ঢাকা ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪

এনামুলের ৯ তলা বাড়িসহ শতকোটি টাকার সম্পদ ক্রোক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:২৭ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:২৭ পিএম
এনামুলের ৯ তলা বাড়িসহ শতকোটি টাকার সম্পদ ক্রোক
মোহাম্মদ এনামুল হক

সিলেটের কাস্টমস কমিশনার হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ এনামুল হকের ঢাকার বসুন্ধরায় দুটি প্লটের ওপর নির্মিত একটি ৯ তলা বাড়ি, রাজধানীর কাকরাইল ও মোহাম্মদপুরে সাতটি বাণিজ্যিক ফ্লোর, কাকরাইল ও বনানীতে চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, ১০টি কার পার্কিং, খিলক্ষেতে এক বিঘার (৩৩ শতাংশ) একটি প্লট, ঢাকার বাড্ডা ও গাজীপুর সদরে পাঁচ কাঠা করে আরও দুটি প্লট ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

একটি মামলার ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগরের বিশেষ জজ মোহাম্মদ আস্সামছ জগলুল হোসেন এ নির্দেশ দেন। দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 

দলিলে এসব সম্পদের মূল্য ৯ কোটি ৯৫ লাখ ৪৪ হাজার ৫০০ টাকা দেখানো হলেও বাস্তবে এ সম্পদের মূল্য শতকোটি টাকার কম নয়। কারণ দলিলে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তিন কাঠার দুটি প্লট অর্থাৎ ছয় কাঠার মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৬১ হাজার টাকা। দুদক কর্মকর্তাদের তদন্তকালে এসব সম্পদের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করা হবে। সে ক্ষেত্রে এসব সম্পদের মূল্য শতকোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানান দুদক কর্মকর্তারা। 

গতকাল এনামুলের ক্রোক করা সম্পদের মধ্যে রয়েছে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি-ব্লকের ১৩ নম্বর রোডের ৯৫৪ ও ৯৫৫ নম্বর প্লটের ওপর নির্মিত ৯ তলা ভবন, কাকরাইল মোড়সংলগ্ন আইরিশ নূরজাহান ভবনে ১ হাজার ১৭০ বর্গফুটের বাণিজ্যক ফ্লোর, একটি কার পার্কিংসহ ১ হাজার ৮৩৫ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, এর পাশেই বহুতল ভবন ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে কার পার্কিংসহ ১ হাজার ৯০০ ও ৩ হাজার ৮০০ বর্গফুটের দুটি ফ্ল্যাট, বনানীতে কার পার্কিংসহ ২ হাজার ৪২৮ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট। 

এ ছাড়া মোহাম্মদপুরে সাড়া সন্ধানী লাইফ টাওয়ারে চারটি কার পার্কিংসহ ১০ হাজার ৯৬৫ বর্গফুটের তিনটি বাণিজ্যিক ফ্লোর, পার্শ্ববর্তী সাড়া আফতাব টাওয়ারে তিনটি কার পার্কিংসহ ১২ হাজার বর্গফুটের তিনটি বাণিজ্যিক ফ্লোর, রাজধানীর খিলক্ষেতে ৩৩ শতাংশ বা এক বিঘার একটি প্লট, বাড্ডায় চার কাঠার একটি ও গাজীপুর সদরে পাঁচ কাঠার আরেকটি প্লট ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

দুদক জানিয়েছে, অবৈধ উপায়ে ৯ কোটি ৯৫ লাখ ৪৪ হাজার ৫০০ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হকের বিরুদ্ধে গত বছরের ৩১ জুলাই মামলা করে দুদক। মামলার তদন্ত চলাকালে সম্প্রতি এসব সম্পদ বিক্রি বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন এনামুল। ফলে এই হস্তান্তর ঠেকাতে ক্রোকের আদেশ চাইল দুদক। শিগগিরই এসব সম্পদ তদারকির জন্য রিসিভার (তত্ত্বাবধায়ক) নিয়োগের আবেদন জানানো হবে বলে দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মামলার চার্জ গঠনের শুনানিতে কুমিল্লার আদালতে মামুনুল হক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৭:৫৬ পিএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৭:৫৬ পিএম
মামলার চার্জ গঠনের শুনানিতে কুমিল্লার আদালতে মামুনুল হক
ছবি : খবরের কাগজ

মাহফিলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে পুলিশের করা মামলার চার্জ গঠনের শুনানির জন্য সোমবার (৮ জুলাই) কুমিল্লার আদালতে হাজির হন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও সংগঠনের আরেক নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী।

কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক মোছা. ফরিদা ইয়াসমিন মামলার চার্জ গঠন করেন। চার্জ গঠনের শুনানিতে তারা উপস্থিত হন। 

আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. জসিমউদ্দীন চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর কুমিল্লার চান্দিনার জোয়াগ পশ্চিমপাড়া এলাকায় একটি মাহফিলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন মাওলানা মামুনুল হক। তার ওই উসকানিমূলক বক্তব্যের অভিযোগে মাহফিলের আয়োজক ও অতিথিদের বিরুদ্ধে ১৭ ডিসেম্বর পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। এতে ছয়জনকে আসামি করা হয়। সোমবার এই মামলার চার্জ গঠনের দিন ছিল। তাই আসামিরা উপস্থিত হন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. জসিমউদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘বিচারকের সামনে মাওলানা মামুনুল হক তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট এবং তারা নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। পরে বিচারক মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। মামুনুল হক এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।’

কাস্টমস কমিশনার এনামুলের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৭:৪২ পিএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৭:৪২ পিএম
কাস্টমস কমিশনার এনামুলের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা
মোহাম্মদ এনামুল হক

সিলেটের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হকের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। 

সোমবার (৮ জুলাই) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের শুনানি নিয়ে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন। 

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

দুদক ও আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ জুলাই একই আদালত এনামুলের সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাজধানীর বসুন্ধরায় দুটি প্লটের ওপর নির্মিত একটি ৯ তলা বাড়ি, কাকরাইল ও মোহাম্মদপুরে সাতটি বাণিজ্যিক ফ্লোর, কাকরাইল ও বনানীতে চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, ১০টি কার পার্কিং, খিলক্ষেতে এক বিঘার (৩৩ শতাংশ) একটি প্লট, ঢাকার বাড্ডা ও গাজীপুর সদরে পাঁচ কাঠা করে আরও দুটি প্লট ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই, এনামুল হকের বিরুদ্ধে প্রায় ৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক মামলা করে। দলিলে এসব সম্পদের মূল্য ৯ কোটি ৯৫ লাখ ৪৪ হাজার ৫০০ টাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এসব সম্পদের মূল্য শতকোটি টাকার কম নয় বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। কারণ দলিলে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তিন কাঠার দুটি প্লট অর্থাৎ ছয় কাঠার মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৬১ হাজার টাকা। দুদক কর্মকর্তারা ধারণা করেছেন এসব সম্পদের মূল্য শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

ডেপুটি স্পিকারের ছেলের বিরুদ্ধে মামলার আরজি সংশোধন হচ্ছে

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১১:২৪ এএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৬ এএম
ডেপুটি স্পিকারের ছেলের বিরুদ্ধে মামলার আরজি সংশোধন হচ্ছে
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকুর ছেলে এস এম আসিফ শাম্স

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকুর ছেলে ও পাবনার বেড়া পৌরসভার মেয়র এস এম আসিফ শাম্সের বিরুদ্ধে করা মামলার আরজি (অভিযোগ) সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)। এতে আসামির তালিকায় আসছে দায়ীদের নাম। 

২০১৪ সালে ১৯১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটর ভিশন টেল লিমিটেডের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা করে বিটিআরসি। এ মামলার অনেক আগেই ভাইস চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ ও দায়-দেনাসহ সব শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে কোম্পানির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন আসিফ শাম্স। মামলাটি মূলত কোম্পানির বিরুদ্ধে হলেও আসিফ শামসসহ শেয়ার হস্তান্তরকারী চারজনকে আসামি করা হয়। অথচ মামলার বাইরেই থেকে যান কোম্পানির বিদ্যমান মালিক বা শেয়ারহোল্ডাররা।

