শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের সাজা স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল যে আদেশ দিয়েছিলেন, তা বাতিল করেছেন হাইকোর্ট।
মামলার বাদী কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের আবেদন নিষ্পত্তি করে দেওয়া রায়ে এই নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (৩ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের বেঞ্চের পূর্ণাঙ্গ রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
এ রায়ের ফলে ড. ইউনূসসহ সংশ্লিষ্টদের সাজা বহাল রয়েছে। তবে তারা জামিনে থাকায় সাজা ভোগ করতে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে তিনি এই রায় হাতে পাননি।
তিনি বলেন, ‘১৮ মার্চ রায় ঘোষণার দিন রায়ের কপি চেয়ে আবেদন করা হলেও আজ বুধবার পর্যন্ত কপি পাওয়া যায়নি। হাইকোর্টে সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করা হলে তারা আবেদনটি পাননি বলে জানিয়েছেন।’ মামলার বাদীপক্ষ কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে এ মামলার শুনানি নির্ধারিত আছে। আমরা আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত। সবকিছু প্রকাশ্য দিবালোকেই হচ্ছে। যেখানেই ইউনূস, সেখানেই কলকারখানা প্রতিষ্ঠান। আইনি লড়াইয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
বুধবার প্রকাশিত ৫০ পৃষ্ঠার রায়ে পাঁচ দফা পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এতে ড. ইউনূসসহ সংশ্লিষ্ট চারজনের সাজা স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের আদেশ বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে আপিলটি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সাজা স্থগিত করার কোনো বিধান নেই। জামিন দেওয়া হলে সাজা স্থগিতের আলাদা আদেশের প্রয়োজন নেই। আপিলের নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত জরিমানা আদায় স্থগিত থাকবে। এই রায়ের নির্দেশনাসহ প্রয়োজনীয় সব আদেশ-নির্দেশ শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের আদেশ বইতে লিপিবদ্ধ রাখতে হবে।
গত ১ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। রায়ের পরই আরেক আদেশে আপিল করার শর্তে ইউনূসসহ আসামিদের এক মাসের জামিন দেওয়া হয়। রায়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ২৮ জানুয়ারি ড. ইউনূসসহ চারজন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন। শুনানি নিয়ে নতুন করে জামিন দিয়ে শ্রম আদালতের দেওয়া সাজা স্থগিত করেন ট্রাইব্যুনাল।
সাজা স্থগিতের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করে কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর। ৫ ফেব্রুয়ারি আবেদনের শুনানি নিয়ে ড. ইউনূসের সাজা স্থগিতের আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি সাজা স্থগিতের আদেশ কেন বাতিল হবে না মর্মে রুল জারি করেন। পরে রুলের শুনানি শেষে গত ১৮ মার্চ ড. ইউনূসের ছয় মাসের সাজা ও দণ্ড শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে স্থগিতের আদেশ বাতিল করেন হাইকোর্ট। ফলে ড. ইউনূসের ছয় মাসের সাজা চলমান থাকবে বলে রায়ে বলা হয়।
ট্রাইব্যুনালে আজ হাজিরা: শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে ড. ইউনূসসহ চারজনের করা আপিলের শুনানি নির্ধারিত আছে আজ বৃহস্পতিবার। ট্রাইব্যুনালের দেওয়া জামিনের মেয়াদও শেষ হচ্ছে আজ। ফলে তিনি বৃহস্পতিবার হাজির হয়ে জামিন চাইবেন বলে তার আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন।