![নিত্যপণ্যের দাম চড়া, বেচাকেনায় ভাটা](uploads/2024/06/14/Bazar-1718342864.jpg)
অন্য বছরে বসে থাকার সময় ছিল না। কাস্টমার চাপাচাপি করত। অথচ এবার কোরবানি ঈদে ভিন্ন চিত্র। কাস্টমার নেই। বিক্রিও নেই। সব জিনিসের দাম বাড়ার কারণে বিক্রি কমে গেছে। এভাবে কোরবানির ঈদের বেচাকেনার ব্যাপারে হতাশার কথা জানান কারওয়ান বাজারের লক্ষ্মীপুর জেনারেল স্টোরের কামরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ঈদের আগে আদা ও রসুনের দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়ে গেছে। শুধু এই খুচরা বিক্রেতাই নন, বিভিন্ন বাজারের অন্যান্য বিক্রেতাও বলছেন, ঈদের আগে জিরা, এলাচিসহ বিভিন্ন মসলার দাম বেড়ে গেছে। কাস্টমাররা ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন। এ জন্যও বিক্রি কমে গেছে। তবে আগের মতোই পেঁয়াজ ৯০ টাকা, ডিমের ডজন ১৫৫-১৬০ টাকা। চাহিদা কমায় আলু, পেঁপেসহ অন্যান্য সবজির দাম কিছুটা কমেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
বিক্রি কমেছে মসলার
ঈদুল আজহা এলে বেচাকেনার ধুম পড়ে যায়। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ডলারসংকটের কারণে বিভিন্ন মসলার দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। তাই এবার ঈদে বেচা-বিক্রি একেবারে কম বলে বিক্রেতারা জানান।
তারা জানান, জিরা ৮০০ টাকা কেজি, এলাচির কেজি ৩৪০০ থেকে ৪০০০ হাজার টাকা, গোলমরিচ ১১০০, লবঙ্গ ১৬০০ টাকা কেজি, কিশমিশ ৫৪০ টাকা, কাজু বাদাম ১১৫০ টাকা, কাঠবাদাম ১৩৫০ টাকা। বাজারের সব মসলার দামই বেশি। এ জন্য কেউ বেশি করে কেনেন না।
আব্দুস সালাম নামে এক বিক্রেতা বলেন, কাস্টমার আগের মতো আসছেন না। সামনে ঈদ। অনেকেই বাড়ি চলে যাচ্ছেন। কাজেই ঢাকাতে বিক্রিও কমে গেছে।
অন্য খুচরা বিক্রেতারাও বলছেন, গত বছরের চেয়ে দাম বেড়ে গেছে। তাই এবারে ঈদে বিক্রি কম। গত মাসে ডলারের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু মসলার দাম বেড়ে গেছে। আগের মতো বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৭ টাকা ও পাঁচ লিটার ৭৯০-৮১০ টাকা, ২ কেজি আটা ১১০-১৩০ টাকা, বেসন ১২০, খোলা চিনি ১৩০, প্যাকেট চিনি ১৩৫ টাকা, সেমাই প্যাকেট ৪৫-৫০ টাকা।
ঈদের আগে আগে পেঁয়াজের দামও বেড়ে গেছে। গত বছরের এই সময়ে পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকার নিচে থাকলেও এবার ৯০ টাকায় উঠে গেছে। ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেও সেই ঘোষণার কোনো প্রভাব দেখা যায় না বাজারে। দেশে প্রচুর পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও মোকামের ব্যাপারীরা ইচ্ছামতো দাম আদায় করছেন। ৮৫-৯০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। পাইকারিতে ৭৩-৭৭ টাকা বলে বিক্রেতারা জানান।
পেঁয়াজের দামের ব্যাপারে টাউন হল বাজারের শফিকুল খবরের কাগজকে বলেন, মোকামেই বেশি দাম। এ জন্য আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। কয়েক দিন ধরে ৮৫-৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। আদা ৩২০-৩৪০ টাকা। রসুনের দামও চড়া। কারওয়ান বাজারের এরশাদ বলেন, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম ঈদের আগে বেশি। ফরিদপুরের পেঁয়াজের কেজি ৮৫ টাকা, আদা ৩২০ ও রসুন ২২০-২৫০ টাকা কেজি।
সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম কমেছে কেজিতে ৫ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা জানান, ৫৫-৬০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। টাউন হল বাজারের রফিক বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ টাকা কমে বর্তমানে ৫৫ কেজি। গোল লাল আলুর দাম একটু বেশি ৬০ টাকা কেজি।
স্থিতিশীল মাংসের দাম
ঈদ ঘনিয়ে আসায় পোলট্রি মুরগির দাম বাড়েনি। আগের মতোই ১৯০-২০০ কেজি বিক্রি ও সোনালির দাম ৩০০-৩২০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা যায়। দেশি মুরগিও কমে ৬৫০ টাকা কেজিতে নেমেছে। ডিম বিভিন্ন বাজারে ১৫৫-১৬০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতোই গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি বলে বিক্রেতারা জানান।
কমেছে চালের দাম
সারা দেশেই বোরো ধান উঠে গেছে। এর প্রভাবে ঢাকায় চালের দাম কমেছে। আগের সপ্তাহের ৬৮-৭০ টাকার মিনিকেট বর্তমানে ৬৬-৬৭ টাকা, ৫৩-৫৫ টাকার আটাশ চাল ৫২-৫৪ টাকা ও মোটা চাল ৫২ টাকা কেজি।
কারওয়ান বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা হাজি মাঈন উদ্দিনসহ অন্য বিক্রেতারা জানান, ধান উঠায় কমছে চালের দাম। ঈদে পোলাও চালের চাহিদাও বাড়ে। তবে এবার সেভাবে বিক্রি হচ্ছে না বিক্রেতারা জানান। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোলাওয়ের প্যাকেট চাল ১৫০-১৭০ ও বস্তার চাল ১২০-১৪০ টাকা কেজি।
মাছের দামও কমতির দিকে
ঈদে মানুষ ঢাকা ছাড়তে থাকায় চাহিদা কমে গেছে মাছেরও। কেজিতে গড়ে ৩০-৫০ টাকা কমেছে বলে বিক্রেতারা জানান। বর্তমানে রুই ও কাতল ৩২০-৫৫০ টাকা কেজি, চিংড়ি ৫৫০-৮০০ টাকা। তবে নদীর চিংড়ি ১২০০-১৬০০ টাকা। পাবদা ৫০০-৭০০, পাঙাশ ২০০, তেলাপিয়া ২০০-২৫০, শিং ও মাগুর ৪০০-৬০০ টাকা কেজি।
পড়েছে সবজির দাম
গত সপ্তাহে পেঁপে ৪০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গতকাল ৫০ টাকা বিক্রি হতে দেখা যায়। প্রতি কেজিতে ১০-২০ টাকা কমেছে। টমেটোর কেজি ৪০-৫০ টাকা। করলা ৪০-৫০, ঢ্যাঁড়শ ৩০-৪০, মিষ্টিকুমড়া ৩০-৪০, ঝিঙে ও ধুন্দুল ৪০-৫০, শজনে ডাঁটা ৮০-১২০, পটল ৪০-৫০ টাকা, বেগুন ৬০-৮০ টাকা। কাঁচা মরিচ কেজি ২২০-২৩০ টাকা কেজি। তবে শসার কেজি ১০ টাকা বেড়ে ৪০-৬০ টাকা থেকে ৬০-৮০ টাকায় উঠেছে।