![অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর: বাংলা প্রথম পত্র](uploads/2024/01/31/1706682284.b1.jpg)
প্রবন্ধ
আমার পথ
‘আমার পথ’ প্রবন্ধের মূলভাব
মূলভাব: ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম ব্যক্তিত্ববোধে উজ্জীবিত ভারতবাসী চেয়েছেন; যারা স্বনির্ভর, আত্মমর্যাদাবাদী, আত্মনির্ভরশীল এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। এ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক প্রথমত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষের জাগরণ প্রত্যাশা করেছেন। আত্মনির্ভরশীলতায় উজ্জীবিত মানুষ যদি নির্ভীক চিত্তে যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে তবেই ব্যক্তি থেকে সমষ্টিতে সচেতনতার ধারাবাহিক উজ্জীবন ঘটবে। পরাধীন ভারতবর্ষে আত্মবিশ্বাসী হয়ে আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন মানুষের ভীষণ অভাব ছিল। তাই দেখা যায় যখন মহাত্মা গান্ধী ভারতের মানুষকে স্বাধীনতার জন্য সচেতন হতে ডাক দিচ্ছেন তখনো মানুষ গান্ধীর ওপরে তাদের নির্ভরতাকে বজায় রেখে নিজেরা অসচেতন ও অলস হয়ে থাকছেন। একটি দেশের সব মানুষের জাতীয়তাবাদী চেতনা না থাকলে এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মর্যাদা বুঝতে না পারলে, একটি জাতি স্বাধীন হতে পারে না এবং স্বাধীন হলেও মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে না। তার প্রমাণ হলো সে সময়ের ভারতের মানুষ। তখন গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন চলছে, সুভাষ বসু সশস্ত্র বিপ্লবের ডাক দিচ্ছেন এবং বিপ্লবীরা হাতে অস্ত্র তুলে নিতে বলছেন, তবু জাগ্রত চেতনায় ভারতবাসী একতাবদ্ধ হতে পারছে না। কারণ সাম্প্রদায়িক বিষ-বাষ্পে তখনো হিন্দু-মুসলিম বিরোধ চলছে। একতাবদ্ধ জনগোষ্ঠী সৃষ্টিতে এক জাতীয়তাবাদী চেতনায় সবাই উদ্বুদ্ধ হতে পারছে না। এ কারণে এ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক রাষ্ট্রীয় জীবনে গতিশীলতা, সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে আসতে অবশ্যই একতাবদ্ধ অসাম্প্রদায়িক জাতিগত ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রতি জোর দিয়েছেন। যেখানে ভুল হবে সেখান থেকেই নতুন শিক্ষায় জাতিকে এগিয়ে যেতে হবে ভুলকে পেছনে রেখে। মনে রাখতে হবে, জাতীয় জীবনে উন্নতি এবং সমৃদ্ধিতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানবিক চেতনা দ্বারা উদ্বুদ্ধ হতে না পারলে কখনোই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়; এমনকি স্বাধীনতা অর্জন করলেও তার সুফল ভোগ করা যাবে না। এ কারণে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি আজ ও আগামী দিনেও জাতি গঠনে দিকনির্দেশনামূলক ভূমিকা রেখে যাবে।
‘আমার পথ’ প্রবন্ধের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক তার যাত্রা শুরুর আগে কাকে সালাম জানাচ্ছেন?
উত্তর: ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক তার যাত্রা শুরুর আগে সত্যকে সালাম জানাচ্ছেন।
২. কোন ভয় প্রাবন্ধিককে বিপথে নিয়ে যাবে না?
উত্তর: রাজভয়-লোকভয় প্রাবন্ধিককে বিপথে নিয়ে যাবে না।
৩. অন্তরে কোন ভয় না থাকলে বাইরের কোনো ভয়ই কিছু করতে পারে না?
উত্তর: অন্তরে মিথ্যার ভয় না থাকলে বাইরের কোনো ভয়ই কিছু করতে পারে না।
৪. কে বাইরে ভয় পায়?
উত্তর: যার ভেতরে ভয় সে বাইরে ভয় পায়।
৫. কী চিনলে মানুষের মনে আপনা-আপনি একটা জোর আসে?
উত্তর: নিজেকে চিনলে মানুষের মনে আপনা-আপনি একটা জোর আসে।
৬. অনেক সময় কী দেখাতে গিয়ে নিজের সত্যকে অস্বীকার করে ফেলা হয়?
উত্তর: অনেক সময় অতিরিক্ত বিনয় দেখাতে গিয়ে নিজের সত্যকে অস্বীকার করে ফেলা হয়।
৭. অতিরিক্ত বিনয় মানুষকে কী করে?
উত্তর: অতিরিক্ত বিনয় মানুষকে ছোট করে।
৮. গান্ধী দেশবাসীকে কী শেখাচ্ছিলেন?
উত্তর: গান্ধী দেশবাসীকে স্বাবলম্বন শেখাচ্ছিলেন।
৯. অন্তরে কী থাকলে গোলামির ভাব থেকে রেহাই পাওয়া যায় না?
উত্তর: অন্তরে গোলামির ভাব থাকলে বাইরের গোলামির ভাব থেকে রেহাই পাওয়া যায় না।
১০. প্রাবন্ধিকের মতে, কী চিনলে আত্মনির্ভরতা আসে?
