বাবা মানেই পরম নির্ভরতা। সন্তানের যাবতীয় আবদার-আহ্লাদ যেন বাবাকে ঘিরে। হাজারও সমস্যায় সন্তানের জীবন যখন অন্ধকারে উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দেওয়া জাহাজের মতো, তখন বাবা যেন সেখানে একমাত্র বাতিঘর। প্রখর রোদ্দুরে ছায়াদানকারী বটবৃক্ষের মতো হন বাবারা।
কিন্তু সন্তানের জন্য নিজের জীবনের পুরোটাই উৎসর্গ করা এই বাবারা চিরকাল থেকে যান আড়ালে। বাবাদের সম্মান জানাতে, তাদের ভালোবাসা, আত্মত্যাগ ও পরিশ্রমের স্বীকৃতি জানাতে প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় বাবা দিবস। মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ণ, এটি বোঝানোর জন্যই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিবসটি ঘটা করে পালন করা হয়ে থাকে।
১৬ জুন বিশ্বের ১১১টি দেশে পালিত হবে বাবা দিবস। তবে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ সেপ্টেম্বরের প্রথম রবিবার বাবা দিবস পালন করে থাকে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বাবা দিবস পালনের প্রচলন হয়। তবে প্রথম কবে বাবা দিবস পালন করা হয়, এটি নিয়ে রয়েছে মতানৈক্য। অনেকের মতে, ১৯০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় চার্চে প্রথম বাবা দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টে প্রথম ৫ জুলাই দিবসটি পালন করা হয়।
অনেকের মতে, ১৯১০ সালের ১৯ জুন প্রথমবারের মতো বাবা দিবস পালন করা হয়। বাবা দিবস সম্পর্কে সর্বাধিক প্রচলিত মতবাদ হলো, ১৯০৯ সালে সনোরা স্মার্ট ডড নামের এক নারী বাবা দিবসের স্বীকৃতির জন্য সোচ্চার হয়ে ওঠেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে সনোরার মা ষষ্ঠ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। পরিবারে সনোরাই ছিলেন একমাত্র কন্যা। পূর্ব ওয়াশিংটনের এক গ্রামের ফার্মে এর পর থেকে তার বাবা নবজাতক ও আরও পাঁচটি সন্তান মানুষ করার কঠিন দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। সনোরা বড় হওয়ার পর অনুভব করলেন, ছয়টি সন্তান একা একা মানুষ করতে কী ভীষণ পরিশ্রমই না তার বাবাকে করতে হয়েছে।
সনোরা তার বাবাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। মা দিবসের এত আয়োজন দেখে তিনি ভাবলেন, বাবা দিবস কেন বাদ থাকবে! বাবাদের জন্যও একটি দিবস থাকা প্রয়োজন, যেদিন মায়েদের মতো বাবাদেরও সম্মান জানানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রের স্পোকেন মন্ত্রিসভার কাছে তিনি তার পিতার জন্মদিন ৫ জুনকে বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব পাঠান। জুনের ৫ তারিখে বাবা দিবসের ঘোষণা না দিলেও তার প্রস্তাবের প্রশংসা করে জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকে বাবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর এক বছর পর ১৯১০ সালের ১৯ জুন পালন করা হয় বাবা দিবস।
এরপর ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন জুনের তৃতীয় রবিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেন। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রতিবছর জাতীয়ভাবে বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন। সেই থেকে বিশ্বজুড়ে বাবা দিবস পালন করা হচ্ছে।
শুরুটা ওয়াশিংটনে হলেও ধীরে ধীরে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এ দিবস। প্রতিবছর বিশ্বে ঘটা করে বাবা দিবস পালন করা হলেও বাংলাদেশে এই প্রচলন এখনো নতুন। অনেকেই বাবাকে শ্রদ্ধা জানাতে কেক কেটে পালন করেন এই দিন। কেউ কেউ ঘরোয়াভাবে আয়োজন করেন অনুষ্ঠানের। এদিন বাবাদের কী উপহার দেওয়া যায়, ভেবে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অনেক সন্তান। দিবসটি ঘিরে অনলাইন ও দোকানের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন উপহারসামগ্রীতে লোভনীয় ছাড় দেন।