![যুক্তরাজ্যে আড়াই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বেকারত্বের হার](uploads/2024/06/12/JOB-People-queue-outside-a--1718178338.jpg)
যুক্তরাজ্যে আবারও বেড়েছে বেকারত্ব। সেখানে বেকারত্বের হার অপ্রত্যাশিতভাবে আড়াই বছরের সর্বোচ্চ স্তরে উঠে এসেছে। দেশটির সরকারি এক পরিসংখ্যানে এমনটা জানানো হয়েছে। খবর বিবিসির।
ব্রিটিশ সম্প্রচার মাধ্যমটির খবরে বলা হয়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে যুক্তরাজ্যের বেকারত্বের হার বেড়ে ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ হয়েছে। এটি আগের মাসে ছিল ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে সর্বোচ্চ বেকারত্বের রেকর্ড।
যুক্তরাজ্যের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস (ওএনএস) বলেছে, কর্মহীনতার হার আরও বেড়েছে। কারণ ২২ দশমিক ৩০ শতাংশ কর্মক্ষম বয়সের লোক, সক্রিয়ভাবে কাজের সন্ধান করছে না।
এদিকে বেকারত্বের হার বাড়লেও এই সময়ের মধ্যে মজুরি বৃদ্ধির হার শক্তিশালী ছিল। নিয়মিত বেতন বার্ষিক ৬ শতাংশ হারে বেড়েছে।
খবরে বলা হয়, যে হারে দাম বাড়ে, সে হারে মুদ্রাস্ফীতির চেয়ে আয় দ্রুত বাড়তে থাকে। মূল্যস্ফীতির প্রভাব বাদ দিলে, নিয়মিত বেতন বৃদ্ধির হার বছরে ২ দশমিক ৯০ শতাংশ ছিল, যা ২০২১ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে সর্বোচ্চ।
ওএনএস বলছে, এই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের শ্রমবাজার কিছুটা সংকুচিত হতে পারে। যদিও উপার্জন বৃদ্ধির হার তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী রয়েছে। তা সত্ত্বেও শূন্যপদের সংখ্যা কমছে এবং বেকারত্ব বাড়ছে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে জাতীয় জীবন মজুরি (ন্যাশনাল লিভিং ওয়েজ) বৃদ্ধির কারণে অর্থনীতিবিদরা বেতন বৃদ্ধির প্রত্যাশা করেছিলেন।
তবে সেই প্রত্যাশাকে সফল করে চলতি বছরে, ২১ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী লোকদের মজুরি গত বছরের থেকেও ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়ে ঘণ্টাপ্রতি ১১ পাউন্ড ৪৪ পেন্সে উন্নীত হয়েছে।
যদিও ওএনএস তাদের কর্মসংস্থানের চিত্র সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ, এর জরিপের নমুনাটি ছোট, তবে এই তথ্যগুলো নিয়োগকর্তাদের বেতন তালিকার আরও সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানের সঙ্গে মেলানো হয়েছে। এ কারণে এই পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে যে, মার্চ ও এপ্রিলের মধ্যে কর্মীর সংখ্যা ৩৬ হাজার কমেছে। মে মাসেও কর্মীর সংখ্যা কমে যাওয়াটা অব্যাহত ছিল।
করোনাভাইরাস মহামারির শুরু থেকে সেই প্রথমবারের মতো সুদহার কমানোর সময় নির্ধারণ করতে সহায়তার অংশ হিসেবে (এই কর্মসংস্থানের) পরিসংখ্যান বিবেচনা করবে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড।
দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার নিয়ে আলোচনা করার জন্য আগামী সপ্তাহে মিলিত হবেন ব্যাংকের শীর্ষ কর্তারা। কিন্তু পরামর্শক সংস্থা কেপিএমজির প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়ায়েল সেলফিন বলেছেন, মিশ্র পরিসংখ্যানের কারণে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের (সুদহার কমানোর) সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার সম্ভাবনা কম। ইয়ায়েল সেলফিন ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন, যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই মাসে তাদের সুদহার অপরিবর্তিত রাখবে।
তিনি আরও বলেন, কর্মক্ষেত্রগুলোতে কর্মীদের দুর্বল চাহিদা, প্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ ভূমিকার অভাব এবং কোম্পানিগুলোর নিয়োগের সিদ্ধান্ত বিলম্ব করার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার অপরিবর্তিত রাখবে।
বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ ও সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি আবার্ডনের ডেপুটি চিফ ইকোনমিস্ট লিউক বার্থোলোমিউ বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্যের মজুরি বৃদ্ধি এখনো খুব শক্তিশালী অবস্থায় রয়ে গেছে। কিন্তু দেশটির শ্রমবাজার আরও সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে-এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই প্রতিবেদনটির ফলে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের চিন্তাভাবনাকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করার সম্ভাবনা কম।
বার্থোলোমিউ আরও বলেন, ‘আমরা আগামী আগস্ট মাসে প্রথম সুদহার কমানোর আশা করছি। তবে এটি আগামী কয়েক মাসে অন্তর্নিহিত মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমিয়ে আনতে আরও অগ্রগতির ওপর নির্ভর করছে।’
প্রসঙ্গত, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সুদহারের ওপর দেশটির কর্মসংস্থানের জটিল ও বহুমুখী প্রভাব রয়েছে। সুদহার কমালে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিনিয়োগ বাড়ানো সহজ হয়। গ্রাহকদের জন্য নতুন বাড়ি কেনা বা গাড়ি কেনার মতো বড় লেনদেন করা সহজ হয়। সুদহার কম হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়তে পারে। তবে যদি সুদের হার বেশি হয়, তাহলে মানুষ কম খরচ করতে পারে এবং এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। স্থিতিশীল মূল্যস্ফীতি বাস্তব মজুরি টিকিয়ে রাখতে এবং কর্মীদের জন্য জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে। এসব কারণে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড, তাদের সুদহার নির্ধারণ করার সময় কর্মসংস্থান ও মূল্যস্ফীতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে।