![হাইপারমোবিলিটি এক ধরনের বাত রোগ](uploads/2024/07/04/fashion-1720074102.jpg)
হাইপারমোবিলিটি একটি স্বল্প পরিচিত শব্দ, যা একটি রিউম্যাটিক উপসর্গ। আমাদের শরীরে অনেক জয়েন্ট বা গিঁট আছে। হাত-পা, মুখমণ্ডল এমনকি মেরুদণ্ড নড়াচড়ার সময় এক ধরনের ব্যথা অনুভূত হয়, এই সমস্যাকেই হাইপারমোবিলিটি বলে। লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউম্যাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মিনহাজ রহিম চৌধুরী
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সর্বশেষ রিউম্যাটোলজি বা বাত রোগের যে শ্রেণিবিন্যাস করেছে, সে অনুযায়ী ৬৯৩ রকম রোগ আছে এই বিভাগের অধীনে। তার মধ্যে একটি অবস্থা হচ্ছে হাইপারমোবিলিটি। সুতরাং এটি এক ধরনের বাত রোগ। প্রায় ১০ থেকে ২০ ভাগ মানুষের মধ্যে হাইপারমোবিলিটি থাকতে পারে। এর কারণে জয়েন্টে ব্যথা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিশু ও কিশোর বয়সে সমস্যা শুরু হয় এবং বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর প্রকোপ কমতে থাকে।
শিশুদের জয়েন্ট ব্যথাকে অনেক অভিভাবক বাত জ্বর বা রিউমেটিক ফিভার হয়েছে ভেবে চিন্তিত হন এবং চিকিৎসকদের কাছে আসেন। হাইপারমোবিলিটি নিয়ে তাই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কারণ সারা বিশ্বে এই রোগ নির্ণয় হতে দেরি হয়।
কেন হয়?
হাইপারমোবিলিটি কেন হয় তার সঠিক কারণ জানা যায়নি। কারও জয়েন্ট বা গিঁটগুলোয় ব্যথা কেন হয়, নড়াচড়া বেশি কেন হয়, লুজ বা ঢিলেঢালা কেন হয়ে যায় তাও সঠিকভাবে জানা যায়নি এখনো। মানবদেহে হাড়, হাড়ের সঙ্গে তরুণাস্থি, লিগামেন্ট, ক্যাপসুল যা গিঁট বা জয়েন্টগুলোকে শক্তিশালী করে। এগুলোর মধ্যে এক ধরনের প্রোটিন থাকে, যাকে কোলাজেন বলে। হাড়ের বড় অংশে কোলাজেন থাকে। ধারণা করা হয়, কোলাজেনের ত্রুটির কারণে হাইপারমোবিলিটি হতে পারে এবং জিনগত ত্রুটি এ জন্য দায়ী বলে সন্দেহ করা হয়। যদিও ঠিক কোন জায়গায় এই ত্রুটি হয় তা এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি।
যত বয়স বাড়তে থাকে হাইপারমোবিলিটি তত কমতে থাকে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। ইউরোপ, আমেরিকার তুলনায় এশিয়ান এবং পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোয় হাইপারমোবিলিটির প্রকোপ বেশি।
লক্ষণ
হাইপারমোবিলিটির অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে জয়েন্টে বা গিঁটে ব্যথা। এর বাইরে আরও কিছু উপসর্গ থাকতে পারে, যেমন- কারও কারও মধ্যে শারীরিক দুর্বলতা, মাথাব্যথা, বুক ধড়ফড়, বুকে ব্যথা, হঠাৎ করে চোখে অন্ধকার দেখা ইত্যাদি হতে পারে।
কারও পেটের সমস্যা যেমন- ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস দেখা দেয়। কারও কারও ত্বক ঢিলে হয়ে যায়। কোনো কোনো রোগীর মলদ্বার নিচের দিকে নেমে যায় এবং নারীদের ক্ষেত্রে মলদ্বারের পাশাপাশি জরায়ু নিচের দিকে নেমে যেতে পারে। তবে এই উপসর্গগুলো অনেক কম দেখা যায়।
রোগটি দ্রুত শনাক্ত করুন
মূলত হাইপারমোবিলিটির জন্য যে ব্যথাগুলো হয় সেগুলো আর্থ্রালজিয়া বা বাত ব্যথা। অনেকেই মনে করেন, বাত ব্যথা বয়সকালের রোগ। এই ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। বেশির ভাগ বাত ব্যথা কম বয়সেই হয়, আর এর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে হাইপারমোবিলিটি।
যখন কোনো রোগীর জয়েন্টে বা গিঁটে অথবা মাংসপেশিতে ব্যথা হবে এবং অল্প সময়ের মধ্যে যদি নিরাময় না হয় তাহলে অবশ্যই একজন রিউম্যাটোলজি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। প্রায়ই দেখা যায়, হাইপারমোবিলিটি শনাক্ত হতে অনেক দেরি হয়। প্রথমেই রোগটি শনাক্ত হলে ভুল চিকিৎসার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।
চিকিৎসা
গিঁটে ব্যথা নিয়ে যখন কোনো রোগী রিউম্যাটোলজি বিশেষজ্ঞের কাছে বা অন্য কোনো চিকিৎসকের কাছে যান, তখন এই ব্যথার অন্য কোনো কারণ আছে কি না সেটি শনাক্ত করা প্রয়োজন। ব্যথার অপরাপর কারণগুলো জানার জন্য চিকিৎসকরা কিছু পরীক্ষা করতে পারেন।
রিউম্যাটোলজিস্টরা হাইপারমোবিলিটি নির্ণয়ের জন্য বেইটন স্কোর নামক একটি মানদণ্ড ব্যবহার করেন। বেইটন স্কোর শূন্য থেকে ৯ পর্যন্ত হয়। হাইপারমোবিলিটির কারণে জয়েন্ট বা গিঁটে মুভমেন্ট বা নড়াচড়া একটু বেশি হয়। পরীক্ষার মাধ্যমে বেইটন স্কোর ৯ পয়েন্টের মধ্যে কেউ যদি ৪ বা তার বেশি পান তাহলে বলা যাবে যে তার হাইপারমোবিলিটি আছে।
প্রথমত এর চিকিৎসা হিসেবে রোগী, রোগীর বাবা-মা, অভিভাবক কিংবা কেয়ার গিভারদের কাউন্সিলিং করতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে, হাইপারমোবিলিটি গুরুতর কোনো রোগ নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জীবনের ওপর কোনো আঘাত আসবে না। তাই ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। খুব বড় ধরনের চিকিৎসারও প্রয়োজন পড়ে না।
অনেক ক্ষেত্রে ফিজিক্যাল থেরাপির প্রয়োজন হয়। যেমন- গিঁটগুলোর নড়াচড়া স্বাভাবিক করার জন্য কিছু ব্যায়াম শেখানোর প্রয়োজন হয়। এর বাইরে উপসর্গভিত্তিক কিছু চিকিৎসা দেওয়া হয়। ওষুধ হিসেবে কিছু ব্যথানাশক দেওয়া যেতে পারে। যেসব রোগীর উদ্বেগ, হতাশা, আইবিএস বা অন্যান্য উপসর্গ আছে, তাদের সেই উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দিতে হবে।
অনুলিখন: হৃদয় জাহান
কলি