![রিসাইক্লিং শিল্প: পোশাক খাতে সাশ্রয় হবে ৫০ কোটি ডলার](uploads/2024/06/12/ismail-Circular-Economy-Pic-1718178642.jpg)
দেশের তৈরি পোশাকের ব্যবহৃত সুতার বিকল্প উৎস হয়ে উঠতে পারে রিসাইক্লিং শিল্প। তুলাবর্জ্য রিসাইকেলের মাধ্যমে সুতা আমদানি ১৫ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। এতে ৫০ কোটি ডলার সাশ্রয় হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই শিল্পের মাধ্যমে একদিকে যেমন দেশের সুতা আমদানি কমবে, তেমনি পরিবেশের ক্ষতি রোধ করাও সম্ভব হবে বলে মনে করেন তারা।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে ‘দ্বিতীয় বাংলাদেশ সার্কুলার ইকোনমি সামিট’-এ বক্তারা এসব কথা বলেন। জার্মান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জিআইজেডের সহযোগিতায় এবং বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহায়তায় বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ (বিএই) সম্মেলনটির আয়োজন করে।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে পোশাক খাতের সুতার জন্য ব্যাপকভাবে আমদানির ওপর নির্ভরশীল। ২০১৯ সালে দেশটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার টন সুতা আমদানি করে, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে যদি দেশের সুতাবর্জ্য শতভাগ রিসাইকেল করা সম্ভব হয়, তা হলে সুতা আমদানি প্রায় ১৫ শতাংশ কমে আসবে। এতে করে সুতা আমদানিতে ব্যয় হওয়া ৫০ কোটি (অর্ধ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার বাঁচাতে পারে।
এর আগে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ সার্কুলার ইকোনমি সামিটের উদ্বোধন করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন থিজস ওয়াউডস্ট্রা এবং বাংলাদেশে জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন জ্যান জানোস্কি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাকশিল্প টেকসইতার দিক থেকে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমাদের দেশের উন্নয়ন অনেকটাই পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের ওপর নির্ভর করে। আমাদের এই উন্নয়ন যেন টেকসই হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সার্কুলারিটি এবং উন্নয়নের জন্য সবার সহযোগিতাই মূল চাবিকাঠি।’
দেশের পোশাকশিল্পে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে নানক বলেন, ‘আমাদের পৃথিবী একটাই। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটিকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। এ জন্য আমাদের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সার্কুলার ফ্যাশন প্রসারের জন্য ব্র্যান্ড ও উৎপাদনকারীদের মধ্যে সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আপনাদের অংশীদার। আমি সব ব্র্যান্ডকে অনুরোধ করছি, অনুগ্রহ করে আপনারা দাম একটু বাড়ান। অন্যথায় আমরা টিকে থাকতে পারব না।’
বাংলাদেশ সার্কুলারিটি ও সাসটেইনিবিলিটির ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়েছে উল্লেখ করে পোশাক খাতের এই নেতা বলেন, আমাদের শিল্পের অগ্রযাত্রা মসৃণ ছিল না। আমরা প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করেছি। আমাদের কারখানাগুলো সর্বোচ্চ মান বজায় রাখে। পোশাক উদ্যোক্তারা টেকসই অনুশীলনগুলো গ্রহণ করছে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ২০০টিরও বেশি সনদপ্রাপ্ত সবুজ পোশাক কারখানা রয়েছে এবং আরও ৫০০টি কারখানা সনদ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সার্কুলারিটি সম্পর্কে আরও জ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্য আমাদের উন্নত দেশগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন।’
বাংলাদেশস্থ নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন থিজস ওয়াউডস্ট্রা বলেন, ‘রিসাইকেলের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের সাপ্লাই চেইন জুড়ে স্বচ্ছতা আনয়নের উপায়গুলোকে ব্যাপকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাকশিল্প একটি সম্ভাবনাময় খাত। একসঙ্গে কাজ করে আমরা সার্কুলার ইকোনমির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারি।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন জ্যান জানোস্কি বলেন, ‘বাংলাদেশের আরও উচ্চাভিলাষী সংস্কার নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। অবশ্যই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়ই বিভিন্ন খাতে অগ্রগামী হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘টেকসই উৎপাদনে বিনিয়োগ করা শুধু একটি দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তই নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত, যা টেকসই উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থানকে জার্মানি ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বৈশ্বিক বাজারে আরও শক্তিশালী করতে পারে।’
জ্যান জানোস্কি বলেন, ‘সার্কুলার ইকোনমি বিশ্বে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি মোকাবিলা করতে সহায়তা করে। আর সেটি হলো জলবায়ু পরিবর্তন। বাংলাদেশে সার্কুলারিটির ক্ষেত্রে অনেক চমৎকার এবং ইতিবাচক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পে আরও মনোনিবিশন করতে হবে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আপনারা অনেকেই এ নিয়ে কাজ করছেন। আমি আরও খুশি হয়েছি, কারণ আজকের এই সম্মেলনে সার্কুলারিটির চ্যালেঞ্জগুলোর ওপর দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘২০১৬ সালে আমি প্রথমবারের মতো শিল্পবর্জ্যের শতকরা হারের ওপর একটি গবেষণা করতে চেয়েছিলাম এবং বাংলাদেশে সেটি বের করা অত্যন্ত কঠিন কাজ ছিল। কিন্তু এখন সবাই জানে বাংলাদেশে বর্জ্যের শতকরা হার কত। আর এ বিষয়টি আমাকে অনেক গর্বিত করে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্প এতদূর এগিয়েছে যে, আপনারা এখন দেখতে পাচ্ছেন আমরা দিন দিন আরও উন্নতি করছি।’ মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি আপনাদের সবার সহযোগিতা কামনা করছি। অনুগ্রহ করে এই আন্দোলনে যোগ দিন এবং একদিন আপনি দেখতে পাবেন কীভাবে বাংলাদেশ টেকসই ও সার্কুলারিটিতে শীর্ষস্থান অর্জনকারী হয়ে ওঠে। মোস্তাফিজ উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমাদের সরকার, বেসরকারি খাত, ও সব অংশীদাররা একটি অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে। পরিবর্তনটা শুরু হয় আপনার আর আমার কাছ থেকে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে সেই অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে আমাদের সবার বড় ভূমিকা রয়েছে।’