![সাইনোসাইটিস কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা](uploads/2024/06/06/U-1717669031.jpg)
সাইনাস হলো আমাদের করোটির বা মাথার খুলির অন্তরস্থ চার জোড়া ফাঁকা প্রকোষ্ঠ। এই প্রকোষ্ঠগুলির স্থান আমাদের কপাল, চোখ, নাক ও গালের নিচে। এরা নাসারন্ধ্রের সঙ্গে সংযুক্ত এবং সাধারণত বাতাসে পূর্ণ থাকে। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, ভাইরাস সংক্রমণ, ছত্রাক (ফাঙ্গাল) সংক্রমণ এবং অ্যালার্জির কারণে প্রকোষ্ঠগুলোর ভেতরের আস্তরণকারী টিস্যুতে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। একেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় সাইনোসাইটিস বলে। সিকে বিড়লা হাসপাতালের ওয়েবসাইট অবলম্বনে জানাচ্ছেন ফখরুল ইসলাম
সাইনোসাইটিসের কারণে সাইনাসের প্রকোষ্ঠগুলোয় তরল (মিউকাস) পদার্থ জমে এবং প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ফলে মুখে চাপ এবং ব্যথা অনুভূতি হতে পারে। নাক বন্ধ হয়ে যায়। নাক দিয়ে পানি ঝরে। এ ছাড়া অন্যান্য উপসর্গ সৃষ্টি হতে পারে। সাধারণ সর্দি-কাশি থেকেও সাইনাসের প্রদাহ হতে পারে। সাইনোসাইটিসকে অনেক সময় রাইনো সাইনোসাইটিসও বলা হয়।
সাইনোসাইটিসের প্রকারভেদ
কতক্ষণ প্রদাহ স্থায়ী হচ্ছে (তীব্র, সাব-একিউট, দীর্ঘস্থায়ী বা পুনরাবৃত্ত-তীব্র) এবং কীসের কারণে (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাক সংক্রমণ) প্রদাহ সৃষ্টি হয়েছে সেই অনুসারে সাইনোসাইটিসকে বিভিন্ন প্রকারে ভাগ করা হয়। তীব্র সাইনোসাইটিস হলে নাক বন্ধ হওয়া, নাক থেকে পানি ঝরা, মুখের ব্যথা/চাপ এবং গন্ধের অনুভূতি কমে যাওয়া। চার সপ্তাহেরও কম সময় ধরে থাকে। এটি সাধারণত সর্দি-কাশির মতো ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়।
সাব-অ্যাকিউট সাইনোসাইটিসের লক্ষণগুলো ৪ থেকে ১২ সপ্তাহ স্থায়ী হয়। দীর্ঘস্থায়ী সাইনোসাইটিসের লক্ষণগুলো কমপক্ষে ১২ সপ্তাহ স্থায়ী হয়। সাধারণত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে ঘটে। পুনরাবৃত্তি-তীব্র সাইনোসাইটিসের লক্ষণগুলো এক বছরে চার বা তার বেশি বার ফিরে আসে।
সাইনাস সংক্রমণের লক্ষণ
দীর্ঘস্থায়ী সাইনোসাইটিসের সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে নাকের প্রদাহ। এ ছাড়া নাক থেকে ঘন, বিবর্ণ স্রাব (নাক দিয়ে পানি পড়া)। গলায় শ্লেষ্মা জমা হওয়া, কাশি, নাক দিয়ে শ্বাস নিতে অসুবিধা। এ ছাড়া চোখ, গাল, নাক বা কপালের চারপাশে ব্যথা এবং ফোলা ভাব। গন্ধ ও স্বাদের অনুভূতি কমে যাওয়া।
অন্যান্য লক্ষণ এবং উপসর্গের মধ্যে আছে কানে ব্যথা, মাথাব্যথা, উপরের চোয়াল এবং দাঁতে ব্যথা, গলা ব্যথা। এ ছাড়া নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ ও শরীরে ক্লান্তি থাকতে পারে।
সাইনাস সংক্রমণের কারণ
সাইনাসের সংক্রমণের কারণগুলো হলো ভাইরাস সংক্রমণ, ছত্রাক সংক্রমণ, সাইনাস প্রকোষ্ঠে অ্যালার্জি, সাধারণ সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা। এ ছাড়া স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনিয়া ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, মরাক্সেলা ক্যাটারেলিস ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ।
কিছু মানুষের সাইনোসাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তার কারণ হলো এসব রোগীর আগে থেকে থাকা নাকের অ্যালার্জি, হাঁপানি, নাকের পলিপ, নাকের সেপ্টাম টিস্যুতে চ্যুতি থাকে। এ ছাড়া যাদের নিয়মিত ধূমপানের অভ্যাস, দুর্বল ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, এইচআইভি বা ক্যানসারের কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের ব্যবহার করলেও সাইনোসাইটিসের ঝুঁকি থাকে।
কীভাবে সাইনাসের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়?
ডক্টর অথবা স্বাস্থ্যসেবাকর্মী রোগীর বর্তমান এবং অতীত লক্ষণের ওপর ভিত্তি করে সাইনোসাইটিস শনাক্ত করেন। নাকের ভেতরে দেখতে এন্ডোস্কোপ যন্ত্রের ব্যবহার করা হয়।
সাইনোসাইটিস নির্ণয়ের জন্য নির্দিষ্ট পরীক্ষা আছে। যেমন- নাকের এন্ডোসকপি। এ ছাড়া নাসিকা রন্ধ্র থেকে নমুনা (নাসাল সোয়াব) সংগ্রহ এবং জীবাণুর অস্তিত্বের জন্য পরীক্ষা। নাসাল স্ক্যান (কম্পিউটেড টমোগ্রাফি / CT) বা ইমেজিং। অ্যালার্জির পরীক্ষা। বায়োপসি বা নাক থেকে টিস্যুর নমুনা নিয়ে পরীক্ষা।
সাইনোসাইটিসের চিকিৎসা
সাইনোসাইটিসের প্রকারভেদের ওপর নির্ভর করে একাধিক চিকিৎসার বিকল্প রয়েছে। সাধারণ তাৎক্ষণিক চিকিৎসা হিসেবে নাসাল ডিকনজেসটেন্ট (জমে যাওয়া নাক পরিষ্কার)-এর ব্যবহার। এ ছাড়া ওভার দ্য কাউন্টার ঠাণ্ডা এবং অ্যালার্জির ওষুধ। নাসাল স্যালাইন ড্রপ ব্যবহার। এ ছাড়া রোগীকে প্রচুর পানি পান করতে হয়। যদি সাইনোসাইটিসের লক্ষণগুলো ১০ দিন পরও না কমে, তাহলে অতি অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
কলি