উত্তর: আত্মাকে চিনলে আত্মনির্ভরতা আসে।
১১. নিজে কী থেকে অন্য একজন মহাপুরুষকে প্রাণপণে ভক্তি করলেও দেশ উদ্ধার হবে না?
উত্তর: নিজে নিষ্ক্রিয় থেকে অন্য একজন মহাপুরুষকে প্রাণপণে ভক্তি করলেও দেশ উদ্ধার হবে না।
১২. নেতৃত্ব প্রদানের সামর্থ্য আছে এমন ব্যক্তিকে কী বলা হয়?
উত্তর: নেতৃত্ব প্রদানের সামর্থ্য আছে এমন ব্যক্তিকে কর্ণধার বলা হয়।
১৩. ‘কুর্নিশ’ শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর: ‘কুর্নিশ’ শব্দটির অর্থ অভিবাদন বা সম্মান প্রদর্শন।
১৪. ‘মেকি’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: মেকি শব্দের অর্থ মিথ্যা/কপট।
১৫. ‘আগুনের ঝান্ডা’ শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর: ‘আগুনের ঝান্ডা’ শব্দটির অর্থ অগ্নিপতাকা।
১৬. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে?
উত্তর: ‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি ‘রুদ্র-মঙ্গল’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
১৭. কে অন্যের ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না?
উত্তর: যে নিজের ধর্মের সত্যকে চিনেছে।
১৮. কোন ধর্ম সবচেয়ে বড় ধর্ম?
উত্তর: মানুষ-ধর্ম।
১৯. কী চিনলে আত্মনির্ভরতা আসে?
উত্তর: আত্মাকে চিনলে আত্মনির্ভরতা আসে।
২০. ভুলের মধ্য দিয়ে কী পাওয়া যায়?
উত্তর: ভুলের মধ্য দিয়ে সত্যকে পাওয়া যায়।
অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন: ‘আমার পথ দেখাবে আমার সত্য।’ কথাটি বুঝিয়ে লিখ।
উত্তর: ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের এ উক্তিতে প্রাবন্ধিক তার আত্মবিশ্বাসী মানসিকতাই যে তাকে তার কর্ণধার হয়ে পথ দেখাবে, সে প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন।
কর্ণধার বলতে প্রাবন্ধিক মানুষের ভেতরের ঐশ্বরিক শক্তি বা অলৌকিক ক্ষমতাকে বুঝিয়েছেন; যা আত্মবিশ্বাস ও নিজেকে জানার মধ্য দিয়ে আসে। মানুষের মগজ ও মন পরম স্রষ্টার পরম জ্ঞানশক্তি ও প্রেমশক্তিতে ভরপুর। প্রাবন্ধিকের বিশ্বাস সত্য সব অসৎ শক্তিকে পরাজিত করে মানুষকে পূর্ণতার পথে নিয়ে যায়। তাই প্রাবন্ধিকের সত্য বা সৎ শক্তি সব ধরনের আলস্য, কর্ম বিমুখতা, নৈরাজ্য, অবিশ্বাস ও জরাজীর্ণতাকে পেছনে ফেলে তাকে ন্যায় ও সত্যের পথ দেখাবে।
প্রশ্ন: ‘আমার পথ’ প্রবন্ধ অনুযায়ী ভারতের দীর্ঘদিনের পরাধীনতার কারণ কী?
উত্তর: আত্মনির্ভরতা, আত্মমর্যাদার অভাবই কাজী নজরুল ইসলামের মতে দেশের দীর্ঘদিনের পরাধীনতার কারণ।
প্রাবন্ধিক মনে করেন, আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে। তিনি বিশ্বাস করেন, এই আত্মনির্ভরতা যেদিন সত্যি সত্যিই আমাদের আসবে, সেদিনই আমরা স্বাধীন হব। নিজের প্রতি বিশ্বাস না রেখে গান্ধীজির মতো মহাপুরুষের ওপর নির্ভর করায় আমাদের স্বাধীনতা অর্জন বিলম্বিত হয়েছিল। অর্থাৎ স্পষ্টই বোঝা যায়, আত্মনির্ভরতার অভাবই পরাধীনতার কারণ হিসেবে বিবেচ্য। পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিল।
প্রশ্ন: ‘মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম।’ ব্যাখ্যা
করো।
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা তুলে ধরে ‘মানুষ-ধমর্কেই সবচেয়ে বড় ধর্ম’ বলেছে।
ভারতের স্বাধীনতা আর মুক্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল হিন্দু-মুসলিমের বিরোধ। এ সাম্প্রদায়িক বিভেদ না থাকলে আরও আগে দেশ মুক্ত হতো। প্রত্যেকে যার যার ধর্মকে বড় ভেবেছে; কিন্তু অন্যকে সম্মান করতে শেখেনি। ফলে মানবিকচেতনাই যে সবচেয়ে বড় তার কেউ অনুভব করতে পারেনি। মানবিকচেতনাকে মূল্য দিতে পারলেই প্রকৃত ধার্মিক হওয়া যায়। এভাবেই ‘মানুষ-ধমর্কেই সবচেয়ে বড় ধর্ম’ মানতে পারলে জাতিগত ঐক্য-সংহতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
লেখক: প্রভাষক, বাংলা বিভাগ,
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা
জাহ্নবী