পবিত্র ঈদুল আজহার বেশ কিছুদিন বাকি থাকলেও সারা দেশের মতো কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানেও বসেছে পশুর হাট। তবে এসব হাটে ক্রেতাদের চাপ তুলনামূলক অনেক কম। হাটের ভিড়, পশু পরিবহনের খরচ আর শহরের বাড়িতে কোরবানির গরু-ছাগল রাখার ঝামেলা এড়াতে বাজারের চেয়ে খামারমুখী বেশি হচ্ছেন ক্রেতারা। জেলার খামারগুলোয় শহুরে মানুষদের পদচারণাই বেশি চোখে পড়েছে। এ ছাড়া যাদের বাড়িতে পশু রাখা নিয়ে অসুবিধা, ঈদের দিন ভোরে খামারের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কোরবানির পশু পাবেন- এমন নিশ্চয়তায় পশু কিনে খামারেই রেখে আসছেন অনেকে। দামে কিছুটা বেশি হলেও পরিবারের সবাই মিলে পছন্দ করে গরু-ছাগল কিনছেন। তবে খামারের পাশাপাশি আগামী শুক্রবার থেকে জেলার বাজারগুলোয় ক্রেতাদের ভিড় বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লায় এবার চাহিদার চেয়েও বেশি কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। তাছাড়া ভারতীয় গরুর প্রবেশ ঠেকাতে জিরো টলারেন্সে রয়েছে প্রশাসন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, ‘এবার কুমিল্লায় কোরবানির পশুর চাহিদা ২ লাখ ৭৯ হাজার। বিক্রি করার মতো পশু আছে ২ লাখ ৮৯ হাজার। বিক্রির মতো উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। ভারত থেকে যেন কুমিল্লার বাজারে গরু না আসে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। আশা করছি কোরবানির পশু কেনাবেচা নিয়ে ক্রেতাদের কোনো সমস্যা হবে না।’
তবে ক্রেতারা কোরবানির পশু ক্রয় ও কিছুদিনের লালন-পালনের ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই কিছুটা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। এরই অংশ হিসেবে তারা খামারে গিয়ে কোরবানির পশু কিনছেন।
গত কয়েকদিনে কুমিল্লা শহরের একাধিক স্থায়ী ও মৌসুমি গরুর খামার ঘুরে দেখা গেছে, সারা দিনই ক্রেতাদের ভিড় থাকে খামারে। শহরের বাড়িতে যারা কোরবানি দেবেন তারাই বেশি খামার থেকে গরু ও ছাগল কিনছেন। অনেকেই মা-ছেলে, স্বামী-স্ত্রী, দাদা-দাদিকেও নিয়ে আসছেন কোরবানির গরু-ছাগল পছন্দ করতে। পছন্দ অনুযায়ী দাম হাঁকছেন। দরদাম করে পছন্দমতো গরু বা ছাগল কেউ হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। যাদের বাড়িতে গরু-ছাগল রাখার জায়গা নেই তারা ঈদের দিন ভোরে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাসে খামারেই রেখে যাচ্ছেন গরু-ছাগল। কোনো কোনো খামারি নিজস্ব পরিবহনে ঈদের দিন গরু পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন ক্রেতাদের।
কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুরি এলাকায় নূর জাহান অ্যাগ্রো ফার্মে গিয়ে কথা হয় ক্রেতা শহিদুল ইসলাম সুমনের সঙ্গে। তিনি ছেলেমেয়ে, স্ত্রী সবাইকে নিয়ে পছন্দ করে গরু কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘হাটের ভিড় আর আনার ঝামেলা এড়াতেই খামার থেকে গরু কিনছি। এ ছাড়া বাসার সবাই পছন্দ করে কেনার মধ্যে একটা আনন্দও আছে।’
একই খামারে কথা হয় ক্রেতা রাজিউল আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাসায় গরু রাখা ঝামেলা, তাই গরু কিনে খামারেই রেখে দিয়েছি। ঈদের দিন ভোরে নিয়ে যাব।’
নূরজাহান অ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি খামারে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ৫৩টি গরু পালন করেছি। সম্রাট, যুবরাজ, সুলতান, পুতুল, বস নামের বিশালাকার গরুগুলো আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। ঈদের আগে ক্রেতারা নিয়ে যাবেন। খামারে ক্রেতারা এসে গরু রোগাক্রান্ত কিংবা আহত কি না, তা ভালোভাবে দেখে নিয়ে যেতে পারেন। আর স্থায়ী খামারে গরু ছোটবেলা থেকেই প্রকাশ্যে বড় করা হয়। তাই পশু নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ থাকে না।’
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার আনোয়ারা ডেইরি ফার্মের তত্ত্বাবধায়ক শাহাদাৎ হোসেন হিরন বলেন, ‘আমাদের খামারে এ বছর বিক্রয়যোগ্য ৭০টি গরু ছিল। ইতোমধ্যে অর্ধেকেরও বেশি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। ছোট ও মাঝারি আকারের গরুগুলো আগে বিক্রি হয়েছে। এখন খামারে যে গরুগুলো রয়েছে সবগুলোই বড় আকারের। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসছেন, পছন্দ করে গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আশা করছি, ঈদের দুই-তিন দিন আগেই বাকি গরু বিক্রি হয়ে যাবে।’
কুমিল্লা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার ১৭টি উপজেলার আওতায় ১৮টি থানা এলাকায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে মোট ৪০৯টি পশুর হাট বসবে। এদিকে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কুমিল্লায় পশু হাটের ইজারাদারদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সভা করেছেন জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান।
সভায় পুলিশ সুপার জানান, কুমিল্লায় পশুর হাট ঘিরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে এবং চাঁদাবাজি-হয়রানি রোধ, জালটাকা শনাক্তে মেশিন স্থাপনসহ সার্বিক বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা নিশ্চিন্তে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন।