ঢাকা ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪

শুভ জন্মদিন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ০৬:২৮ পিএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ০৭:৩৮ পিএম
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
ছবি : সংগৃহীত

কেউ বলেন এলিয়েন, কেউবা ভিনগ্রহের ফুটবলার। বিশ্ব ফুটবলের রাজপুত্তুর লিওনেল মেসিকে নিয়ে বিশেষণের শেষ নেই। ক্লাব থেকে শুরু করে জাতীয় দল আর্জেন্টিনা, সবখানেই মেসির আলোকময় উপস্থিতি। কাঁড়ি কাঁড়ি গোল আরও রেকর্ডে মোড়ানো বর্ণিল ক্যারিয়ারে সম্ভাব্য সব শিরোপা জেতা লিওনেল মেসিকে তাই অনেকে বলেন, GOAT, গ্রেটেস্ট অব অল টাইম। আর্জেন্টিনার খুদে এই ফুটবল জাদুকরের আজ জন্মদিন। ৩৭-এ পা রাখা লিওনেল মেসিকে নিয়ে খবরের কাগজের দুই পর্বের বিশেষ আয়োজন। আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

‘মেসিকে নিয়ে কিছু লিখো না। তাকে বর্ণনা করার চেষ্টাও করো না। শুধু তার খেলা দেখ এবং উপভোগ করে যাও’ 
-পেপ গার্দিওলা 

বাঁ পায়ের জাদু। সেটা অপার্থিব নাকি মায়াবী বিভ্রম। কেউ বলে ঐশী দক্ষতা, কেউবা বলে অত্যাশ্চর্য ক্ষমতা। সবুজ গালিচায় সর্পিল গতিতে তার আঁকাবাঁকা চলা মুগ্ধতার রেণু ছড়ায়। সঙ্গে ওলটপালট হয় রেকর্ড বুক। কত গোল, কত ট্রফি, কত কীর্তি, রোসারিও থেকে বার্সেলোনা, টিস্যু পেপারে সাইন করা থেকে ভুবন মাতানো এক ফুটবলার- লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।

২০২২ কাতার বিশ্বকাপের আগে পর্যন্তও মেসির নামের পাশে ছিল নানা বিশেষণ। কিন্তু সবই ছিল অর্থহীন। সর্বকালের সেরার প্রশ্নে গুটিয়ে যেত তর্কে জড়ানো মেসি ভক্তরা। কারণ মেসির শোকেসে ছিল না আকাশি-নীল জার্সিতে একটি সোনালি ট্রফি। মেসির মনের উঠোনজুড়ে তাই ছিল বিশাল অঙ্কের আঁকিবুঁকি। হিসাবটা তাই তিনি মেলালেন মরুর বুকে কাতারের ঐতিহাসিক লুসাইল স্টেডিয়ামে। ভক্তদের মনে রোমাঞ্চের কাঁপন তুলে জিতলেন পরম আরাধ্যের বিশ্বকাপ। মেসির হাতে বিশ্বকাপ দিয়ে যেন দায়মুক্ত হলো ফুটবলও। 

২০২২ কাতার বিশ্বকাপ জেতার পর লুসাইল স্টেডিয়ামে প্রিয় বন্ধু সার্জিও আগুয়েরোর কাঁধে লিওনেল মেসি। ছবি : সংগৃহীত

একটি বিশ্বকাপের জন্য কত হাপিত্যেশ ছিল এই মেসির, তা সবারই জানা। ম্যারাডোনার নেতৃত্বে ১৯৯০, মেসির কাঁধে চড়ে ২০১৪। দুই বিশ্বকাপের ফাইনালেই জার্মান মেশিনে বিকল হয়েছিল আর্জেন্টিনা।  ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের পর দুবার কোপা আমেরিকার খেতাব মিস। পেনাল্টি মিসে সূর্যাস্ত। অভিমান-দুঃখে অবসরও নিয়েছিলেন মেসি। তবে শেষ সেখানেই নয়। হেরে যাওয়ার মুহূর্ত থেকে যারা চ্যাম্পিয়নের সরণিতে ফিরে আসেন, তারাই প্রকৃত লিজেন্ড। মেসিও যেমন তাই। কাতার বিশ্বকাপ জিতে মেসি প্রমাণ করেছেন, তিনি ভিনগ্রহের ফুটবলার। আধুনিক ফুটবলের হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা।

