![নাটোরে আমের ফলন বিপর্যয়, কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ](uploads/2024/06/13/Natore-Himsagar-1718265170.jpg)
চলতি মৌসুমে তীব্র খরা, অনাবৃষ্টি আর দমকা ঝড়ে নাটোরে আমের ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বাগানিরা। এ কারণে অনেকেই কেটে ফেলছেন আমগাছ। মনোযোগী হচ্ছেন অন্য ফসল চাষে। তবে গতবারের তুলনায় এবার আমের দাম ভালো। নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় আম চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৭১৮ হেক্টর জমিতে।
বাগাতিপাড়ার আমচাষি আনোয়ার হোসেন অপু জানান, তিনি তিন বিঘা জমিতে আমের বাগান করেছেন। তবে এবার তার বাগানে কোনো গাছেই আম আসেনি। তার শ্বশুরও ৩০ বিঘা আমের বাগান করেছিলেন রহিমানপুর এলাকায়। বাগানে প্রায় ২ হাজার গাছ থাকলেও কোনো গাছেই আম ধরেনি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উভয়েই। আগামীতে বাগান বাদ দিয়ে অন্য ফসল করার চিন্তা করছেন তারা।
তিনি আরও জানান, জমি লিজ দিলেও বিঘাপ্রতি ২০-২৫ হাজার টাকা পাবেন। আর কলা, আদা, হলুদসহ অন্য ফসল করলেও অনেক লাভবান হবেন। আমবাগান রেখে এমন ক্ষতি আর বাড়াতে চান না তিনি। তার মতো পাশের অন্য বাগানিরাও আমগাছ কেটে অন্য ফসলে মনোযোগী হচ্ছেন।
নাটোরের লালপুর উপজেলার বিলমারিয়া এলাকার বাগানি শরিফুল ইসলাম জানান, তিনি ১১০ বিঘা জমিতে আমের বাগান করেছেন। ফলন হয়েছে ৬০-৭০ ভাগ। অনেক গাছেই এবার কোনো আম আসেনি। চলতি মৌসুমে তীব্র খরা আর অনাবৃষ্টিতে আমের সাইজ ছোট আর ওজন কম হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকবার দমকা বাতাস আর ঝড়ে পড়ে গেছে অনেক আম। সবমিলিয়ে ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন তিনি।
নাটোরের উত্তরা গণভবনের হিসাবরক্ষক নূর মোহাম্মদ জানান, এবার আমগাছগুলোয় আমের পরিমাণ অনেক কম। গত বছরের তুলনায় প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ আম এসেছে। সম্প্রতি সব আমগাছসহ ফলবতী অন্য গাছ মিলিয়ে মাত্র ৭৮ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।
নাটোরের আম ব্যবসায়ী মানিক পাশা জানান, বর্তমানে আমের চাহিদা ও দাম ভালো থাকলেও গাছে আম কম থাকায় লেবার খরচ হচ্ছে বেশি। এতে লাভ কম হচ্ছে।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, এখন গোপালভোগ আমবাগানে শেষ পর্যায়ে। খিরসাপাত পাড়া ও বিক্রি চলছে। দামও ভালো রয়েছে। তীব্র খরা, অনাবৃষ্টি আর ঝড়ের কারণে ফলন কম হয়েছে। আমের সাইজও ছোট হয়েছে, এতে সন্দেহ নেই। তবে অন্যবারের তুলনায় বাজারে আমের দাম এবার প্রায় দ্বিগুণ। সে কারণে কৃষকদের পুষিয়ে যাবে।
গাছ কাটা প্রসঙ্গে তিনি জানান, অনেকে আমগাছ কাটলেও তার প্রভাব বাজারে খুব একটা পড়বে না।
আম বিক্রেতা ও কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, নাটোরে ১৫ মে থেকে আম পাড়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে চলবে আগস্ট পর্যন্ত। এ সময় বাজারে গুটি আম ছাড়াও বিভিন্ন জাতের ১৩টির বেশি জাতের আম পাওয়া যাবে। ফলে আম পাড়া ও বিক্রি নিয়ে এক টানা চার মাসের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে জেলাজুড়ে।
জুলাই মাসে বারি-৪ আম, আশ্বিনা ও গৌড়মতি আম বাজারে পাওয়া যাবে। এই আমগুলোর মধ্যে ৫ জুলাই থেকে বারি-৪ আম ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা এবং ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি জাতের আম পাড়া শুরু হবে। আর সর্বশেষ ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি জাতের আম বাজারে পাওয়া যাবে। এ ছাড়া কাটিমন ও বারিআম-১১ সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে। নাটোরের আম অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় রয়েছে এর সুনাম আর ভালো বাজার। আর এই কারণে চলতি আমের মৌসুমে গাছ থেকে আম পাড়া ও বিক্রিকে ঘিরে জেলাজুড়ে হয়েছে শত শত মানুষের কর্মসংস্থান। যার প্রভাব প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে।
তবে আম বাগানিদের দাবি, তীব্র তাপপ্রবাহ, খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে আমের ফলনে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে তার প্রভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন বাগানিরা। তাছাড়া, সেচ ও সারসহ অন্য খরচও বেড়েছে।
এতে আম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা যার প্রভাব পড়বে নতুন বাগানি আর উদ্যোক্তাদের ওপরও। এমন ক্ষতি কাটাতে বিকল্প পদ্ধতির মাধ্যমে আমের মুকুল আসার আগ থেকে আম পাড়া পর্যন্ত আমগাছে পানির চাহিদা পূরণে তাদের সহযোগিতার দরকার। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আগামীতে পদক্ষেপ নেবেন এমন প্রত্যাশা তাদের।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘নাটোর জেলায় বাণিজ্যিক চাষি বেশি। তারা গুটি আম খুব একটা চাষ করেন না। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকেই গুটি আমের গাছ লাগিয়ে পারিবারিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি উদ্বৃত্ত আম বিক্রি করেন। বাণিজ্যিকভাবে বাগানে যে আমগুলো উৎপাদন হয় তার প্রায় সবই ভালো মানের আম।’