এবার কোরবানির ঈদে বড় চমক নওগাঁর আত্রাইয়ের রাজা-বাদশা। সম্পর্কে গরু দুটি মামা-ভাগ্নে। রাজার ওজন প্রায় ৩০ মণ। বাদশার ওজন ২৩ মণ। ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় দুটি কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন আত্রাই উপজেলার বেওলা গ্রামের জাহিদুল সরদার। মাত্র আট দিনের ছোট-বড় রাজা-বাদশা।
তাদের বয়স এখন আড়াই বছর। জন্মের পর থেকেই ষাঁড় দুটি গোয়াল ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি। একদিনও ঘরের বাইরে বের করা হয়নি। খাওয়া গোসল সবই হয় গোয়াল ঘরের ভেতর। সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করেন জাহিদুলের স্ত্রী মর্জিনা বেগম। আসন্ন কোরবানির ঈদে গরু দুটি বিক্রি করতে চান তারা। দাম চাচ্ছেন ২০ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে গরুগুলোর যে ওজন ও শারীরিক গঠন হয়েছে তাতে গোয়ালঘরের ছোট দরজা দিয়ে আর বের করা সম্ভব নয়। দেয়াল ভেঙেই বের করতে হবে।
জানা গেছে, শাহী খাবার খায় রাজা ও বাদশা। প্রতিদিন তাদের প্রায় ১৫ কেজি করে খাবার দিতে হয়। খাবার তালিকায় থাকে চার কেজি ফল ও ১০ থেকে ১২ কেজি দানাদার খাবার। নিয়মিত খেতে দিতে হয় কলা, আপেল ও আঙ্গুর। দিনে রাতে চার বার দিতে হয় দানাদার খাবার। ধানের কুঁড়া, ভুট্টা, লবণ, খৈল, ছোলা ভুসির সঙ্গে ভাতের মিশ্রণ, খড় ও ঘাস খেয়ে বড় হয়েছে রাজা বাদশা। এ ছাড়া দিনে অন্তত তিন বার পানি দিয়ে গা ধোয়ায়ে গরুর পরিচর্যা করতে হয়।
জাহিদুলের স্ত্রী মর্জিনা বেগম বলেন, ‘বাড়িতে পালন করা দুটি গাভি থেকে আড়াই বছর আগে এই দুটি ষাঁড় বাছুর পেয়েছিলাম। জন্মের সময় থেকেই বাছুরগুলোর শারীরিক গঠন ভালো। তা ছাড়া মামা-ভাগ্নে গরু বলে আর বিক্রি করিনি। শখের বশে আদর-যত্ন করে লালন-পালন করেছি।’
মামা-ভাগ্নের মধ্যে আছে মধুর সখ্য। মামার চেয়ে ভাগ্নে অর্থাৎ রাজাই বড়। বাদশা আট দিনের ছোট। আড়াই বছর ধরে একই ঘরে বড় হচ্ছে অথচ তাদের মধ্যে একবারও দ্বন্দ্ব মারামারি চোখে পড়েনি বলে জানান মর্জিনা বেগম। ষাঁড়গুলো বড় হওয়ায় একনজর দেখতে প্রতিদিন নানা বয়সের মানুষ তাদের বাড়িতে ভিড় করে।
জাহিদুল সরদার জানান, প্রায় ১০ বছর আগে বাবার দেওয়া একটি গাভি পেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে সেই গাভি থেকে ধীরে ধীরে গরুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। সঙ্গে বাড়ে সংসারের আয়। এখন তার বাড়িতে গরুর সংখ্যা ১০টি। গবাদিপশু পালন করেই তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন।
তিনি আরও জানান, ষাঁড় দুটি প্রস্তুত করতে কোনো রাসায়নিক বা ক্ষতিকর খাবার খাওয়াননি। নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করেছেন। পরিবারের সবার নিবিড় ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে রাজা-বাদশার সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘বেচতে গেলে কষ্ট হবে। কিন্তু উপায় নেই। কারণ দুই গরুতে গোয়ালে এখন আর জায়গা হচ্ছে না। আড়াই বছর আগে গোয়ালঘরের খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়েছে। একবারের জন্যও বাইরে বের করা হয়নি। ইতোমধ্যে গরুগুলোর যে ওজন ও শারীরিক গঠন হয়েছে তাতে গোয়ালঘরের ছোট দরজা দিয়ে আর বের করা সম্ভব নয়। দেয়াল ভেঙে বের করতে হবে।’
এদিকে কোরবানির ঈদ সামনে। তাই কয়দিন ধরেই ব্যাপারীরা আসছেন। ষাঁড়গুলো দেখছেন। দামও করছেন, কিন্তু বনছে না। ন্যায্য দাম পেলে শখের ষাঁড়গুলো তারা তুলে দিবেন ক্রেতার হাতে।
ষাঁড়গুলো লালন-পালনে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন প্রাণিসম্পদ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গরু দুটি পালনে অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। ৩০ মণ ওজনের রাজার দাম চাওয়া হচ্ছে ১২ লাখ টাকা ও ২৩ মণ ওজনের বাদশার দাম চাওয়া হচ্ছে ৮ লাখ টাকা। ক্রেতারা এসে বাড়ি থেকেই গরু দুটি কিনে নিয়ে যাক, এমন প্রত্যাশা করছেন তাদের সবাই।