অথচ কে জানত, ভাগ্য আরেকটু বিরূপ হলেই মেসি নামের কোনো ফুটবলারকেই হয়তো চিনত না বিশ্ব। দশ বছর বয়সে গ্রোথ হরমোনজনিত সমস্যায় ধরা পড়া মেসি ছোট্ট দুটি পায়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন নিওয়েলস ওল্ড বয়েজ ক্লাব। কিন্তু উচ্চতা না বাড়লে ফুটবল খেলতে পারবে না, তা নিয়ে শঙ্কা ছিল ঢের। এই রোগের যে চিকিৎসা ব্যয়ভার তা মেটাতে পারেনি নিওয়েলস বয়েজ কিংবা আর্জেন্টিনার বিখ্যাত ক্লাব রিভারপ্লেটও। কারণ প্রতি মাসে মেসির চিকিৎসার জন্য দরকার হতো ৯০০ মার্কিন ডলার। একপর্যায়ে মেসিকে নিয়ে হালই ছেড়ে দিয়েছিল তার পরিবার। কিন্তু যার কপালে বিশ্বজয়ের রাজটিকা, তাকে রুখতে পারে কে! এগিয়ে আসে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা। ২০০০ সালে ঐতিহাসিক ন্যাপকিন চুক্তিতে অসামান্য এই প্রতিভাকে নিজেদের করে নেয় বার্সা। সঙ্গে মেসির চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব। বাকিটা ইতিহাস।

কিন্তু মেসির এই ঝলমলে ক্যারিয়ারের পথ-পরিক্রমা মোটেও সহজ ছিল না। এসেছে নানা বাধা-বিপত্তি। তবে লক্ষ্য অটুট থাকলে সবকিছুই সম্ভব। মেসি তা প্রমাণ করেছেন। যেখানে ভাগ্যটাও পাশে পেয়েছেন তিনি, সঙ্গে ছিল বাঁ পায়ের ঐশ্বরিক জাদু। আর হার না মানার মানসিকতা। শুনুন মেসির মুখেই, ‘আর্জেন্টিনা থেকে একটা স্বভাব আমি আমার সঙ্গে এনেছিলাম, সেটা হলো পরাজয়ের প্রতি ঘৃণা। পরাজয়; সেটা যে ক্ষেত্রেই হোক না কেন, আমি মানতে পারি না। এখন মনে হয়, ছোটবেলায় আমরা যখন রাস্তায় ফুটবল খেলতাম, তখন ভাই-কাজিনরা মাঝেমধ্যে ইচ্ছা করে হেরে যেত। তারা আমাকে জিতিয়ে দিত। কারণ জানত, আমি হেরে গেলে তাদের কপালে দুঃখ আছে। ১৩ বছর বয়সে যখন এখানে (ন্যু ক্যাম্প) খেলা শুরু করলাম, তখনো আমি হার মানতে চাইতাম না। সতীর্থরা যখন হেরে গিয়েও মেনে নিত, আমার কাছে খুব অবাক লাগত।’

মেসি নামের শব্দটি শুনলেই এখন সবার চোখে ভাসে আর্জেন্টিনার সান্তা ফে প্রদেশের সবচেয়ে বড় শহর রোসারিও। শহরের দক্ষিণে ব্যারিও লাস হেরাস পাড়া। ছিমছাম সবুজেঘেরা একটি বাড়ি। কিন্তু ফুটবল খেলার জায়গার অভাব। দুই বেড়ার মাঝে খানিকটা ফাঁকা জায়গায় ফুটবল নিয়ে মেতে উঠত ছোট্ট এক ছেলে। কিন্তু সেখানে জমত না খেলা। শুকনো, কাঁচা রাস্তাই ছিল ভরসা। দুই পাশে গোলপোস্টের কোনো রকম চিহ্ন এঁকে চলত ফুটবল খেলা। 

শিশু মেসি। ছবি : সংগৃহীত

মেসির বয়স যখন তিন কিংবা চার বছর, জন্মদিনে উপহার পেয়েছিলেন একটি ফুটবল। যে ফুটবল জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল ছোট্ট শিশুটির। জন্মদিন এলেই মেসি অপেক্ষা করতেন নতুন ফুটবলের জন্য। এ প্রসঙ্গে একবার মেসি বলেছিলেন, ‘খুব ছোটবেলায় আমি আমার প্রথম ফুটবলটা পেয়েছিলাম। তখন কতই-বা বয়স, তিন বা চার। কে যেন উপহার দিয়েছিল। সেদিন থেকে যেকোনো উপলক্ষে আমি একটা উপহারই চাইতাম- ফুটবল, হোক সেটা বড়দিন বা জন্মদিন। আমি ফুটবল জমাতাম। ঘরের বাইরে নিতাম না, যদি কেউ নষ্ট করে ফেলে, সেই ভয়ে।’

