাড়া দফায় দফায় কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে তারা। এদিকে কোরবানির ঈদের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকলেও এখনো তেমন বেচাকেনা জমেনি। হয়তো শেষ মুহূর্তে বিক্রি বাড়বে বলে আশা তাদের।
জয়পুরহাটের বিভিন্ন কামারপাড়াতে এবার ছোট ছুরি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, মাঝারি ছুরি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, চাপাতি ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা, দা ৩৫০ থেকে ৮০০ টাকা, জবাই করার ছুরি ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা। ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এবার এগুলোর দাম অনেক বেশি।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার দুর্গাদহ বাজারের কামার দুলাল বলেন, ‘চীনের পণ্য এসে আমাদের পেশা অচল হয়ে গেছে। আমাদের বাপ-দাদার ব্যবসা তাই ছাড়তেও পারি না। সরকার যদি আমাদের একটু সহযোগিতা করত তাহলে ভালো হতো।’
আনন্দ নামে এক কর্মকার বলেন, ‘আমাদের ব্যবসা এখন খুব একটা ভালো নাই। লোহা ও কয়লার দাম গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। এ জন্য সারা বছর লোকসান গুনতে হয়। ঈদ এলেই শুধু একটু বেচাকেনা হয়। ব্যবসা টিকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে গেছে।’
কালাই উপজেলার পুনট বাজারের নির্মল বলেন, ‘গত বছর আমরা এক মাস আগে থেকে ভালো বিক্রি করেছি। কিন্তু এ বছর তেমন বেচাকেনা হচ্ছে না। ঈদের আগ মুহূর্তে হয়তো ক্রেতারা আসবেন।’
দুর্গাদহ বাজারে ছুরি কিনতে এসেছিলেন হরিপুর গ্রামের ফরিদ নামে একজন। তিনি বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার পশু কাটার অস্ত্রের দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। এখন কোরবানির জন্য প্রয়োজন, তাই কিনতেই হবে।’
দোয়ানীঘাট থেকে আসা পলি বেগম নামে এক নারী ক্রেতা বলেন, ‘ঈদের জন্য একটি বঁটি কিনতে এসেছিলাম। ৩১০ টাকা দাম নিয়েছে। দাম বেশি হলেও তো কিনতেই হবে কোরবানির জন্য।’
জয়পুরহাট বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উপ-ব্যবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জয়পুরহাটের কামাররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সহযোগিতা করা হবে।’