![ঘুম ও ক্যানসার](uploads/2024/07/04/fa-shi-1720074824.jpg)
টিউমারের কোষগুলো যখন রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে শরীরের নতুন কোনো জায়গায় বাসা বাঁধতে শুরু করে, তখন ক্যানসারের অবস্থা হয় সবচেয়ে গুরুতর। ক্যানসার ছড়ানোর এই প্রক্রিয়াটি মেটাস্ট্যাসিস নামে পরিচিত। লিখেছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান গলা ও হেড নেক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের দেহে সিটিসি বা সার্কুলেটিং টিউমার সেলস নামের এই খারাপ কোষগুলোর দিনের তুলনায় রাতে রক্তে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। সম্প্রতি ন্যাচার জার্নালে ‘দ্য মেটাস্ট্যাটিক স্প্রেড অব ব্রেস্ট ক্যানসার এক্সিলারেটস ডিউরিং স্লিপ’ শীর্ষক গবেষণায় এসব তথ্য প্রকাশিত হয়।
ক্যানসার আক্রান্ত রোগী ঘুমিয়ে পড়লেই তার টিউমারগুলো জেগে ওঠে- বলেন জুরিখের সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ক্যানসার বায়োলজিস্ট ও গবেষণাপত্রের সহলেখক নিকোলা অ্যাসিটো।
তিনি আরও বলেন, মেটাস্ট্যাটিসকে বোঝার ক্ষেত্রে আমরা আরেকটি ধাপ অতিক্রম করলাম। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে ভুগছেন এমন রোগীদের জন্য এটি একটি সুখবর।
দেহঘড়ির সঙ্গে ক্যানসারের যোগসূত্র
২০০৭ সালে সারকাডিয়ান রিদম ব্যাহত হওয়াকে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার ক্যানসারের অন্যতম প্রভাবক হিসেবে উল্লেখ করে। গবেষণাটিতে আরও বলা হয়, যারা রাত জেগে বা অসময়ে কাজ করে যেমন ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্টস, রাতে কাজ করা নার্স ইত্যাদি পেশার মানুষদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তবে কেন এমন ঘটে সেই প্রশ্ন এতদিন জানা যায়নি।
মানুষের সারকাডিয়ান ঘড়ি সাধারণত তাদের জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যা ২৪ ঘণ্টার সময়সূচিতে ঘুম ও পরিপাকব্যবস্থার মতো শরীরের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে। অধিকাংশ গবেষকই আগে ভাবতেন, ক্যানসার কোষগুলো এতটাই অবাধ্য যে তারা দেহঘড়ির মতো সময়সূচির কোনো তোয়াক্কাই করে, বলেন অ্যাসিটো।
যেসব ইঁদুরের টিউমার আছে, তাদের সিটিসির মাত্রা দিনের কোন সময় রক্ত নেওয়া হয় তার ওপর নির্ভর করে। সেখান থেকেই অ্যাসিটো দিনের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে রক্ত পরীক্ষার পরিকল্পনা করেন। স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৩০ জন নারীর রক্ত সংগ্রহ করা হয়। ভোর ৪টা এবং রাত ১০টা- এই দুটি ভিন্ন সময়ে তিনি রক্ত সংগ্রহ করেন।
গবেষকরা দেখেন, ভোর ৪টায় সংগৃহীত নমুনায় শনাক্তকৃত সিটিসির হার প্রায় ৮০ শতাংশ। সে সময় রোগীরা বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।গবেষকরা দ্বিতীয় যে কাজটি করেছেন তা হলো, এই গুটিকয়েক আক্রান্তদের বাইরে অন্যদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে কি-না তা খুঁজে বের করা। এর জন্য গবেষকরা স্তন ক্যানসারের টিউমার ইঁদুরে প্রতিস্থাপিত করে সারাদিন তাদের সিটিসির মাত্রা পর্যবেক্ষণ করেন।
মানুষের তুলনায় ইঁদুরের সারকাডিয়ান রিদম সম্পূর্ণ ভিন্ন, অর্থাৎ তারা রাতে বেশি সক্রিয় থাকে এবং দিনের বেলায় বিশ্রাম নেয়। গবেষক দল দেখেন, ইঁদুরগুলোর সিটিসি স্তর দিনের বেলায় সর্বোচ্চ ছিল। এ সময় তাদের সিটিসির হার স্বাভাবিকের তুলনায় ৮৮ গুণ পর্যন্ত বেশি দেখা যায়।
ঘুম আসল শত্রু নয়
গবেষক দলটি দেখেন, টেস্টোস্টেরন বা ইনসুলিনের মতো হরমোনের ব্যবহার ইঁদুরের সিটিসি স্তরের ওপর প্রভাব ফেলে। কখন কোনো সময় হরমোনগুলো বাড়ানো বা কমানো হয়েছিল, তারও প্রভাব পড়েছিল সিটিসি স্তরে।
তবে এর মধ্যে কেউ যেন ঘুমকেই স্তন ক্যানসার রোগীদের শত্রু ভেবে না বসেন, সেই বিষয়েও তিনি সতর্ক করেন। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যানসার রোগীরা দিনে সাত ঘণ্টার কম ঘুমালে তাদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে। অন্যদিকে ইঁদুরের ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, সারকাডিয়ান রিদম ব্যাহত হলে ক্যানসার দ্রুত ছড়াচ্ছে।
অনুলিখন: নিশু ইসলাম
কলি