বাবা হোর্হে হোরাসিও মেসি কাজ করতেন স্টিল ফ্যাক্টরিতে। মা সেলিয়া মারিয়া পার্ট টাইম ক্লিনার। বড় দুই ভাই রদ্রিগো ও মাতিয়াস, ছোট বোন মারিয়া সল। পাঁচ বছর বয়সে মেসি স্থানীয় ক্লাব গ্র্যান্দোলির হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন। মেসির কোচ ছিলেন তার বাবা হোর্হে। এই ক্লাবের হয়ে মেসির পরিবারের অনেকেই খেলেছেন। স্মৃতি বেশ সতেজ মেসির, ‘আমার বাবা ছিলেন ক্লাবের কোচ। রবিবার সারা দিন কাটত গ্র্যান্দোলির সঙ্গে। পুরো পরিবার মিলে খেলতাম। হয়তো আমি খেলছি, বিপক্ষ দলে বড়দের মধ্যে আমার চাচাও আছেন। এভাবেই কেটে যেত সারা দিন।’ 

একেক দলে তখন খেলত সাতজন করে। মেসির প্রথম ম্যাচ খেলার ঘটনা সবার জানা। মেসির মুখেই শুনন তা, ‘প্রথম ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম আমার দাদির কারণে। গ্র্যান্দোলির দলে আমার মতো ছোট্ট ছেলের জায়গা ছিল না। এক দিন বড় একজনকে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে দাদি আমাকে এগিয়ে দিলেন। কোচ শুরুতে রাজি ছিলেন না, পরে আপত্তি করেননি।’ ছোট্ট মেসির ড্রিবলিং দেখে সেই কোচের চোখ ছানাবড়া। চোখের নিমিষেই মেসির অসাধারণ সব কারিকুরি নজর কেড়েছিল সবার।

২০০৪-২০২১ পর্যন্ত দীর্ঘ ১৭ বছর খেলেছেন স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার জার্সিতে। ছবি : সংগৃহীত

কোনো ফুটবলার মেসির নায়ক ছিলেন না। তবে ভক্ত ছিলেন ম্যারাডোনার। ভবিষ্যতে কী হতে চাও, এমন প্রশ্নে ছোট্ট মেসি একবার বলেছিলেন, ‘আমি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলতে চাই, সব আর্জেন্টাইনের মতো আমিও ম্যারাডোনার ভক্ত ছিলাম। মুগ্ধ হয়ে তার খেলার ভিডিও দেখতাম, সেই স্মৃতি এখনো মনে পড়ে। পাবলো আইমার যখন প্রথম এলেন, তার খেলাও খুব ভালো লাগত। কিন্তু তারা কেউ আমার আদর্শ ছিলেন না। ভাই আর কাজিনদের সঙ্গে রাস্তায় খেলে আমি বড় হয়েছি। তাদের দেখেই শিখেছি। আমার পরিবার আমাকে বাঁচার কৌশল শিখিয়েছে, কিন্তু ফুটবলের কৌশল আমি শিখেছি নিজে নিজে।’

গ্র্যান্দোলির সঙ্গে বছর দেড়েক থাকার পর নিওয়েলসের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন মেসি। সমস্যা বাধে সেখানেই। ১১ জনের দলে আর সবার চেয়ে মেসি ছিলেন অপেক্ষাকৃত ছোট। কিন্তু প্রসঙ্গ যখন ফুটবল, এই ঘাটতি কখনোই মেসিকে ভাবাত না। কিন্তু খেলা শুরুর আগে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা তাকিয়ে থাকতেন, তাতে অস্বস্তি বাড়ত তার। কিন্তু খেলা শুরু হলে মেসির পায়ে বল আসার পর দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যেত সবার।

ঠিক কী কারণে মেসির আকৃতি ছোট। নিওয়েলস তাই মেসিকে পাঠাল ক্লিনিকে। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানালেন, মেসির শরীরে একটা অবর্ধনশীল হরমোন আছে। মেসি বেড়ে উঠছিলেন, তবে স্বাভাবিকের চেয়ে ধীরগতিতে। ডাক্তার বললেন, চিকিৎসা নিলে মেসি অন্যান্য ছেলেমেয়ের মতো বেড়ে উঠতে পারবে। যখন চিকিৎসা শুরু হলো, মেসির বয়স বড়োজোর ১১ কি ১২। প্রায় এক বছর চিকিৎসার ব্যয় মেসির বাবা বহন করেন। মাসে ৯০০ মার্কিন ডলারের খরচ কুলিয়ে উঠতে পারেনি মেসির পরিবার। দুঃসময়ের মুখোমুখি তখন হোর্হে। তখনই এগিয়ে আসে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা। ঐতিহাসিক ন্যাপকিন চুক্তিতে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেন মেসি। রোসারিও ছেড়ে মেসির পরিবারের নতুন ঠিকানা বার্সেলোনার ন্যু ক্যাম্প। 

চলবে....

