![সিলেটে কড়া নাড়ছে বন্যা, বিপৎসীমার উপরে ২ নদীর পানি](uploads/2024/06/15/flood-sylhet-1718449892.jpg)
একদিন পর ঈদুল আজহা। এই ঈদের খুশির সঙ্গে সিলেটবাসী দুয়ারে কড়া নাড়ছে বন্যার দুঃখ। গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া ভারি বৃষ্টি ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত চলমান থাকায় সিলেটের নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে।
গতকাল শুক্রবার দিনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা কমলেও সন্ধ্যার পর থেকে আবারও শুরু হয় বৃষ্টি। শুক্রবার রাত থেকে আজ শনিবার (১৫ জুন) বেলা ১২টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টির কারণে নদ নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
ইতোমধ্যে কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ও সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) বৃষ্টিপাত হয়েছে ৬২ মিলিমিটার। শনিবার (১৫ জুন) সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৫ মিলিমিটার। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১ মিলিমিটার।
এদিকে ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৫১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার ফলে সিলেটের সবকটি নদনদীর পানি দ্রুত বাড়ছে।
অপরদিকে আগামী পাঁচদিন সিলেট অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয়ের তথ্য মতে, বর্ষাকালে সুরমা নদীর কানাইঘাট এলাকার ডেঞ্জার লেভেল ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। শুক্রবার এই পয়েন্টে পানি ছিল ১১ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার।
আজ শনিবার দুপুর ৩টায় এই পয়েন্টে পানি ১৩ দশমিক ৩৪ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবহিত হচ্ছে।
সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর ডেঞ্জার লেভেল ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। গতকাল এই পয়েন্টে নদীর পানি ছিল ৯ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। আজ শনিবার দুপুর ৩টায় এই পয়েন্টে পানি ১০ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার।
কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্টে ডেঞ্জার লেভেল হচ্ছে ১৫ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার। গতকাল এই পয়েন্টে নদীর পানি ছিল ১৩ দশমিক ৫৯ সেন্টিমিটার। আজ শনিবার দুপুর ৩টায় এই পয়েন্টে পানি ১৪ দশমিক ৫২ সেন্টিমিটার।
কুশিয়ারা নদী ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানির ডেঞ্জার লেভেল ৯ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার। গতকাল এই পয়েন্টে পানি ছিল ৯ দশমিক ৯৪ সেন্টিমিটার। আজ শনিবার দুপুর ৩টায় এই পয়েন্টে পানি ১০ দশমিক ০০ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবহিত হচ্ছে।
সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে ডেঞ্জার লেভেল হল ১২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার। গতকাল এই পয়েন্টে নদীর পানি ছিল ১০ দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটার। আজ শনিবার দুপুর ৩টায় এই পয়েন্টে পানি ১২ দশমিক ১৯ সেন্টিমিটার। সারিগোয়াইন নদীর গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ডেঞ্জার লেভেল হলো ১০ দশমিক ৮২ সেন্টিমিটার। গতকাল এই পয়েন্টে নদীর পানি ছিল ৯ দশমিক ৪৩ সেন্টিমিটার। আজ শনিবার দুপুর ৩টায় এই পয়েন্টে পানি ১০ দশমিক ১২ সেন্টিমিটার। পিয়াইন (ডাউকি) নদীর জাফলং পয়েন্টে ডেঞ্জার লেভেল হল ১৩ দশমিক ০০ সেন্টিমিটার। গতকাল এই পয়েন্টে পানি ছিল ৯ দশমিক ৭৩ সেন্টিমিটার। আজ শনিবার দুপুর ৩টায় এই পয়েন্টে পানি ১০ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার।
বন্যার শঙ্কার কথা জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত ২৪ ঘন্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৫১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আমি আজ সকালে আমাদের সবগুলো স্পট ভিজিট করেছি। আমরা তো পুরোপুরি চেরাপুঞ্জির উপর ডিপেন্ড করি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে যেটা মনে হচ্ছে আগামী তিন চারদিন এরকম বা এর কাছাকাছি বৃষ্টিপাত হবে। তাই বলা যায় আমরা বন্যার ঝুঁকির মধ্যে আছি। আমাদের পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্মরতদের ঈদের ছুটি নেই। আমি নিজেও কর্মস্থলে আছি। তাই এই ঈদে সবাইকে বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।’
শাকিলা ববি/অমিয়/