![বাংলাদেশের পশ্চাৎপদ ব্যাটিং](uploads/2024/06/24/Lead-Polash-vai=ok-1719225720.jpg)
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ‘টাইমড আউট’-র ঘটনার পর দুই দেশের ম্যাচকে ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এর আগে তা ছিল ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে। ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে শুরু। এরপর থেকে যখনই যেখানে হোক, দুই দল খেলতে নামার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উত্তপ্ত হয়ে উঠত। যার রেশ খেলোয়াড়দের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ত বেশ। কিন্তু টাইমড আউটের ঘটনার পর বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের সেই উত্তেজনা প্রশমিত হয়ে গেছে। সেটা এমনই যে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল জেতার মানসিকতাই ভুলে গেছে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের অবস্থা এমনিতেই রুগ্ণ। সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেই অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে। এই অবনতি আবার সর্বজনীন নয়, শুধুই ব্যাটারদের ক্ষেত্রে। বর্তমান ব্যাটিং লাইন একটা বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছে তাদের সীমাদ্ধতা নিয়ে। তাদের কাছে বড় কোনো কিছু প্রত্যাশা না করতে। তাদের লিমিট ১২০-১৩০ থেকে ১৪০ পর্যন্ত। তা আগে-পরে যখনই ব্যাটিং করা হোক না কেন। পরে ব্যাট করে এর থেকে বেশি টার্গেট থাকলে তারা তাদের লিমিট ক্রস করবেন না। লিমিট মেনেই ব্যাটিং করবেন। সেখানে থাকবে না জয়ের কোনো মানসিকতা। বোলাররা যদি দয়াপরবশ হয়ে ১২০-১৩০ রানের টার্গেট দেন, সে ক্ষেত্রে তারা চেষ্টা করতে পারেন। যেমনটি তারা গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার ১২৪ রান কোনো রকমে পাড়ি দিয়েছেন। আবার দক্ষিণ আফ্রিকার ১১৩ রান পাড়ি দেওয়া সম্ভব হয়নি। অবশ্য তাদের চেষ্টার কমতি ছিল না।
ব্যাটারদের সেই চেষ্টা আবার দেখা যায়নি ভারতের বিপক্ষে। সুপার এইটে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ভারত ৫ উইকেট করেছিল ১৯৬ রান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই রান অতিক্রম করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে এই রান খুবই নিরাপদ। বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে আরও বেশি করে নিরাপদ, আরামদায়ক। বোলাররা আরামসে বোলিং করে যেতে পারেন। এভাবে শেষ হয়ে যাবে ২০ ওভার। পরে দেখা যাবে তাদের জয়ের ব্যবধান বেশ।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উইকেট আর বাংলাদেশ দলের সীমাবদ্ধ ব্যাটিং এই দুইয়ে মিলে ভারতের ইনিংস শেষ হওয়ার পরই যেন ম্যাচের ফলাফল নির্ধারিত হয়ে যায়। আর এই ধারণার বাস্তবায়ন হতে খুব বেশি সময় লাগেনি। বাংলাদেশ দল ব্যাটিং করতে নামার পরপরই স্পষ্ট হয়ে যায় রান তাড়ায় কোনো ইচ্ছেই নেই তাদের। বাংলাদেশ দলের মনমানসিকতা ছিল ২০ ওভার খেলে দলের রান বাড়িয়ে নেওয়ার পাশাপাশি হারের ব্যবধান যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। ৮ উইকেটে ১৪৬ রান করে হার মেনেছিল ৫০ রানে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৫০ রানের হার কিন্তু অনেক বড় ব্যবধান।
গ্রুপ পর্ব থেকে শুরু করে সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং ছিল এক রকম। যেখানে ফুটে উঠেছিল ব্যাটিং ব্যর্থতা। আর ভারতের বিপক্ষে ফুটে উঠেছে সীমাবদ্ধতা। এত রান তাড়া করে জয়ের সক্ষমতা নেই এই দলের। ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে কিন্তু মড়ক লাগেনি। উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৩৫ রান। দলীয় শতরান আসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৪ ওভারের মাঝে। কিন্তু কখনই কারও মাঝেই জয়ের অদম্য ইচ্ছে দেখা যায়নি। এ যেন পশ্চাৎপদ ব্যাটিং। এমন নেগেটিভ ব্যাটিং সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ কবে করেছে, তার জন্য পরিসংখ্যানে চোখ বুলাতে হবে। বোলাররা যখন নিজেদের মেলে ধরে সেরা দশে ঢুকে গেছেন। ১১টি করে উইকেট নিয়ে নাম আছে তানজিম সাকিব ও রিশাদ হোসেনের, সেখানে ব্যাটারদের অবস্থান তলানির দিকে। ৬ ম্যাচ খেলে শতরানের ওপরে করেছেন মাত্র তিনজন নাজমুল (১০৭), তাওহীদ হৃদয় ( ১৩৯) সাকিব আল হাসান (১১১)।
এমন নেগেটিভ ব্যাটিং নিয়েই বাংলাদেশ দল সেমি ফাইনালে যাওয়ার সমীকরণ মেলাতে দুর্ধর্ষ আফগান বোলারদের সামনে নামবে। আফগানরা যদি আগে ব্যাট করে ১৫০ এর ওপরে রান করে, তাহলে বাংলাদেশের খেলা শেষ। আর বোলাররা যদি আফগানদের অল্প রানে আটকে রাখতে পারেন, সে ক্ষেত্রে ব্যাটাররা একটু চেষ্টা করতে পারেন?