ফাইনালে কোহলি জ্বলে উঠবেন বিশ্বাস রোহিতের

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ০৫:১১ পিএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ০৫:১১ পিএম
ফাইনালে কোহলি জ্বলে উঠবেন বিশ্বাস রোহিতের
ছবি : সংগৃহীত

২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরের শিরোপা ঘরে তোলার পর দ্বিতীয়বার এই সংস্করণের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ভারত। যদিও ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতার পর আইসিসির বেশ কয়েকটি বিশ্ব আসরের ফাইনালে পা রাখার পরও শিরোপার স্বাদ নিতে পারেনি দলটি।

ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে পা রাখার পর পুরস্কার বিতরণীতে রোহিতকে দিতে হয়েছে এবার কি ভারত পারবে - এমন প্রশ্নের জবাব ‘আমরা নিজেদের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করব। দল ভালো অবস্থায় আছে। আশা করি, ফাইনালে আমরা ভালো খেলব।’

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দাপুটে খেলে ফাইনালে ওঠার পরও দুশ্চিন্তা কাটছে না দলের বিরাট কোহলিকে নিয়ে। আসরের শুরু থেকেই চলছে রান খরা। যদিও ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা কোহলির ফর্ম নিয়ে খুব একটা যে চিন্তিত নন সেটি স্পষ্ট হয়েছে তার কথায়, ‘আমরা তার ক্লাস সম্পর্কে জানি। ১৫ বছর ধরে খেললে ফর্ম কোনো সমস্যাই নয়। সম্ভবত ফাইনালের জন্য জমিয়ে রেখেছে।’

দুঃসময়ে কেবল অধিনায়ক নয়, ভারতের এই তারকা ব্যাটার পাশে পাচ্ছেন দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড়কেও। তিনিও কথা বলেছেন রোহিতের সুরেই, ‘বিরাটকে আপনারা জানেন। একটু ঝুঁকিপূর্ণ ক্রিকেট খেললে সব সময় সফল হওয়া যায় না। আজও (গতকাল ম্যাচে) যেমন, সে একটি ছক্কা মারার পর ভাবলাম ম্যাচের গতিপ্রকৃতি হয়তো ঠিক করে দেবে। কিন্তু তার দুর্ভাগ্য বলটি একটু সিমের ওপর মুভমেন্ট করেছে। তবে ইন্টেন্ট ভালো লেগেছে।’

দ্রাবিড় এরপর ফাইনালে কোহলির রানে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে বলেছেন, ‘এমন কিছু বলতে চাই না, যাতে হিতে বিপরীত হয়; তবে আমার মনে হয় বড় কিছুই আসছে। তার আচরণ ভালো লাগে এবং মাঠে যেভাবে নিজেকে নিংড়ে দেয়—আমার মনে হয় তার এটা (রানে ফেরা) প্রাপ্য।’

আগামীকাল বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৩০ মিনিটে ব্রিজটাউনে হতে যাওয়া ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে ভারত।

তাসকিনের বিশ্বাস দুই সিনিয়রের অফফর্ম ভুগিয়েছে

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ১২:৫২ পিএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ০২:২০ পিএম
তাসকিনের বিশ্বাস দুই সিনিয়রের অফফর্ম ভুগিয়েছে
ছবি- সংগ্রহীত

দীর্ঘ ভ্রমণের পর আজ সকালে ঢাকায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ দল। বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ থাকলেও শেষ পর্যন্ত সুপার এইট থেকে বাজে বাংলাদেশের বিদায় ঘণ্টা। গ্রুপপর্বের তিন জয়ের পর আর কোনো ম্যাচ নিজেদের পক্ষে নিতে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দেশে ফিরে পেসার তাসকিন আহমেদ বলেন, ‘জন সিনিয়রের ফর্মে না থাকা অবশ্যই প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু মাঠের বাইরে প্রভাব পড়েনি। ৪৭ দিন একসঙ্গে ছিলাম, সবাই একসঙ্গে ছিলাম। অফ দ্য ফিল্ডে সব ভালো ছিল। দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়রা অফ ফর্মে থাকলে ওই দলে সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক। আশা করছি দ্রুত সামনে এসব কাটিয়ে উঠব।’

বিশ্বকাপে ব্যাটারদের পারফরম্যান্স নিয়ে হয়েছে তুমুল সমালোচনা। এই বিষয়ে তাসকিন বলেন, ‘ব্যাটিং বিপর্যয় যেটা, আসলে সত্যি বলতে বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে যুক্তরাষ্ট্রে যখন খেলা হয়েছে, তখন কিন্তু ব্যাটারদের ফেভার খুব কম ছিল। আপনারা যদি স্ট্যাট চেক করেন, অন্যান্য দেশের ব্যাটার, বড় বড় দলগুলোও স্ট্রাগল করেছে। ওখানে বোলারদের একটু অ্যাডভান্টেজ ছিল।’ 

