![দাঁতের ব্যথা ভালো হয়](uploads/2024/07/04/fa-rt-1720074331.jpg)
সারা বিশ্বে দন্তচিকিৎসার ক্ষেত্রে দাঁতের ব্যথা একটি অতি সাধারণ পরিস্থিতি। দাঁতব্যথা একটি অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা। কোনো একটি উদ্দীপক বস্তুর সংস্পর্শে এসে ব্যথা শুরু হয়। তারপর কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটা বেশি বা কম অস্বস্তিকর, দুর্দশা এবং যন্ত্রণার একটি সংবেদন। মাই উপচার অবলম্বনে লিখেছেন ফখরুল ইসলাম
দাঁতের ব্যথার কারণ হলো দাঁতের রোগ, দাঁতে গর্ত অথবা দাঁতে আঘাত লাগা। দাঁতের চিকিৎসার দুটি পর্যায় আছে- প্রথমটি হলো কারণ নির্ণয় এবং দ্বিতীয়টি হলো এর চিকিৎসা। সঠিকভাবে দাঁতের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করলে এবং চিকিৎসা ও ওষুধ পেলে দাঁতের ব্যথা সাধারণত ২-৩ দিনে সেরে যায়।
দাঁতের ব্যথা হওয়ার কারণ
দাঁতের ব্যথার অনেকগুলো কারণ আছে। যেমন- গর্ত হওয়ার জন্য ব্যথা হতে পারে। আঘাত, দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে গেলে, দাঁতের গ্রাইন্ডিং, দাঁতের এবসেস, দাঁতের সংবেদনশীলতা, দাঁত ফেটে যাওয়া, ফিলিং ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং মাড়ির রোগ থেকেও দাঁতের ব্যথা হতে পারে। তবে নিজে নিজে রোগ নির্ণয় না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দাঁতের ব্যথার আসল কারণ জেনে নিন।
দাঁতের ব্যথার প্রকারভেদ
পুলপাল দাঁতের ব্যথা: পুলপাল টিস্যু যখন লালা বা বাতাসের সংস্পর্শে আসে, তখন এই ব্যথা হয়। এর কারণ হলো গভীর ক্যারিজ, ক্ষয়, ফেটে যাওয়া বা দাঁত ভাগ হয়ে যাওয়া। পুলপাল দাঁতের ব্যথার তীব্রতা অল্প সময়ের জন্য হতে পারে। যেমন- মিষ্টি, গরম বা ঠাণ্ডার প্রতি অতি-সংবেদনশীলতা থাকলে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
পেরিয়োডন্টাল দাঁতের ব্যথা: দাঁতের আশপাশে আঘাত লাগা দাঁতের ব্যথার মূল কারণ। এতে ট্রমা হতে পারে, অক্লুসাল চাপ হতে পারে, পাশের দাঁতের সঙ্গে ঘর্ষণ হতে পারে। অন্যান্য কারণ হলো দাঁতের চিকিৎসা যেমন দাঁত পরিষ্কার করা, দাঁতের ইন্টারফিয়ারেন্স, উঁচু ফিলিং বা গভীর ফিলিং, দাঁতের স্পর্শের এলাকার ভেতরে ফাঁকা ইত্যাদি। দাঁতের আশপাশ এলাকার সংক্রমণ কিংবা পাশের দাঁতের সরাসরি ফুলে যাওয়া, সাইনাসের গর্ত এবং ছড়িয়ে পড়া হাড়ের সংক্রমণ। যখন দেখা যায় যে, পেরিয়োডন্টাল দাঁতের ব্যথায় বেশ কয়েকটি দাঁত প্রভাবিত হয়েছে, তখন ব্রাসিজম বা নাইট বাইটিং বা ক্লেঞ্চিংকে কারণ বলে মনে করা হয়। হাড়ের বিকৃতির জন্য পেছনের দাঁতে অত্যধিক চাপ পড়ে এবং টি-এম-জে’তে ক্ষয়ের কারণে পরিবর্তন আসতে পারে। টি-এম-জে হলো টেম্পোরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্টস, যা নিচের চোয়ালকে মুখের বাকি অংশের সঙ্গে জুড়ে
