ঢাকা গেট, মোগল আমলে এই ফটক পেরিয়েই প্রবেশ করতে হতো ঢাকা শহরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দোয়েল চত্বরসংলগ্ন ঢাকা গেট বহু বছর ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে ছিল। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসাবশেষে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে ছিল প্রাচীন ঐতিহ্যের এই স্থাপনাটি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪০০ বছর পুরনো এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে সংরক্ষণের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়।
ইন্টারনেট থেকে ঢাকা গেটের যে ছবি পাওয়া যায়, সেখানে দেখা যায় গেটের সামনে কয়েকটি হাতি দাঁড়িয়ে আছে; কিন্তু এখন সেই দৃশ্য অতীত। কয়েকদিন আগেও প্রায় ভগ্নদশা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ঢাকা গেট। তবে এখন সেটি ফিরছে নতুন রূপে। বলা যায় নতুন মোড়কে পুরোনোকে আবাহন।
আগের ডিজাইনের সঙ্গে আধুনিকতার মিশেলে তৈরি হচ্ছে ঢাকা গেট। দেশের প্রখ্যাত স্থপতি ও স্থাপত্য সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক আবু সাঈদ এম আহমেদ এই প্রকল্পের প্রধান পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরের অনেক স্থাপনাই হুমকির মুখে। যেহেতু এই গেটটিই ঢাকা শহরের প্রবেশদ্বার ছিল, তাই ঢাকা গেট দিয়েই শুরু হলো সংস্কার কাজ। এখানে ব্যবহার করা হয়েছে ইটের গুঁড়ো, চুন। আমরা চেষ্টা করেছি আগের রং যাতে ঠিক থাকে। প্লাজা লাইট সিচুয়েশন ব্যবহার করে গেটের ডিজাইন ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। এটি খুব ছোট একটি উদ্যোগ। কিন্তু শুরু হলো- এটাই বড় কথা।’
মীর জুমলার শাসনামলে এই স্থানটি থেকেই ঢাকা একটি নগরী হিসেবে গড়ে উঠতে থাকে এবং বুড়িগঙ্গা নদীর তীর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের অধীনে মীর জুমলা ছিলেন বাংলার সুবেদার। মীর জুমলার স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে স্থান পেয়েছে তার ব্যবহৃত কামান। মূলত ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে গেটটি পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “এই গেটকে অনেকে ‘মীর জুমলা গেট’ বলে চেনেন; কিন্তু এটির নাম ছিল ‘ঢাকা গেট’। তবে মীর জুমলাই এটি তৈরি করেছিলেন। তার ব্যবহৃত কামান বিভিন্ন জায়গা ঘুরে অবশেষে এখানে স্থায়ী হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের জন্য এই উদ্যোগ স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’’
মূলত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতেই স্থাপনাটিকে নতুন রূপ দেওয়া হচ্ছে। তবে শুধু ঢাকা গেটই নয়, যেসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংসের মুখে সেগুলোকেও সংস্কার করার কথা জানান দক্ষিণ সিটির মেয়র ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, ‘গণপূর্ত বিভাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নিয়েই আমরা এটির সংস্কার কাজ হাতে নিয়েছিলেম। এর কাজ শেষের দিকে। শুধু ঢাকা গেটই নয়, লাল কুঠি, নর্থব্রুক হল, বড় কাটরাসহ আরও কিছু স্থাপনার কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আমরা ঢাকা গেট দিয়ে শুরু করলাম। আমরা ঢাকার স্থাপনাগুলো সুন্দর করে পুনরায় সংস্কার করতে চাই। যাতে বাইরের দেশের কেউ বলতে না পারে, ঢাকা একটি ঠুনকো শহর।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন চলতি মাসেই গেটটি উদ্বোধন করবে। সাধারণ মানুষ এখানে অবসর সময় কাটাতে আসতে পারবেন। সেক্ষেত্রে গেটের এক পাশে বানানো হবে মিউজিয়াম, যেখানে থাকবে মোগল আমলে গেটটি কেমন ছিল তার স্থিরচিত্রসহ আরও কিছু ডকুমেন্ট। এতে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে ঢাকা গেটের আদ্যপান্ত।