যশোরে আলোচিত ৭২ কেজি সোনা চোরাচালানের মামলায় তিনজনের ফাঁসিসহ ৯ জনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। অন্যদের মধ্যে দুই ভারতীয় নাগরিকের যাবজ্জীবন ও ২০ বছর করে চারজনকে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের (৩য়) বিচারক তাজুল ইসলাম এ রায় দেন। সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) আসাদুজ্জামান আসাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- যশোরের শার্শার শিকারপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার তোফাজ্জেল হোসেন তরফদারের ছেলে মহিউদ্দিন তরফদার, জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে জাহিদুল ইসলাম ও নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে মুজিবুর রহমান।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গোকর্ণ গ্রামের মাঝের পাড়ার আলী হোসেন সরদারের ছেলে মাসুদ রানা ও চব্বিশ পরগনা জেলার বাগদা থানার গাংগুলিয়া গ্রামের নুর জালাল মণ্ডল।
এ ছাড়া ২০ বছরের সাজাপ্রাপ্তরা হলেন শার্শার আব্দুল মোমিনের ছেলে ইমরান হোসেন, আব্দুল কাদেরের ছেলে রুবেল হোসেন, রামচন্দ্রপুর গ্রামের নওশাদ আলীর ছেলে কবির হোসেন ওরফে মেছের আলী এবং যশোরের শার্শার কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল মণ্ডল ওরফে মোল্যা ওরফে লিদু।
মামলার বরাত দিয়ে এপিপি আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট রাতে শার্শার শিকারপুর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্য হাবিলদার মুকুল হোসেন নিয়মিত টহলের সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন- একদল চোরাকারবারি ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে সোনা নিয়ে যাবে। এরপর তারা নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের সীমান্ত পিলারের পাশে অবস্থান নেন। রাত ১০টার দিকে কয়েকজন লোক নারিকেলবাড়িয়া মাঠের মধ্য দিয়ে ভারতের দিকে যাওয়ার সময় তাদের চ্যালেঞ্জ করে বিজিবি। এ সময় মহিউদ্দিনকে একটি ব্যাগসহ আটক ও দুজন দুটি ব্যাগ ফেলে পালিয়ে যায়। পরে এসব ব্যাগ থেকে ৬২৪ পিস সোনার বার উদ্ধার করা হয়। যার ওজন ৭২ কেজি ৪৫০ গ্রাম।
এ ঘটনায় পরদিন শিকারপুর বিওপির বিজিবির হাবিলদার মুকুল হোসেন তিনজনের নাম উল্লেখসহ অপরিচিত ব্যক্তিদের আসামি করে চোরাচালান দমন আইনে শার্শা থানায় মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ পরে সিআইডি পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পায়। এ মামলার তদন্তকালে আটক আসামিদের দেওয়া তথ্য ও সাক্ষীদের বক্তব্যে সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকায় দণ্ডপ্রাপ্ত ওই ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়।
দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে এ মামলায় মহিউদ্দিন তরফদার শান্তি, জাহিদুল ইসলাম ও মুজিবুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, ভারতীয় নাগরিক মাসুদ রানা ও শফিকুল মণ্ডলকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং সাফি, ইমরান হোসেন, কবির হোসেন ও রুবেল হোসেনকে ২০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
এপিপি আসাদুজ্জামান আরও বলেন, যশোর অঞ্চলের এই যাবৎ সবচেয়ে বড় সোনা চালানের মামলায় দৃষ্টান্তমূলক রায় হয়েছে। এই রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট।
এদিকে রায়ের খবরে সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ স্বজনদের আদালত চত্বরে আহাজারি করতে দেখা গেছে।
তুহিন/সালমান/