রাখে। টি-এম-জে’তে আঘাত লাগলেও দাঁতের ব্যথা হতে পারে।
ফাটা দাঁত: ফাটল দাঁতের সব ক’টি স্তর ভেদ করতে পারে। স্তরগুলো হলো এনামেল, ডেন্টিন বা পাল্প। উপসর্গগুলোও সেই অনুসারে ভিন্ন হতে পারে। ডেন্টিনের ভেতরে রয়েছে ডেন্টিনাল ট্যুবুল, আর তার ভেতরে যে তরল পদার্থ আছে, তার চলাচলের ফলে দাঁত ব্যথা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আমরা যখন দাঁত দিয়ে খাবার চিবাই, তখন চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে তরলের চলাচল শুরু হয়।
দাঁতের ব্যথা এর প্রতিরোধ
ডেন্টাল ক্যারিজ, পুলপাল, পেরিয়োডন্টাল রোগ ইত্যাদি হ্রাস করতে পারলে দাঁতের ব্যথা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। নিচের উপদেশগুলো পালন করলে দাঁতের ব্যথা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
দৈনন্দিন খাদ্যে চিনির পরিমাণ সীমাবদ্ধ রাখুন। হাল্কা এবং ভারী ভোজনের মধ্যে সময়সীমা হ্রাস করুন। দিনে দুবার দাঁত ব্রাশ করুন। ক্লোরহেক্সিডিনের মতো ব্যাকটেরিয়া নাশক মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করুন। ফ্লোরাইড-যুক্ত টুথপেস্ট এবং জেল ব্যবহার করুন। খাবার গিলবার আগে ভালো করে চিবিয়ে নিন। চিনিবিহীন চিউইংগাম ব্যবহার করুন। দাঁতের পৃষ্ঠতল মসৃণ করুন। সমস্ত ক্যাভিটি ফিল করুন।
দাঁতের ব্যথার চিকিৎসা
দাঁতের ব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করে সমস্যা নির্ণয়ের ওপরে। দাঁত ব্যথার কারণ জানার পর ডেন্টিস্ট এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করেন-
পুঁজ বের করা: ডেন্টিস্ট পুঁজ এবং রস বের করে দেবেন।
সরাসরি পাল্পের ক্যাপিং: আরাম দেওয়ার জন্য সাধারণত ক্যালসিয়ামের একটি দ্রবণ লাগানো হয়, যাতে পাল্পের পুনরুদ্ধার হয়। সাধারণত আয়োডোফর্ম ক্যালসিয়াম পেস্ট এই কাজের জন্য ব্যবহার করে হয়।
রুট ক্যানাল চিকিৎসা: এটি খুবই সাধারণ এবং পরিচিত একটি পদ্ধতি। রুট ক্যানাল চিকিৎসা অথবা আরসিটি পদ্ধতিতে ক্ষতিগ্রস্ত এবং সংক্রমিত পাল্পকে বের করে নেওয়া হয় এবং গাট্টা-পারচার শঙ্কু পাল্পের গর্তে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। গর্তটি ভর্তি হয়ে গেলে এর ওপরে ক্যাপ লাগিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে এটিই দাঁত বাঁচিয়ে রাখার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি এবং ডেন্টিস্টরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।
দাঁত নিষ্কাশন: দাঁত তুলে ফেলা হলো সবচেয়ে কম পছন্দের চিকিৎসা। ডেন্টিস্টদের মতে, দাঁত বাঁচানোর সব চিকিৎসা বিফল হলে তবেই দাঁত তুলে ফেলার কথা ভাববেন। মানুষের দেহের প্রতিটি অঙ্গেরই নিজস্ব গুরুত্ব আছে। অতএব, মুখের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।
কলি