আগামী রবিবার নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য সরকার বা নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটারদের কোনো ধরনের চাপ দেওয়া হচ্ছে কি না, তা ইসির কাছে জানতে চেয়েছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। জবাবে নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, ভোটারদের চাপ দেওয়ার কোনো কারণ নেই।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও মিশনপ্রধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে ভোটের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে এসব তথ্য জানানো হয়। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ওই হোটেলের সুরমা হলে তথ্য অধিদপ্তরের অস্থায়ী মিডিয়া সেন্টার উদ্বোধন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
উদ্বোধনের পর মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। বৈঠকে আলোচনার বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা জানতে চেয়েছেন সরকার বা নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটারদের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে কি না? যার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের ভোট দিতে যেতে হবে। আমরা তাদের জানিয়েছি, আমাদের দিক থেকে চাপ সৃষ্টির কোনো কারণ নেই।’
তিনি বলেন, ‘যখনই নির্বাচন করি আমরা ভোটার সাধারণের কাছে একটা আবেদন রাখি যেটা আমাদের দায়িত্বের অংশ। আপনারা ভোটকেন্দ্রে এসে অবাধে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সেটা চাপ নয়, এটা হচ্ছে সচেতনতা।’ ভোটারদের চাপ দেওয়া প্রসঙ্গে ভোটের বিরোধিতাকারী দল বিএনপির ভোটে না আসার কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘বরং চাপের কথা যদি আপনারা বলেন, তাহলে অন্য দিক থেকে হতে পারে। যেমন একটি বয়কটিং দল (বিএনপি) ভোট বর্জন করছে এবং বর্জনটা যদি বর্জনই থাকে সেখান থেকে ভোটারদের প্রতি আবেদন থাকতে পারে, আপনারা যাবেন না। তা হলে ভয়ে একটা চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এসব আমরা তাদের ব্যাখ্যা করে জানিয়েছি।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানানোর কারণটা হচ্ছে তারা সব সময় আমাদের নির্বাচনের বিষয়ে আগ্রহ ব্যক্ত করেন। তারা বিভিন্ন সময়ে আমাদের কার্যালয়েও গিয়েছেন, মতবিনিময় করেছেন। তাদের প্রত্যাশা আগামী নির্বাচনটা যেন অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ হয়। এ জিনিসটার ওপর তারা খুব জোর দিতে চান।’
সিইসি বলেন, ‘তাদের কাছে যে প্রশ্নগুলো এসেছে তার মধ্যে একটি হলো, অভিযোগ কী পরিমাণ পাচ্ছি? অভিযোগ কত? আমরা তাদের জানিয়েছি, আমরা ৬০০-এর মতো অভিযোগ পেয়েছি। তার মধ্যে ৪০০-এর মতো অভিযোগ নিয়ে কাজ করেছি। আমরা জানিয়েছি রেজাল্টের ব্যাপারে আমরা একটা অ্যাপ করেছি। স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ। উদ্দেশ্য, ভোট স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করা। আমরা সেটা তাদের অবহিত করেছি। প্রতিটি কেন্দ্রে পোলিং চলাকালে ২ ঘণ্টা পরপর যে তথ্য আমাদের প্রতিটি ইলেকশন সেন্টারে পাওয়া যাবে, তা সেখানে আপলোড করা হবে। তারপর যেকোনো নাগরিক পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে অ্যাক্সেস নিয়ে জানতে পারবেন ভোটের পরিমাণটা কীভাবে হচ্ছে।’
নির্বাচনে সহিংসতা-সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সহিংসতা আছে, তবে পরিমাণে খুব কম। ভোটের সময় আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রায় ৮ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী নির্বাচন-প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে ভোট গ্রহণ করবেন। এ ছাড়া ১ লাখ কর্মচারী স্ট্যান্ডবাই থাকবেন। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আনসার, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আর্মি, নেভি ও কোস্টগার্ড- সব মিলিয়ে আরও ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মাঠে আছেন, তারা মাঠে থাকবেন ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আরও ৩ হাজার ম্যাজিস্ট্রেট এবং জাজেস রেখেছি, তারাও কিন্তু মাঠে থাকছেন।’
মিডিয়া সেন্টার প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যমের যে প্রতিনিধিরা আসবেন, থাকবেন এবং তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করবেন, তাদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এখানে থাকবে। সেন্টারে ল্যাপটপ, ফ্যাক্স, প্রিন্টার, ইন্টারনেটসহ অন্যান্য সুবিধা থাকবে। মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কারণ গণমাধ্যম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সব সময় স্বচ্ছতার কথা বলি। নির্বাচন-প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা দৃশ্যমানতার সঙ্গে তুলে ধরার ক্ষেত্রে যারা মূল দায়িত্ব পালন করবেন, তারা হচ্ছেন সাংবাদিকরা। স্বচ্ছতা যদি তুলে ধরা যায়, যদি বাস্তব অবস্থা সত্যি ইতিবাচক হয়, তাহলে বিভ্রান্তির সুযোগ কম হবে। ভোটের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যে সংকট, সেটিরও অবদমন হতে পারে।’
এমএ/