![স্ত্রী-সন্তানসহ মতিউরের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ](uploads/2024/07/05/Motiur-1720161085.jpg)
ছাগলকাণ্ডে দেশজুড়ে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ও তার দুই স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ের নামে ঢাকায় দুটি বহুতল বাড়ি, দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদীর রায়পুরা ও বরিশালের মুলাদীতে ১০ একর ৩৬ শতাংশ (১০৩৬ শতাংশ বা ৬২৮ কাঠা বা ৩১ বিঘা) জমি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ ক্রোকের নির্দেশ দেন।
ক্রোকের আদেশ দেওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে, মতিউর রহমানের নামে বরিশালের মুলাদীতে কমিশনারের চর মৌজায় ১১৪ শতাংশ বা ৬৯ কাঠা জমি। প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকের ৭/এ রোডে ২ হাজার ৫৪০ স্কয়ার ফুটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও নরসিংদীর রায়পুরায় ৫২২ শতাংশ বা ৩১৭ কাঠা জমি।
প্রথম স্ত্রীর ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে নরসিংদীর রায়পুরায় ২৭৫ শতাংশ বা ১৬৭ কাঠা জমি, মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতার নামে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকের ১ নম্বর রোডে ৫ কাঠা জমিতে বহুতল ভবন ও নরসিংসীর রায়পুরায় ১০৬ শতাংশ বা ৬৫ কাঠা জমি এবং দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারের নামে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এন ব্লকে ৫ কাঠা জমিতে একটি বাড়ি ও ধানমন্ডির জিগাতলায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে।
দুদকের প্যানেল আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন। আবেদনে বলা হয়েছে, মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তারা এসব সম্পদ বিক্রি বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এটা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ প্রক্রিয়া গ্রহণের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। তাই সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে স্থাবর সব সম্পদ ক্রোক করা একান্ত প্রয়োজন।’
এদিকে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে মতিউর ও তার দুই স্ত্রী- লায়লা কানিজ ও শাম্মী আখতার, প্রথম পক্ষের বড় ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতার সম্পদের হিসাব চেয়ে গত ২ জুলাই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
নোটিশে সম্পদবিবরণী দাখিলের জন্য তাদের ২১ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এতে তাদের নিজ নিজ ও তাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে থাকা যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী কমিশনে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
মতিউর রহমানের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গত ৪ জুন সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরে ২৩ জুন দুদকের উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্ব তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু হলে তাদের নামে থাকা অর্থ-সম্পদের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ, বিএসইসি, দেশের সব সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও ভূমি অফিসে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
দুদকের চিঠি পেয়ে বিএফআইইউ ও বিএসইসি স্বউদ্যোগে মতিউর ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বিও অ্যাকাউন্টের লেনদেন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি অন্তত ২০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ১৬টি বিও অ্যাকাউন্টের তথ্য দুদকে পাঠিয়েছে। এদিকে ঢাকার তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স, নরসিংদীর রায়পুরা, বরিশালের মুলাদীসহ বিভিন্ন সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে অন্তত ৪৫টি দলিলের তথ্য-উপাত্ত দুদকে আসে।
মতিউর রহমানের ছেলে ইফাত মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল এবং ঢাকার বিভিন্ন খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। এরপর থেকে মতিউর রহমানের ছেলের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন, মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলোবাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে অঢেল সম্পত্তির তথ্য বেরিয়ে এলে বিষয়টি দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়।
ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ গরু আমদানি ও বিক্রির বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগে সাভারে গো-প্রজজনকেন্দ্র এবং সাদিক অ্যাগ্রোতে অভিযান চালিয়েছে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম। অভিযান শেষে কোটি টাকা মূল্যের অন্তত ৬টি গরু জব্দ করা হয়েছে।