বিশ্বকাপে নজর কেড়েছেন রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান সাকিবের মতো তরুণরা। বোলিং ইউনিটে ভর করে বাংলাদেশ শিবিরে আসে তিন জয়। তাসকিন বলেন, ‘মাশাআল্লাহ তানজিম সাকিব, রিশাদ এরা সেরা পাঁচ উইকেটশিকারীর মধ্যে ছিল। রিশাদ এখনও আছে। ওভারঅল ভালো করছে মাশাআল্লাহ। এটা খুব পজেটিভ সাইন বাংলাদেশ থেকে ফিউচার স্টাররা উঠে আসবে। অলরেডি বিশ্বকে বোঝানো হয়েছে যে আমাদের সবার মধ্যে ডিফারেন্ট অ্যাবেলেটি আছে।’

জয়ের খোঁজে ব্রাজিল

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ১১:৩০ এএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ১১:৩০ এএম
জয়ের খোঁজে ব্রাজিল
ছবি: সংগৃহীত

শুরুটা হতাশায় মোড়ানো। জয় দূরে থাক প্রতিপক্ষের গোলপোস্টই চিনতে পারেনি ভিনি-রদ্রিগোরা। ফলে কোস্টারিকার সঙ্গে আসেনি জয়। ম্যাচ গোলশূন্য ড্র। কোপা আমেরিকা ফুটবলে শুরুর হতাশা দূর করতে মরিয়া সেলেকাও শিবির। ডি গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে শনিবার (২৯ জুন) সকালে মাঠে নামবে ব্রাজিল। প্রতিপক্ষ প্যারাগুয়ে। একইদিন কলম্বিয়া মুখোমুখি হবে কোস্টারিকার।

চোটের কারণে ব্রাজিলের হয়ে খেলতে পারছেন না নেইমার। তাই বলে ব্রাজিল দলে তারকার অভাব নেই। তারপরও শক্তি-সামর্থ্য আর জ্বলজ্বলে ইতিহাস নিয়েও শুরুটা ম্যাড়ম্যাড়ে ড্র। দলটি পেরে ওঠেনি কোস্টারিকার সঙ্গে। এবার ব্রাজিলের সামনে লাতিনেরই দল প্যারাগুয়ে। যাদের শুরুটা হয়েছে হার দিয়ে। ২-১ গোলে তারা হেরেছে কলম্বিয়ার কাছে।

প্যারাগুয়ের সঙ্গে হেড টু হেডে অনেক এগিয়ে ব্রাজিল। দুই দল মোকাবিলা করেছে ৮৩ ম্যাচ। সেখানে সিংহভাগ ৫১ ম্যাচে জয় ব্রাজিলের। প্যারাগুয়ে জিতেছে ১৩টিতে। আর ড্র হয়েছে ১৯ ম্যাচ। ফলে শনিবারের ম্যাচেও অনুমিতভাবে এগিয়ে থাকছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

কোস্টারিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ব্রাজিল দাপট ছিল বেশ। ৭৪ শতাংশ বল দখলে রেখেছিল তারা। লক্ষ্যে শট ছিল ১০টি। সেখানে কোস্টারিকা পারেনি একটিও লক্ষ্যে রাখতে। দুই দলের ফাউল (১১) সমান হলেও ৯টি কর্নার আদায় করেছিল সেলেকাওরা। বিপরীতে কোস্টারিকার কর্নার ছিল মাত্র একটি। ব্রাজিল কোচ জুনিয়ার দরিভাল প্রথম ম্যাচের ভুলত্রুটি কাটিয়ে সামনের দিকে তাকাতে চাচ্ছেন। 

নক আউট পর্বে যেতে হলে এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প নাই। ২০১৫ সালের কোপা টুর্নামেন্টে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়েছিল ব্রাজিল। গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচে ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্রয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে হাইতিকে ৭-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল লাতিন পরাশক্তিরা। ২০০৪ সালের পর থেকে প্যারাগুয়ের কাছে না হারা ব্রাজিলের চোখ তাই বড় জয়ে।

ডি গ্রুপের অপর ম্যাচে শনিবার সকালে মুখোমুখি হবে কলম্বিয়া ও কোস্টারিকা। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে জয়ে পয়েন্ট তালিকায় সবার উপরে অবস্থান কলম্বিয়ার। ব্রাজিলের সঙ্গে ড্র করায় তালিকায় তৃতীয় স্থানে কোস্টারিকা। হেড টু হেডে অনুমিতভাবে এগিয়ে থাকছে কলম্বিয়া। দুই দল এখন পর্যন্ত মোকাবিলা করেছে ৫০ ম্যাচ। সেখানে ২৪টি জয় পেয়েছে কলম্বিয়া। বিপরীতে কোস্টারিকা পেয়েছে ১৮টি জয়। ড্র হয়েছে ৮ ম্যাচ। 

সম্ভাব্য একাদশ
ব্রাজিল: অ্যালিসন, দানিলো, মিলিতাও, মারকুইনহস, অ্যারানা, গুইমারাস, লুইজ, রাফিনহা, পাকুয়েতা, রদ্রিগো, ভিনিসিউ।