এ মামলায় আসিফসহ চার জনের বিরুদ্ধে জারি হওয়া ওয়ারেন্ট নিয়ে সম্প্রতি খবরের কাগজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এ ঘটনা ব্যাপক আলোচিত হলে মামলার নথিপত্র খতিয়ে দেখা শুরু করে বিটিআরসি। মামলাটিতে কোম্পানির বিদ্যমান মালিকদের কেন আসামি করা হয়নি তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে মামলায় দায়ীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে আরজি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নতুন করে কোম্পানিটির পরিচালক জিয়াউর রহমানসহ ৬ জনের নাম আসতে পারে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটিআরসির একজন পরিচালক গতকাল রবিবার খবরের কাগজকে বলেন, ‘এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, শেয়ার বিক্রেতা চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও কেন শেয়ার ক্রেতাসহ অন্য পরিচালকদের আসামি করা হলো না? সেই কারণে মামলার বিষয়টি নতুন করে যাচাই করা হচ্ছে। এখানে বিটিআরসির কর্মকর্তাদের কোনো অনৈতিকতা আছে বলে মনে হয় না। তবে যাচাইকালে কারও কোনো গাফিলতি বা অনৈতিকতার প্রমাণ পেলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তা ছাড়া মামলাটি মূলত কোম্পানির বিরুদ্ধে করা হয়েছে। মামলায় আসিফসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে এই জন্য যে, তাদের দায়িত্ব পালনের সময়ে দাবি করা রাজস্ব বকেয়া পড়ে। প্রতি তিন মাস অন্তর রাজস্ব আদায়ের বিধান রয়েছে। চার বার অর্থাৎ এক বছরের রাজস্ব বকেয়া পড়লে তা আদায়ের জন্য মামলা করার বিধান রয়েছে। ভিশন টেলের কাছে ২০১৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত রাজস্ব বকেয়া পড়ায় তা আদায়ে ২০১৪ সালে মামলাটি দায়ের করা হয়। তবে এ কথা সত্য যে, শুধু চারজন নয় কোম্পানির সবাইকে আসামি করা উচিত ছিল। অবশ্য এখনো তাদের আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। এখনো আরজি সংশোধনের সুযোগ আছে। সে অনুযায়ী আরজি সংশোধনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা চলছে। শিগগিরই আরজি সংশোধন করে বাকিদেরও আসামির তালিকায় আনা হবে।’

সংশোধনী আরজিতে সম্ভাব্য আসামিরা দেশের বাইরে আছেন বলে শোনা যাচ্ছে এবং তাদের আদালতে হাজির করা সম্ভব কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে বিটিআরসির পরিচালক বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া। আদালত সেটার বিচার করবেন। তারা দেশের বাইরে থাকলেও আইনি প্রক্রিয়া তো থেমে থাকবে না। বিচারিক প্রক্রিয়ায় তারা অনুপস্থিত থাকলে, তাদের বিরদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হবে। তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ সম্পন্ন হবে। আমাদের কাজ শুধু আইনি প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রের টাকা আদায় করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাওয়া।’ 

আসিফের শেয়ার হস্তান্তরের বিষয়টি বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ অনুমোদন করে ২০১৩ সালের ২৭ জুলাই চিঠি দেয়। এর পরও ২০১৪ সালে করা মামলায় তাকে আসামি করার কারণ জানতে চাইলে বিটিআরসির পরিচালক বলেন, ‘এখানে দুটি বিষয় আছে। একটি হলো- শেয়ার হস্তান্তরের অনুমোদনপত্রে একটি শর্ত যুক্ত ছিল যে, ৩০ দিনের মধ্যে শেয়ার হস্তান্তর-সংক্রান্ত সব কাগজপত্র জমা দিতে হবে। কিন্তু সেই শর্ত পূরণ করা হয়নি। আরেকটি হলো- তারা দায়িত্বে থাকার সময়ই রাজস্ব, লাইসেন্স ফি, ভ্যাটসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি পাওনা বকেয়া পড়েছিল। এ কারণে তাদেরকে আসামি করা হয়েছে।’ 

এদিকে ভিশন টেল সম্পর্কে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মো. বদিউজ্জামানকে চেয়ারম্যান করে ২০১১ সালে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটর হিসেবে ভিশন টেল লিমিটেড গঠিত হয়। ওই বছর ২৭ অক্টোবর কোম্পানিটি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) লাইসেন্স পায়। অনুমোদিত কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন এস এম আসিফ শামস।

এরপর তিনি ২০১৩ সালের ৬ ফেব্রুয়াররি সব শেয়ার হস্তান্তর ও ভাইস চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগসহ কোম্পানি থেকে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে যান। একই বছর ২৩ জুলাই আসিফের শেয়ার হস্তান্তর ও কোম্পানির নতুন মালিকদের বিষয়টি অনুমোদন করে চিঠিও দেয় বিটিআরসি। সেই বিটিআরসি ২০১৪ সালে রাজস্ব ১৯১ কোটি টাকা বকেয়া দাবি করে তা আদায়ে ঢাকার জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসারের আদালতে মামলা দায়ের করে।

