টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে পা রাখতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের সামনে। তবে জয়ের পাশাপাশি ছিল সমীকরণের হিসাব-নিকাশ। সে লক্ষ্যে শুরু থেকে দারুণ বোলিং করে বাংলাদেশ। আফগানদের ইনিংস থামে ১১৫ রানে। সেমিফাইনাল খেলতে বাংলাদেশকে এই লক্ষ্য তাড়া করতে হতো ১২.১ ওভারের মধ্যে। তবে নির্ধারিত ওভারের মধ্যে সেই লক্ষ্য তাড়া করতে না পারায় সুপার এইট থেকে নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের বিদায়। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটাও নিজেদের করে নিতে পারেনি নাজমুল হোসেন শান্তর দল। আফগানদের কাছে ম্যাচ হারে ৮ রানের ব্যবধানে। বাংলাদেশকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে টপকে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠল আফগানরা।
আফগানদের ছুড়ে দেওয়া ১১৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে স্কোরবোর্ডে ২৩ রান যোগ করতে তিন উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমের পাশাপাশি প্যাভিলিয়নে ফেরেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান। টুর্নামেন্টজুড়ে টপ অর্ডারের এই ব্যর্থতা সুপার এইটের শেষ ম্যাচে এসেও কাটেনি। এমন ব্যর্থতার মাঝে খানিকটা আশার আলো হয়ে ছিলেন ওপেনার লিটন দাস। পুরো ম্যাচে একপ্রান্ত সামলে রাখেন এই ডানহাতি ব্যাটার। তিনি অপরাজিত ছিলেন ৪৯ বলে ৫৪ রান করে।
২৩ রানে তিন উইকেট হারানো বাংলাদেশকে চতুর্থ উইকেটে পথ দেখানোর চেষ্টা করেন লিটন ও সৌম্য সরকার। দুজন মিলে চতুর্থ উইকেটে যোগ করেন ২২ বলে ২৫ রান। ইনিংসের ৭ম ওভারের তৃতীয় বলে দ্রুতগতির ফ্লাইটেড ডেলিভারি উইকেটে আঘাত করলে আউট হন সৌম্য। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে তার ব্যাটে আসে ১০ বলে ১০ রান।
সৌম্যর বিদায়ের পর তাওহিদ হৃদয় উইকেটে আভাস দেন ঝড় তোলার। তবে ভাগ্য তার পক্ষে ছিল না। ৮ম ওভারের তৃতীয় বলে জীবন পেলেও বড় করতে পারেননি ইনিংস। রশিদ খানের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে তার ব্যাটে আসে ৯ বলে ১৪ রান। পরে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৯ বলে ৬ ও রিশাদ হোসেন আউট হন গোল্ডেন ডাকের শিকার হয়ে। দুজনই ছিলেন রশিদ খানের শিকার। নিজের কোটার পুরোটা বোলিং করে ২৩ রান খরচায় ৪ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটারকে প্যাভিলিয়নে ফেরান এই লেগি।
আফগানদের হয়ে নাভিন উল হক ২৬ রানে নেন ৪ উইকেট। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন ফজল হক ফারুকি ও গুলবাদিন নাঈব।
এর আগে সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নোস ভ্যাল স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশি বোলারদের নিখুঁত লাইন ও লেন্থের বোলিংয়ে শুরু থেকেই রান করতে ভুগতে হচ্ছিল আফগান ব্যাটারদের। বিশেষত বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহীম জাদরান এদিনও ৫৯ রানের জুটি গড়লেও এই রাত করতে তারা খেলেছে ৬৪ বল। ইব্রাহীম লেগস্পিনার রিশাদ হোসেনের বলে ২৯ বলে মাত্র ১৮ রান করে তানজিম হাসান সাকিবকে ক্যাচ দেন তিনি।
অন্য ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজও আউট হন রিশাদের বলে। দলের তৃতীয় উইকেট হিসেবে তিনি আউট হলেও করেন স্বভাব বিরুদ্ধ ব্যাটিংয়ে ৫৫ বলে ৪৩ রান। একই ওভারেই গুলবেদীন নাইবকে ফেরান এই বোলার। তিনি করেন ৪ রান। মাঝখানে মোস্তাফিজের বলে ১২ বলে ১০ রান করে আজমতউল্লাহ ওমরজাই।
ব্যর্থ হয়েছেন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবীও। তাসকিনের আহমেদের বলে ১ রান করে আউট হন তিনি। তার বিদায়ে ১৭.৪ বলে ৯৩ রানে ৫ উইকেটে হারায় আফগানিস্তান। মাঠে নেমে দ্বিতীয় বলেই তাসকিনকে ছয় হাঁকান আফগানদের অধিনায়ক রশিদ খান। কিন্তু পরের ওভারে মোস্তাদিজ দেন মাত্র ১ রান।
শেষ ওভার করতে আসা তানজিমকে দুই ছয় হাঁকিয়ে ১০ বলে ১৯ রান করে দলের বোর্ডে ৫ উইকেট হারিয়ে ১১৫ রান যোগ করে মাঠ ছাড়েন। ততক্ষণে মাঠে বৃষ্টি শুরু হলে আম্পায়ারও মাঠকর্মীদের মাঠ ঢেকে দেওয়ার জন্য ডাক দেন।
লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন ৩টি, তাসকিন ও মোস্তাফিজ নেন ১টি করে উইকেট।