প্যারাগুয়ে: মরিনিগো, ভেলাকোয়েজ, বালবুয়েনা, আলদ্রেতে, এসপিনোযা, রোযাস, কিউবাস, কাবাল্লেরো, রোমেরো, আরসে, এনসিসো।

চোকার্সমুক্ত হয়ে স্বপ্নের ফাইনালে দ. আফ্রিকা

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ১১:১৪ এএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ০২:০৩ পিএম
চোকার্সমুক্ত হয়ে স্বপ্নের ফাইনালে দ. আফ্রিকা
আফগানিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপে একের পর এক আঘাতের মাঝখানে এভাবেই আনন্দে মাতে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষকে শাসন করে প্রথমবারের মতো আইসিসি ইভেন্টের ফাইনালে উঠেছে প্রোটিয়ারা। ছবি: সংগৃহীত

অবশেষে হলো স্বপ্নপূরণ। দীর্ঘ অপেক্ষার হলো অবসান। স্বপ্নের ফাইনালের টিকিট পেল দক্ষিণ আফ্রিকা। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে আফগানিস্তানকে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপার মঞ্চে জায়গা করে নেয় দলটি। বোলারদের অনন্য-অসাধারণ নৈপুণ্যে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালের মুখ দেখল তারা। কিংবদন্তি কেপলার ওয়েসেলস, হ্যান্সি ক্রনিয়ে, গ্রায়েম স্মিথ, এবি ডি ভিলিয়ার্স, ফ্যাফ ডু প্লেসি কিংবা হালের টেম্বা বাভুমার অধিনায়কত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে একাধিকবার খেলেও শিরোপার মঞ্চে কখনো পা পড়েনি।  এইডেন মার্করামের অধীনে অবশেষে স্বপ্নের ফাইনালে পা রাখল তারা। এর মধ্য দিয়ে চোকার্স অপবাদে কুলুপও এঁটে দিল।

‘দক্ষিণ আফ্রিকা আর সেমিফাইনাল’ শব্দ দুটি যেন একে অপরের পরিপূরক। বিশ্বকাপমানেই সেমিফাইনালে প্রোটিয়ারা। তারপরও হযবরল হারে শেষ চার থেকে বিদায়। এতদিন এই ছিল দলের নিয়তি। ১৯৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে যার যাত্রা শুরু। সবশেষ ২০২৩ বিশ্বকাপেও এমন ভাগ্যই বরণ করেছিল। ওয়ানডের মতো ২০০৭ এবং ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দলটির শেষ যাত্রা ছিল ওই সেমিফাইনাল। এভাবে বারংবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে নিতে তাদের কপালে জোটে চোকার্স অপবাদ। সেই অপবাদ ঘোচাতে দীর্ঘ ৩২ বছর লাগল তাদের।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবার বড় জয় দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। লঙ্কানদের মাত্র ৭৭ রানে গুটিয়ে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয়। পরের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হয় দলটি। প্রথম ব্যাট করে ডাচরা মাত্র ১০৩ রান তুলতে সমর্থ হয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই মামুলি পুঁজি তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে। এক সময় ম্যাচের দৃশ্যপট দেখে মনে হচ্ছিল হারতে যাচ্ছে প্রোটিয়ারা। কিন্তু ডেভিড মিলার ৭ বল হাতে রেখে একাই ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। ৪ উইকেটে জেতে দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপ পর্বের তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের সঙ্গেও একই অবস্থা। প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ১১৩ রান করে দলটি। বাংলাদেশ তাড়া করতে নেমে ১০৯ রানে থামে। ৪ রানে ম্যাচ জেতে দক্ষিণ আফ্রিকা। টাইগারদের বিপক্ষে হারা ম্যাচটি আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্তে জেতে প্রোটিয়ারা। গ্রুপ পর্বে চতুর্থ ও শেষ ম্যাচে আরও নাটকীয়তার জন্ম দেয়। নেপালের কাছ থেকে মাত্র ১ রানে ম্যাচ জেতে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১১৫ রান করে শুরুতে দলটি। নেপাল থামে ১১৪ রানে।