আসিফ ছাড়াও আসামি করা হয় কোম্পানির এমডি রাসেল মির্জা, পরিচালক শরিফুল ইসলাম ও আইরিন ইসলামকে। এরপর ২০১৫ সালে কোম্পানিটির লাইসেন্স বাতিল করে বিটিআরসি।

এদিকে ২০২২ সালে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। আসিফ গত বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হয়ে কোম্পানি থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করাসহ সব কাগজপত্র দাখিল করেন। এরপর তার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করেন ঢাকার জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসারের আদালত।

এ মামলায় সম্পূর্ণ দায়মুক্তির আশা ব্যক্ত করে এস এম আসিফ শামস খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিটিআরসির অনুমতি নিয়ে শেয়ার হস্তান্তর ও কোম্পানি থেকে পদত্যাগ করে ২০১৩ সালেই ভিশন টেল থেকে বেরিয়ে এসেছি। এরপর প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সম্পর্কে আগে জানা ছিল না। বৃহস্পতিবার আমি আদালতে হাজির হয়েছি এবং সেখানে সমস্যার সমাধানও হয়েছে।’

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বরখাস্ত গাড়িচালক মহসীনের শাশুড়ির বাড়ি ক্রোক

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০১:৩৪ পিএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০১:৫৭ পিএম
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বরখাস্ত গাড়িচালক মহসীনের শাশুড়ির বাড়ি ক্রোক
ছবি: খবরের কাগজ

দুর্নীতির মামলায় আদালতের নির্দেশে যশোর শহরের রাজা বরদাকান্ত রোডের রেলগেট এলাকার জমিসহ পাঁচতলা আলিশান বাড়ি ‘রাশিদা মহল’ ক্রোক করেছে জেলা প্রশাসন। বাড়ির সামনে প্রশাসনের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাগজে-কলমে আলোচিত বাড়িটির মালিক ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বরখাস্ত গাড়িচালক মহসীন আলীর শাশুড়ি ফিরোজা বেগম। ফিরোজা বেগম যশোরের মণিরামপুর উপজেলার গালদা গ্রামের মৃত রফিক উল্লাহর স্ত্রী। তার মেয়ের জামাই একই উপজেলার খেদাপাড়া গ্রামের আবদুল ওহাবের ছেলে মহসীন আলী। তারা দুজনই দুদকের মামলার আসামি।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুজন সরকার বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় আদালতের নির্দেশে জমিসহ রাশিদা মহল বাড়িটি গত বৃহস্পতিবার ক্রোক করা হয়েছে। আদালতের আদেশে ওই ভবনের রিসিভার হিসেবে জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক প্রতি ছয় মাস পরপর ওই ভবনের আয়-ব্যয়ের হিসাব আদালতে দাখিল করবেন। ভবনটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ স্থানান্তর ও রূপান্তর করে শাশুড়ি মোছা. ফিরোজা বেগমকে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৬৯ হাজার ৯৬২ টাকা ৮৫ পয়সা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সহযোগিতা করেছেন তার মেয়ের জামাই মহসীন আলী। তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর ফিরোজা বেগম ও মহসীন আলীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ সহকারী পরিচালক খন্দকার নিলুফা জাহান। 

ওই মামলায়  চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি মহানগর দায়রা জজ ও মহানগর স্পেশাল জজ আদালত ঢাকার এক আদেশে ফিরোজা বেগমের নামে ক্রয় করা যশোর পৌরসভার রাজা বরদাকান্ত রোডে অবস্থিত ৭৭ নম্বর চাঁচড়া মৌজার এসএ দাগ নম্বর ৮১৭ , আরএস দাগ নম্বর ২১৯১ (সাব রেজিস্ট্রি অফিস যশোরের দলিল নম্বর ১৮৬০, তারিখ ২৭/০২/২০০৮)-এর ৭.৭৪ শতাংশ জমিসহ বিল্ডিং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ধারা ২১ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭ এর ১৮ গ মোতাবেক ক্রোক করে জেলা প্রশাসক যশোরকে রিসিভার নিয়োগ দিয়েছেন। গত ৩ জুলাই জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ-সংক্রান্ত একটি সাইনবোর্ড ওই ভবনের সামনে টাঙিয়ে দিয়েছে। 

