![চট্টগ্রামে এখনো জমেনি পশুর হাট](uploads/2024/06/12/Ctg-pic-9--June-(2)-1718177548.jpg)
চট্টগ্রামে গত শনিবার থেকে বসছে কোরবানির পশুর হাট। বিক্রেতারা হাটে পশু নিয়ে আসতে শুরু করেছেন। কিছু হাটে এখনো চলছে ডেকোরেশনের কাজ। সব মিলিয়ে হাট এখনো জমে ওঠেনি। কয়েকদিনের মধ্যেই হাট জমে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নগরে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে ১০টি পশুর হাট বসবে।
নগরের মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন যাওয়ার পথে সুন্নিয়া মাদ্রাসা গেট বরাবর পশ্চিম পাশে বিবিরহাটের অবস্থান। গত রবিবার সরেজমিন বিবিরহাটে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশের খুঁটির সঙ্গে দু-তিনটি সারিতে ছাগল বাঁধা রয়েছে। পশ্চিম দিকে কয়েকটি গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। বাজারটি মাঝ দিয়ে পূর্ব-পশ্চিম সড়কে বিভক্ত। বাঁশের ডেকোরেশনের মাধ্যমে ত্রিপল দিয়ে ছাউনি দেওয়া হচ্ছে বাজারজুড়ে। তবে বাজারের অর্ধেকটা ছাউনি দেওয়া হলেও বাকিটার কাজ এখনো চলমান রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে টুটুল ইসলাম ৪২টি গরু নিয়ে বিবিরহাটে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘গত রবিবার সকালে এখানে এসেছি। গরুগুলো ট্রাক থেকে নামানোর পর খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। আশা করছি ভালো দাম পাব।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা অপর ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান বলেন, ‘২১টি গরু নিয়ে বিবিরহাটে উপস্থিত হয়েছি বিক্রির জন্য। আসার পর থেকে ক্রেতারা গরুগুলো দেখছেন, দরদাম করছেন। মনে হচ্ছে এবারের গরুর ভালো দাম পাব। আমরা কোরবানি পর্যন্ত খাইন (হাটে গরু বাঁধার জায়গা) ভাড়া নিয়েছি। এ গরুগুলো বিক্রির পর আরও নিয়ে আসতে পারব।’
নগরের সাগরিকা বাজারের গরুর বেপারি সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে গরু নিয়ে এসেছি। কিছু কিছু গ্রাহক এখন বাজারে আসছেন। আরও কয়েকদিন যাওয়ার পর মানুষ কোরবানির পশু কিনবেন। কারণ অনেকের পশু রাখার স্থান নেই।’
বিবিরহাট বাজারের ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, ‘আগামী ১৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা। এর আগে ১৬ জুন পর্যন্ত কোরবানি গরু কেনার ধুম চলবে। বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে, তবে সেভাবে নয়।’
তিনি বলেন, ‘বিবিরহাট বাজারের কোনো ইজারাদার না পাওয়ায় সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আদায় হবে কাউন্সিলরের মাধ্যমে। গত রবিবার এ সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি। তাই কাজ শুরু করতে একটু দেরি হচ্ছে। বর্তমানে ডেকোরেশনের কাজ করছে। আশা করছি উত্তরবঙ্গ থেকে বেশ কিছু গরু আমাদের বাজারে আসবে।’
তিনি জানান, বাজার থেকে গরু কিনে হাসিল দিতে হয়। ফলে এ বাজারে অনেকেই আসতে চান না। অনেক স্থানে অবৈধ বাজার বসে। সেখানে হাসিল দিতে হয় না। সেগুলো বন্ধ করা জরুরি।
এদিকে বিবিরহাট, নূর নগর হাউজিং স্টেট বাজারসহ নগরের একাধিক পশুর হাট পরিদর্শন করে দেখা যায়, শেষ মুহূর্তে হাটের নানা অস্থায়ী অবকাঠামো তৈরির কাজ চলছে জোরেশোরে। বাঁশের কাঠামো দিয়ে তৈরি চালে দেওয়া হচ্ছে ত্রিপলের ছাউনি। নিরাপত্তার জন্য বসানো হচ্ছে সিসিটিভি ক্যামেরা। হাটের ভেতর বৃষ্টিতে কাদা এড়াতে চলাচলের পথে দেওয়া হচ্ছে বালু। ইটও বিছানো হচ্ছে কোথাও কোথাও। বেশ কয়েকজন শ্রমিককে পশুর বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন তৈরি করতেও দেখা গেছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের আশপাশের জেলা ও উত্তরবঙ্গ থেকে গরুসহ নানা কোরবানির পশু নিয়ে আসতে শুরু করেছেন বিক্রেতারা। ভিড় জমাতে শুরু করেছেন ক্রেতা ও উৎসুক দর্শনার্থীরা।
নগরীর নূর নগর হাউজিং এস্টেট বাজারে কুষ্টিয়া থেকে আব্দুস সামাদ বলেন, ‘প্রথম দফায় আমি ১৪টি ষাঁড় এনেছি। খামারে আরও বেশ কিছু গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে। দু-তিন দিনের মধ্যে সবগুলো নিয়ে আসা হবে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রামে এবার সব মিলিয়ে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬৫টি কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। তবে কোরবানির ঈদকে ঘিরে প্রস্তুত করা হয়েছে ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫১টি পশু। সে হিসাবে ৩৩ হাজার ৪০৬টি পশুর ঘাটতি রয়েছে এবার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫১ হাজার ৩৬৬টি পশুর ঘাটতি রয়েছে ডবলমুরিং এলাকায়। আর চাহিদার চেয়ে বেশি ১৯ হাজার ১৯১টি পশু উদ্বৃত্ত আছে ফটিকছড়ি উপজেলায়।
সাড়ে ৩৩ হাজার পশুর ঘাটতি থাকলেও বন্দরনগরীর হাটে আশপাশের জেলা ও উত্তরবঙ্গ থেকে খামারিরা পশু বিক্রির জন্য নিয়ে আসায় সেই ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম। এদিকে, নগরে স্থায়ী-অস্থায়ী হাটের বাইরে অবৈধ হাট প্রতিরোধে মাঠে থাকবেন চসিকের তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
এই বিষয়ে চসিকের সহকারী ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বৈধ হাটের বাইরে এবার কোনো অবৈধ হাট নগরে বসতে পারবে না। অবৈধ হাট প্রতিরোধে আমাদের তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। ইজারা দেওয়ার সময় শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য আমাদের কিছু শর্ত ছিল, সবগুলো হাটেই সেসব শর্ত নিশ্চিত করা হয়েছে। সব হাটের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন থেকে পুরোদমে পশু বেচাকেনা চলবে।’ চট্টগ্রাম নগরের বাইরে ১৫টি উপজেলায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে বসবে আরও দুই শতাধিক হাট। তবে উপজেলায় সবকটি হাটের এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন হয়নি।