গ্রুপ পর্বের মতো সুপার এইটেও জয় পেতে বেগ পোহাতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১৮ রানে প্রথম ম্যাচটি জেতে। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় মাত্র ৭ রানের। আর সুপার এইটের শেষ ম্যাচটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বৃষ্টি আইনে ৩ উইকেটের ব্যবধানে জেতে। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ম্যাচ থেকেই মনে হচ্ছিল এবার উল্টো রথে হাঁটতে শুরু করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট। কারণ এই দলের সঙ্গে তাদের ক্রিকেটীয় পূর্বপুরুষ, পূর্বসূরিদের কিছুতেই মেলানো যাচ্ছিল না। যে দলটি বছরের পর বছর, বিশ্বকাপের পর বিশ্বকাপ (হোক সেটা ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ) প্রতিপক্ষের কাছে হাস্যকরভাবে, বাজেভাবে হেরে বিদায় নিয়েছে। পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ খেলে সেমিফাইনালে এসে নেতিয়ে পড়েছে। কিংবা হট ফেবারিট হিসেবে টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে প্রথম রাউন্ড থেকে নিজেদের গোঁজামিল হিসেবের গ্যাঁরাকলে পড়ে বিদায় নিয়েছে। পায়নি প্রকৃতির অনুকম্পা। সে দলই চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেখাল অন্যরূপ। বিশ্বকাপে হাস্যোপ্রদ বিদায়ের রেকর্ড গড়ে চোকার্স উপাধি পাওয়া দলের গা থেকে অবশেষে মুছে গেল চোকার ট্যাগ।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসরে ফাইনালে উঠবে দক্ষিণ আফ্রিকা- এমন ভাবনা কারোর মনেই ছিল না। খোদ প্রোটিয়াদের মনে ছিল কি না অনেকের সন্দেহ! কারণ সাদামাটা এক দল নিয়ে এবারের আসরে অংশ নেয় দলটি। সেই দলই শেষ পর্যন্ত করল বাজিমাত। ব্যাটিংয়ে সেভাবে আলো ছড়াতে না পারলেও বোলারদের অসাধারণ নৈপুণ্যে শিরোপা মঞ্চে উঠে আসে তারা। বৃহস্পতিবার আফগানিস্তান ম্যাচেও অন্যরকম কিছুর প্রত্যাশা করছিল ক্রিকেট বোদ্ধা থেকে সাধারণ সমর্থকরা। কারণ এবারের আসরে যেভাবে খেলছিল আফগানরা, তাতে আফগান রূপকথা, আফগানিস্তানের ইতিহাস রচনার প্রত্যাশা করেছিল সকলে! প্রোটিয়াদের হারিয়ে ফাইনালে খেলবে আফগানিস্তান- এমন ভাবনা ভাবার লোকের সংখ্যাই ছিল বেশি। আরও একবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেবে প্রোটিয়ারা। চির অপবাদ চোকার্স গায়ে ক্রিকেটে থেকে যাবে দলটি। তবে সেসব আর হয়নি। ক্রিকেট বিধাতা এবার দু’হাত ভরে বর দিয়েছে তাদের। 

শনিবার (২৯ জুন) টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল। গ্রুপ পর্ব থেকে সুপারএইট এরপর সেমিফাইনাল। কোনো ম্যাচ না হেরে অপরাজিত থেকে ফাইনালে উঠে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফাইনালে অপরাজিত থাকতে পারবে তো এইডেন মার্করামের দল? 

‘মায়ের খুশিটাই আমার খুশি’

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ১০:৪৪ এএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ১০:৫০ এএম
‘মায়ের খুশিটাই আমার খুশি’
সরাসরি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা সাগরকে সংবর্ধনা দিয়েছে বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশন। এ সময় তার পাশে ছিলেন চা দোকানি মা সেলিনা। ছবি: সংগৃহীত

এবারের ঈদুল আজহার দিনে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে অভাবনীয় এক সাফল্যের আনন্দ এনে দিয়েছিলেন আর্চার সাগর ইসলাম। তুরস্কের আন্তালিয়ায় ‘২০২৪ ফাইনাল ওয়ার্ল্ড কোটা টুর্নামেন্ট’-এ সেমিফাইনালে ওঠার মধ্যে দিয়ে সরাসরি প্যারিস অলিম্পিকের টিকিট নিশ্চিত করেন তিনি। পরে প্রতিযোগিতার ফাইনালে ওঠে জিতে নেন রুপা। বাংলাদেশের মাত্র তৃতীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকে খেলবেন সাগর। তুরস্ক থেকে দেশে ফেরার পর বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা দিয়েছে আর্চারি ফেডারেশন। শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাগরের মা সেলিনাও। কীভাবে তিনি চায়ের দোকান করে ছেলেকে এত দূর এনেছেন, মঞ্চে সেই গল্প তুলে ধরছিলেন সাগর নিজেই। অলিম্পিকে খেলার আনন্দের চেয়েও মাকে খুশি করতে পারার আনন্দটাই বেশি ছিল তার।

সাগরের সাফল্যকে অভাবনীয়ই বলতে হবে। এর আগে গলফার সিদ্দিকুর রহমান ও আর্চার রোমান সানা বাংলাদেশ থেকে কোটা প্লেস অর্জনের মাধ্যমে সরাসরি অলিম্পিকে খেলেছেন। ২০১৬ অলিস্পিকে সিদ্দিকুর ও ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন রোমান। এই দুজন যখন সরাসরি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন, তখন দুজনই নিজ নিজ খেলায় প্রতিষ্ঠিত তারকা। সাগর সেখানে একেবারেই তরুণ। মাত্র ১৮ বয়স তার। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছেন একাদশ শ্রেণিতে।

