![বিশ্ববাজারে বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম](uploads/2024/06/13/Oil-Field-Safaniya-1718267258.jpg)
বিশ্ববাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা ওপেকের বৈশ্বিক ভালো চাহিদার পূর্বাভাসের মধ্যেই গত বুধবার জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। জ্বালানি শিল্পের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই দাম বেড়েছে, যেখানে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে মার্কিন অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুত যেমনটা থাকার প্রত্যাশা করা হয়েছিল তার চেয়ে বেশি কমে গেছে। খবর রয়টার্সের।
ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থাটির খবরে বলা হয়, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার-আদর্শ ব্রেন্টের ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিমূল্য ৫০ সেন্ট বা দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়েছে। এদিন জ্বালানি পণ্যটির দাম বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৮২ ডলার ৪২ সেন্টে পৌঁছেছে। অন্যদিকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মার্কিন বাজার-আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিমূল্য ৬২ সেন্ট বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭৮ দশমিক ৫২ শতাংশ হয়েছে। সে হিসাবে ডব্লিউটিআইয়ের দাম বেড়েছে দশমিক ৮০ শতাংশ।
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির পূর্বাভাস পরিবর্তন করেছে এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের জন্য বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির পূর্বাভাস আগের দৈনিক ৯ লাখ ব্যারেল (বিপিডি) থেকে বাড়িয়ে ১১ লাখ ব্যারেলে উন্নীত করেছে।
অন্যদিকে পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা ওপেক, ২০২৪ সালের জন্য তাদের পূর্বাভাস আগেরটাই বজায় রেখেছে। বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ভ্রমণ ও পর্যটনের প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করে তারা বিশ্বব্যাপী তেলের চাহিদা তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী বৃদ্ধি পাওয়ার কথা জানিয়েছে।
এর আগে ওপেক ও তার মিত্ররা চলতি বছরের অক্টোবর মাস থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের কথা জানানোর পর গত সপ্তাহে দাম ২ শতাংশের বেশি কমে গিয়েছিল।
অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক বহুজাতিক ব্যাংকিং ও আর্থিক পরিষেবা সংস্থা এএনজেডের বিশ্লেষকরা একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ওপেক চাহিদা বৃদ্ধির পূর্বাভাস বজায় রেখেছে, এ কারণে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। চাহিদা বৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি বা কারণ হিসেবে চীন ও অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর ভূমিকার (শিল্প-কারখানাগুলোতে চাহিদা বাড়বে) কথাও বলেছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষকরা আরও বলেন, যদিও গত সপ্তাহে ঘোষণা করা হয়েছে যে, চলতি বছরের শেষের দিকে ওপেক তাদের স্বেচ্ছামূলক জ্বালানি তেল উত্তোলন কমাতে যাচ্ছে, তা সত্ত্বেও পূর্বাভাস অনুসারে বাজারে তাদের এই ঘোষণা সহজেই লুফে নেবেন ব্যবসায়ীরা।’
এদিকে আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে বাজারের একটি সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ জুন শেষ হওয়া সপ্তাহে মার্কিন অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুত ২৪ লাখ ২৮ হাজার ব্যারেল কমেছে।
মার্কিন মজুত কমে যাওয়াটা রয়টার্স দ্বারা করা জরিপে বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ছিল।
খবরে জানানো হয়, স্থানীয় সময় অনুযায়ী, গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা বা ১৪:৩০ জিএমটিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পরিসংখ্যান বিভাগ ইইএ-এর তথ্য প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) প্রতিবেদনের জন্য উন্মুখ হয়ে ছিলেন, যা গতকাল বাজার খোলার আগে প্রকাশিত হয় এবং একই দিনের পরে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি ঘোষণার দিকেও তাকিয়ে ছিলেন।
বাজার বিশ্লেষক টিনা টেং বলেছেন, আসন্ন বৈঠকে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার শিথিলতার প্রত্যাশা বুধবার জ্বালানি তেলের দামের ঊর্ধ্বমুখী ধারাকে সমর্থন করবে বলা হচ্ছে। কারণ নীতিমালার শিথিলতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উদ্দীপ্ত করবে এবং জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়াতে সহায়ক হবে। টিনা টেং আরও বলেন, ‘তবে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা দীর্ঘমেয়াদে একটি বিয়ারিশ ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে।’ অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা জ্বালানি তেলের দামের জন্য একটি নেতিবাচক প্রভাব হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
খবরে বলা হয়, বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধিত জ্বালানি আমদানিকারক দেশ চীনে মে মাসে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল ছিল। কারণ দেশটিতে উৎপাদক মূল্য হ্রাসের হার কমে এসেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, বেইজিংকে দুর্বল অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং অসম অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে সমর্থন করার জন্য আরও বেশি কিছু করতে হবে।