নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে হওয়া ধর্ষণ মামলায় ১৩তম সাক্ষ্য গ্রহণ মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ দিন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ও নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালের সাবেক আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সাক্ষ্য দেন।
দুপুরে নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে তারা সাক্ষ্য দেন।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত আগামী ১৯ মার্চ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন। এখন পর্যন্ত এই মামলায় ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
এ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রকিব উদ্দিন আহমেদ জানান, মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মামলার বাদীকে ধর্ষণ করেছেন তিনি। ডিএনএ পরীক্ষা করা চিকিৎসকও জানিয়েছেন ওই নারীর কাছ থেকে আলামত পাওয়া গেছে।
তবে রাজনৈতিক কারণে মামুনুর হককে ফাঁসানো চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ কে এম ওমর ফারুক নয়ন। তিনি বলেন, আল্লামা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মঙ্গলবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ও চিকিৎসককে আংশিক জেরা করা হয়। কিন্তু তারা কোনো প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি।
আইনজীবী নয়ন বলেন, রাজনৈতিক কারণে এই মামলা দিয়ে মামুনুল হককে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ তদন্ত ও সাক্ষ্যের মধ্যে বহু গরমিল রয়েছে। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কঠোর নিরাপত্তায় মামুনুল হককে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জের আদালতে আনা হয়। শুনানি শেষে তাকে আবার কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।
২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে একটি রুমে কথিত স্ত্রীসহ হেফাজতে ইসলামের সে সময়ের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় হেফাজতকর্মীরা ও মাদ্রাসার ছাত্ররা রিসোর্টে হামলা চালিয়ে মামুনুল এবং তার কথিত স্ত্রীকে ছিনিয়ে নেন। ঘটনার ১৫ দিন পর ওই বছরের ১৮ এপ্রিল মামুনুল হককে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে ঢাকা মহানগর তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ গ্রেপ্তার করে। রয়েল রিসোর্ট-কাণ্ডের ঘটনার ২৭ দিন পর ২০২১ বছরের ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় হাজির হয়ে ওই নারী মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এই অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে অভিযোগ গঠন করা হয়।