![সহানুভূতির নাটক করেছিলেন মিন্টু ও বাবু](uploads/2024/06/15/mp anarkkkk-1718465147.jpg)
এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে নিজেদের দায় এড়াতে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করীম মিন্টু এবং ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবু নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন। তাদের চতুরতায় অনেকেই হয়েছেন বিস্মিত। হত্যার পর তাদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয়েছে তারা আনারের বড় শুভাকাঙ্ক্ষী। আনার নিখোঁজ হওয়ার পর এই দুজন আনারের বাসায় একাধিকবার যাওয়া-আসা করেন এবং পরিবারকে সান্ত্বনা দেন। এ ছাড়া আনার হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় থাকার কারণে কেউ মনেই করতে পারেননি, তারা দুজন পেছন থেকে এই খুনে নেপথ্যে ভূমিকা পালন করেছেন।
স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মনে এই ধারণা তৈরি হয়েছিল, এই হত্যাকাণ্ডে আর যা-ই হোক মিন্টু ও গ্যাস বাবুর সংশ্লিষ্টতা নেই। কিন্তু গত ১ সপ্তাহের গতিবিধি তাদের খুব একটা ভালো ছিল না। তবে এ খুনের ঘটনায় কাউকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখেনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ঝিনাইদহ জেলা ও কালীগঞ্জ থানার নিম্নস্তরের নেতা থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন নেতা পর্যন্ত সবার ওপর নজরদারি শুরু করে। প্রযুক্তির মাধ্যমে কল রেকর্ডের তথ্যও সংগ্রহ করে। আনার হত্যার সঙ্গে কারও রাজনৈতিক বিরোধ ছিল কি না অথবা আর্থিক লেনদেনসহ সব বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত শুরু করেন গোয়েন্দারা। অনেক নেতার ব্যক্তিগত বায়োডাটাও সংগ্রহ করা হয়। আর এতেই ফেঁসে গেছেন এই দুই নেতা। সহানুভূতি প্রদর্শনের নাটক করেও তারা পার পাননি।
আনার হত্যার মাস্টার মাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের পর এই দুজনের তথ্য যাচাই-বাছাই করে এ খুনের সঙ্গে জড়িত অন্যদের ধরতে মাঠে কাজ করছেন মামলার তদন্তকারীরা। শাহীনকে ফেরাতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলকে একটি চিঠি দিয়েছে। ইন্টারপোলের অফিস এই চিঠিটি রিসিভ করেছে এবং তারা বাংলাদেশের পুলিশকে জানিয়েছে, আমেরিকায় শাহীন কোথায় অবস্থান করছেন এবং এখন তার গতিবিধি কী তারা তা দ্রুতই জানাবে।
গত ১৩ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। ২২ মে আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ এ মামলায় গ্রেপ্তার করেন শিলাস্তি, আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ও তানভীর ভূঁইয়া ওরফে ফয়সাল সাজি। পরে আদালত শিলাস্তিসহ মোট তিনজনকে আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
প্রথম দফায় রিমান্ডে কিছু তথ্যের ঘাটতি থাকার কারণে ডিবি পুলিশ গত ৩১ মে পুনরায় আদালতে আসামিদের হাজির করে আবার রিমান্ডের আবেদন করে। শিমুল ভূঁইয়া তার জবানবন্দিতে গ্যাস বাবুর কথা বলেন। গ্যাস বাবু আবার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর খুনের জড়িত হওয়ার কথা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের জানান।
পরে গত সপ্তাহে ধানমন্ডি এলাকা থেকে মিন্টুকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মিন্টুকে বৃহস্পতিবার ডিবি পুলিশ আনার হত্যাকাণ্ডের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তার আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মিন্টু এখন ডিবির হেফাজতে রয়েছেন।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (এনসিবি) হায়দার আলী চৌধুরী শনিবার বিকেলে খবরের কাগজকে জানান, শাহীনের অবস্থান জানার জন্য আমেরিকায় ওয়াশিংটনের ইন্টারপোল অফিসে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে আনার হত্যা মামলার তদন্তের মুখ্য সমন্বয়কারী ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গতকাল বিকেলে বলেন, ‘শাহীনের ব্যাপারে তথ্য জানতে আমরা বাংলাদেশে আমেরিকার দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, আনার হত্যাকাণ্ড যেহেতু কলকাতায় হয়েছে, এ জন্য তার পরিবারের সদস্যরা দেশে নির্দিষ্ট কাউকে সন্দেহ করতে পারেননি। তবে তার সঙ্গে কার কার বিরোধ ছিল সেই বিষয়টি তারা পুলিশকে জানিয়েছেন। এমপি আনার নিখোঁজ হওয়ায় ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন সারির নেতা আনারের পরিবারের কাছে এসেছিলেন। আবার অনেকেই আতঙ্কে গা-ঢাকা দেন। তবে শুরু থেকেই পুলিশ সবাইর ওপর নজরদারি করে।
সূত্র জানায়, এ খুনের মাস্টার মাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন কলকাতা থেকে বাংলাদেশে আসেন। এরপর বাংলাদেশের বিমানবন্দর দিয়ে আমেরিকা পালিয়ে যান। আমেরিকা থেকে তাকে ফেরানোর জটিলতা হচ্ছে বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার কোনো বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই।
তবে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বন্দি চুক্তি বিনিময় থাকার কারণে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে কলকাতার পুলিশের কাছে একটি অনুরোধ করা হয়েছে। আর সেই অনুরোধ হচ্ছে, কলকাতা পুলিশ যাতে শাহীনকে ভারতে ফিরিয়ে আনে। যেহেতু বাংলাদেশ ও ভারতের বন্দি চুক্তি বিনিময় আছে, সেহেতু তখন তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা যাবে। কলকাতা পুলিশ বাংলাদেশের পুলিশকে আশ্বাস দিয়েছে, শাহীনকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তারা শতভাগ চেষ্টা করবে। তাকে ফিরিয়ে আনলে পরে বাংলাদেশের পুলিশের কাছে ফিরিয়ে দেবে।
সূত্র জানায়, মিন্টুকে গ্রেপ্তার করার মামলার তদন্তকারীরা চাপে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তার পক্ষে তদবির অব্যাহত রয়েছে। জানা গেছে, এই খুনের সঙ্গে জড়িত ঝিনাইদহ জেলার সন্দেহভাজন নেতাদের ওপর নজরদারি রয়েছে। ঈদের পর আবার তারা ম্যারাথন অভিযান চালাবেন।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, ‘ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত সঠিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তদন্তে কারও কোনো হস্তক্ষেপ বা কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই। স্বাধীনভাবে আমরা তদন্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’ গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির সদর দপ্তরে এক সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মামলার তদন্তে কারও হস্তক্ষেপ নেই। আমরা স্বাধীনভাবে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।’