![আওয়ামী লীগের হাত ধরেই দেশের সব অর্জন : প্রধানমন্ত্রী](uploads/2024/06/23/PM-1719158557.jpg)
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য, যা আমরা প্রমাণ করেছি। দেশের সব অর্জন এসেছে এই দলের হাত ধরেই।
দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার (২৩ জুন) বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আলোচনা সভায় জনগণকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানিয়ে এ কথা বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
আওয়ামী লীগের পদক্ষেপের কারণেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, সব সময় মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে ছিল সংগঠনটি। কিন্তু বারবার এই দলকে আঘাত করা হয়েছে, নিশ্চিহ্নের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু যতবার এই আঘাত এসেছে দলটি ততবারই জেগে উঠেছে। সেই আইয়ুব খানের মার্শাল ল থেকে শুরু। তবু এ সংগঠনের কেউ ক্ষতি করতে পারেনি। ফিনিক্স পাখির মতো, যেমন পুড়িয়ে ফেলার পরও ভস্ম থেকে জেগে উঠে, আওয়ামী লীগও সেভাবেই জেগে উঠেছে।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দেড় বছরের মাথায় ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ওই দলটিরই বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের প্রচেষ্টায় আত্মপ্রকাশ করে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। ছয় বছর পর দলের নাম পাল্টে করা হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই আলোচনা সভা। এর প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয় ‘গৌরবময় পথ চলার ৭৫ বছরে আওয়ামী লীগ, সংগ্রাম সংকল্প সতত শপথে জনগণের সাথে।’
বিকেলে আলোচনা সভা শুরু হলেও বেলা ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকগুলো খুলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে মূল দল ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উদ্যানে জড়ো হতে শুরু করেন। বিকেল সাড়ে ৩টার পর আলোচনা সভাস্থলে এসে পৌঁছান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঞ্চে ওঠার আগ মুহূর্তে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তিনি, দলীয় পতাকা তোলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আলোচনা সভায় দেশি, বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশ নেন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পায়রা অবমুক্ত করেন শেখ হাসিনা। পৌনে ৪টার দিকে মঞ্চে বসেন তিনি। এরপর মঞ্চের ডান পাশে নির্ধারিত স্থানে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর থিম সং এবং দেশাত্মবোধক নানা গান ও নাচ পরিবেশন করেন। এরপর স্বাগত বক্তৃতা করেন ওবায়দুল কাদের। সভাপতির বক্তব্য দিতে শেখ হাসিনা মাইকের সামনে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও স্লোগান ধরেন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগের যাত্রা, পাকিস্তান আমলের সংগ্রাম, স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা, পরবর্তী সময়ে দল ভাঙার চক্রান্ত এবং তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যের বিষয়টি তার বক্তব্যে তুলে ধরেন। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরকেও স্মরণ করেন তিনি। দলের প্রথম সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হকের কথা উল্লেখ করে তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, এরপর ক্ষমতা পরিবর্তন হয় অস্ত্র ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। তখন জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন তারা করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ছাড়া যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা সন্ত্রাসবাদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, দুর্নীতি করেছে। তারা জনগণের শক্তি ভুলে গিয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের আর্থসামাজিক উন্নতি করার সংগঠন। বারবার আঘাত করেও এই সংগঠনের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। ফিনিক্স পাখি যেমন পুড়িয়ে ফেলা ভস্ম থেকে জেগে উঠে, আওয়ামী লীগ ঠিক সেইভাবে জেগে উঠেছে।
তিনি বলেন, বেশি দিনের কথা না, ২০০৭ সালেও চেষ্টা করা হয়েছিল; আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে নতুন কিংস পার্টি গড়ে তুলতে, সেটাও সফল করতে পারেনি। কারণ, আওয়ামী লীগের মূল শক্তি হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ, তৃণমূলের মানুষ, আওয়ামী লীগের অগণিত মুজিব আদর্শের সৈনিক। এই সৈনিকরা কখনো পরাজয় মানে না, মাথা নত করে না।
দলছুট নেতারা ‘ভুল করেছেন’মন্তব্য করে তিনি বলেন, দলের থেকে নিজেকে বড় মনে করে কেউ কেউ দল ছেড়ে গিয়ে অন্য দলে গেছেন, কেউ দল গঠন করেছেন, তারা ভুল করেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ভুলে গিয়েছিলেন, তারা আলোকিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন বলেই। চলে যাওয়ার পর ওইসব তারা আর জ্বলে নাই। তারা এখন নিভু নিভু, কেউ কেউ নিভেও গেছেন। কেউ ভুল বুঝে ফিরে এসেছেন, আমরা নিয়েছি। কেউ এখনো আওয়ামী লীগের সরকারের পতন, ধ্বংস এবং নানা জল্পনা কল্পনা করে যাচ্ছেন।
মঞ্চে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোশাররফ হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, সিমিন হোসেন রিমি, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, সৈয়দা জেবুন্নেছা হক উপস্থিত ছিলেন।