গতকাল স্থানীয়রা বলেন, ওই ভবনে নিতলতা থেকে তৃতীয়তলা পর্যন্ত ভাড়া দেওয়া আছে। এখানে খেলাধুলার পুরস্কার (ক্রেস্ট, ট্রফি) তৈরির কারখানা রয়েছে। সেখানেই তারা কাজ করেন। কর্মরত শ্রমিকরা ভবনের মালিককে চিনেন না। বাড়ির মালিকরা তেমন কেউ আসেনও না। ভবনের নিচতলার আরেকটি ইউনিটে মোটরযান মেরামতের গ্যারেজ রয়েছে। গ্যারেজ মালিক বলেন, ভবন মালিকের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই। মাঝে মাঝে তাদের প্রতিনিধি এসে ভাড়া নিয়ে যায়। জেলা প্রশাসনের লোকজন এসে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন। শুনছি দুর্নীতির মামলায় ভবনটি ক্রোক করেছে আদালত।’  

স্ত্রী-সন্তানসহ মতিউরের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:৩১ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:৩১ পিএম
স্ত্রী-সন্তানসহ মতিউরের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ
মতিউর রহমান

ছাগলকাণ্ডে দেশজুড়ে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ও তার দুই স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ের নামে ঢাকায় দুটি বহুতল বাড়ি, দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদীর রায়পুরা ও বরিশালের মুলাদীতে ১০ একর ৩৬ শতাংশ (১০৩৬ শতাংশ বা ৬২৮ কাঠা বা ৩১ বিঘা) জমি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ ক্রোকের নির্দেশ দেন।  

ক্রোকের আদেশ দেওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে, মতিউর রহমানের নামে বরিশালের মুলাদীতে কমিশনারের চর মৌজায় ১১৪ শতাংশ বা ৬৯ কাঠা জমি। প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকের ৭/এ রোডে ২ হাজার ৫৪০ স্কয়ার ফুটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও নরসিংদীর রায়পুরায় ৫২২ শতাংশ বা ৩১৭ কাঠা জমি। 

প্রথম স্ত্রীর ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে নরসিংদীর রায়পুরায় ২৭৫ শতাংশ বা ১৬৭ কাঠা জমি, মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতার নামে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকের ১ নম্বর রোডে ৫ কাঠা জমিতে বহুতল ভবন ও নরসিংসীর রায়পুরায় ১০৬ শতাংশ বা ৬৫ কাঠা জমি এবং দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারের নামে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এন ব্লকে ৫ কাঠা জমিতে একটি বাড়ি ও ধানমন্ডির জিগাতলায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে।    

দুদকের প্যানেল আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন। আবেদনে বলা হয়েছে, মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। 

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তারা এসব সম্পদ বিক্রি বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এটা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ প্রক্রিয়া গ্রহণের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। তাই সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে স্থাবর সব সম্পদ ক্রোক করা একান্ত প্রয়োজন।’

এদিকে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে মতিউর ও তার দুই স্ত্রী- লায়লা কানিজ ও শাম্মী আখতার, প্রথম পক্ষের বড় ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতার সম্পদের হিসাব চেয়ে গত ২ জুলাই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। 
নোটিশে সম্পদবিবরণী দাখিলের জন্য তাদের ২১ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এতে তাদের নিজ নিজ ও তাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে থাকা যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী কমিশনে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

মতিউর রহমানের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গত ৪ জুন সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরে ২৩ জুন দুদকের উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্ব তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু হলে তাদের নামে থাকা অর্থ-সম্পদের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ, বিএসইসি, দেশের সব সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও ভূমি অফিসে চিঠি পাঠানো হয়েছে। 

দুদকের চিঠি পেয়ে বিএফআইইউ ও বিএসইসি স্বউদ্যোগে মতিউর ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বিও অ্যাকাউন্টের লেনদেন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি অন্তত ২০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ১৬টি বিও অ্যাকাউন্টের তথ্য দুদকে পাঠিয়েছে। এদিকে ঢাকার তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স, নরসিংদীর রায়পুরা, বরিশালের মুলাদীসহ বিভিন্ন সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে অন্তত ৪৫টি দলিলের তথ্য-উপাত্ত দুদকে আসে।

মতিউর রহমানের ছেলে ইফাত মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল এবং ঢাকার বিভিন্ন খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। এরপর থেকে মতিউর রহমানের ছেলের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন, মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলোবাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে অঢেল সম্পত্তির তথ্য বেরিয়ে এলে বিষয়টি দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। 

ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ গরু আমদানি ও বিক্রির বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগে সাভারে গো-প্রজজনকেন্দ্র এবং সাদিক অ্যাগ্রোতে অভিযান চালিয়েছে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম। অভিযান শেষে কোটি টাকা মূল্যের অন্তত ৬টি গরু জব্দ করা হয়েছে।