রাজশাহী থেকে প্যারিসের পথে তার যাত্রার গল্পটা হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতোই। ২০০৯ সালে তার বাবা মারা যান। টেম্পো মিস্ত্রি হিসেবে সংসার চালাতেন তিনি। স্বামীর মৃত্যুর পর সেলিনা চার সন্তানকে মানুষ করতে অনেক সংগ্রাম করেন। ভিটে মাটি বলতে কিছু নেই তাদের। এখনো ভাড়ায় থাকেন। রাজশাহী বঙ্গবন্ধু কলেজ মোড়ে চায়ের দোকান চালিয়ে ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন তিনি। মঞ্চে মাকে পাশে রেখে সাগর শোনালেন সেই গল্প, ‘তিন বছর বয়সে আমার বাবা মারা গেছেন। মা চায়ের দোকান করে আমাদের চার ভাইবোনকে বড় করেছেন। সবাইকে কলেজ পাস করিয়েছেন, বড় ভাই, দুই বোনকে বিয়ে দিয়েছেন। আমি খেলাধুলায় এসেছি। মা কখনো বুঝতে দেননি আমাদের অর্থনৈতিক দিকটা অনেক দুর্বল। যখন যা চেয়েছি, সেটাই পেয়েছি। মা পেছন থেকে সব সময় সাপোর্ট দিয়ে গেছেন। বলেছেন, তুমি শুধু খেল। তোমার কি লাগে বলো। তোমার কোনো টেনশন নেই।’

খেলার প্রতি ছোটবেলা থেকেই টান ছিল সাগরের। ছেলের এই আগ্রহ দেখেই রাজশাহীর এক আর্চারি ক্লাবে সাগরকে ভর্তি করান মা। এরপর সেখান থেকে বিএসপিতে সুযোগ করেন। এখন জাতীয় দলের হয়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। ২৬ জুলাই শুরু হতে যাওয়া প্যারিস অলিম্পিকে খেলবেন তিনি। যে অলিম্পিকের মঞ্চে পা রাখা যেকোনো ক্রীড়াবিদের জন্যই স্বপ্ন।

গত ১৭ জুন অলিম্পিকের পদক নিশ্চিত হওয়ার পর তুরস্ক থেকে সাগর ফোন করেন মাকে। তবে তার ফোনের আগেই মার কাছে পৌঁছে গিয়েছিল ছেলের সাফল্য। সাগর সেই মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘মার কথা শুনে তখন মনে হচ্ছিল আমি সফল ছেলে। মা আমার জন্য এত কষ্ট করেছেন। আমার প্রথম চাওয়াই তো হলো আমার মা যেন খুশি থাকেন। মার খুশিটাই আমার খুশি। আমি সব সময় চেষ্টা করি আমার মা যেন খুশি থাকেন।’

আর ছেলের সাফল্যে গর্বিত মা বলেন, ‘আপনারা আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। আমার ছেলেকে আল্লাহ যেন অলিম্পিকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসার তৌফিক দান করেন। আমার ছেলে যেন আপনাদের সবার মুখ উজ্জ্বল করতে পারে, এটাই আমার প্রত্যাশা।’ এই যে ছেলেকে এত কষ্ট করে মানুষ করেছেন, আজ সেসবের কোনো কিছুকেই কষ্ট মনে করছেন না তিনি। ‘কষ্টের কথা আমার মনে নেই। কষ্ট আমি ভুলে গেছি। মা যেমন একজন সন্তান জন্ম দিয়ে কষ্টের কথা মনে রাখে না। আমি যত কষ্ট করেছি আমার সন্তানদের জন্য, আজ সব ভুলে গেছি আমি। আমি খুব আনন্দিত ও গর্বিত।’

এদিন বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের পৃষ্ঠপোষক সিটি গ্রুপের পক্ষ থেকে সাগরকে ৫ লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার দেওয়া হয়। সাগর বলছিলেন, ‘মার সঙ্গে কথা বলে যেটা ভালো হবে, সেটাই করব।’ আর মায়ের কথা, ‘এটা সাগরের কাজে লাগুক। আমার ছেলে অর্জন করেছে, আমার ছেলের কাজে লাগুক।’ সরাসরি অলিম্পিকে খেলা নিশ্চিত করে এখন অলিম্পিক পদক জয়েরও প্রত্যাশা রাখছেন সাগর, ‘স্বপ্ন চূড়ায় থাকবে। ইনশা আল্লাহ যেন গোল্ড মেডেল নিয়ে আসতে পারি।’