![ঈদযাত্রা: যানজট নেই তবে ভাড়া বাড়তি, চাপ ট্রেনে](uploads/2024/06/16/Train-journey-1718511398.jpg)
ঈদযাত্রার চতুর্থ দিন শনিবার (১৫ জুন) সড়কপথের যাত্রীদের যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। তবে উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমাঞ্চল আর দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি স্থানে গাড়ির বেশ জটলা হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তবে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন মালিকরা সুযোগ বুঝে ভাড়া বাড়িয়ে নিয়েছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। নিরুপায় হয়ে তারা খোলা ট্রাক ও পণ্যবাহী পরিবহনে ঈদযাত্রা করেন।
এদিকে আন্তনগর রেলযাত্রায় মোটামুটি স্বস্তি থাকলেও মেইল ও কমিউটার ট্রেনের টিকিট পেতে এদিন কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এ ছাড়া ২৫ শতাংশেরও বেশি স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে আন্তনগর ট্রেনের কাউন্টারগুলোতে।
খোলা ট্রাকে বাড়ি যাচ্ছেন মানুষ, গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া
ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব এলাকায় শনিবারও যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। বঙ্গবন্ধু সেতুতে গত শুক্রবার রাতে একাধিকবার টোল আদায় কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তার প্রভাব পড়ে শনিবার সকালে। এতে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পাড় থেকে ধলাটেংগর এলাকা পর্যন্ত সাত কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ওসি মীর মো. সাজেদুর রহমান জানান, এই যানজট ছিল বেলা ১১টা পর্যন্ত। পরে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
উত্তরের একটি জেলায় যাচ্ছিলেন খবরের কাগজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শাহনাজ পারভীন এলিস। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব এলাকায় দুপুর ১২টা অবধি যানজট লেগেছিল। উত্তরের ঘরমুখী কয়েকজন যাত্রী তাকে জানান, উত্তরের পথে বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এতে নিরুপায় হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ খোলা ট্রাকে বাড়ির পথে রওনা হন।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে স্বস্তি ফিরেছে শনিবার। কাঁচপুর থেকে আড়াইহাজারের পুরিন্দাবাজার পর্যন্ত প্রায় ২১ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে স্টেশন ও চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প চলমান। এর ফলে যাত্রামুড়া, বরাব, রূপসী, তারাব ও বরপা এলাকায় যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করছে। গত শুক্রবার রাতে প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট থাকলেও গতকাল তা ছিল না। তবে এই এলাকা দিয়ে গাড়িগুলো ধীরগতিতে অতিক্রম করছে।
এদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে শনিবারও যাত্রীদের হয়রানি করে বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার আহসানুল আলম জানান, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় পাঁচটি বাস কাউন্টারকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া যেসব বাস কাউন্টারে ভাড়ার তালিকা ছিল না তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস জানান, শুক্রবার দুপুর থেকে গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের নারায়ণগঞ্জের অংশ দিয়ে রেকর্ডসংখ্যক ৬৩ হাজার ৫৫০টি যানবাহন মেঘনা টোলপ্লাজা অতিক্রম করেছে।
দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশমুখ বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতুতে শনিবার অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ ছিল না। এ বিষয়ে মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ জিয়াউল হায়দার জানান, শনিবার ভোর থেকে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জ প্রান্তে যানবাহনের জটলা বা যাত্রীদের কোনো বিড়ম্বনা দেখা যায়নি। নির্বিঘ্নে ওই মহাসড়ক হয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দেয় যানবাহনগুলো। পদ্মা সেতুর দক্ষিণবঙ্গ অভিমুখের টোলপ্লাজায় সাতটি বুথে নিরবচ্ছিন্ন টোল আদায় করা হচ্ছে। টোল আদায়ে প্রতি গাড়িতে সময় লাগছে মাত্র ৫-৬ সেকেন্ড। তবে পদ্মা সেতুর মাদারীপুর প্রান্তে পরিস্থিতি ছিল অন্য রকম। শুক্রবার সকাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের মাদারীপুর প্রান্তে যানবাহনের বেশ চাপ ছিল। এই রুটের যাত্রীরাও বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন।
শিবচরের পাচ্চর বাসস্ট্যান্ডে খোকন নামে একজন যাত্রী বলেন, ‘কদিন আগেও ২০০ টাকা ভাড়া নিয়েছিল। এখন ঈদ উপলক্ষে ভাড়া নিয়েছে ৪০০ টাকা। এ ছাড়া মাদারীপুরের বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে চলাচল করা নসিমন, ইজিবাইক টেম্পো ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে।
আন্তনগরে স্বস্তি, তবে মেইল-কমিউটারে হ্যাঁপা
ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে দুটি স্পেশালসহ মোট ৬৯টি ট্রেন ঢাকা ছেড়ে গেছে বলে জানান ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার। এসব ট্রেনে এক থেকে দেড় লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন বলে ধারণা তার। মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘১২ জুন থেকে এবারের ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। গত তিন দিনে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের গন্তব্যে যেসব ট্রেন আমরা পরিচালনা করেছি, সেসব ট্রেনের যাত্রীরা তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে নিরাপদে এবং ভোগান্তিহীনভাবে পৌঁছাতে পেরেছেন।’
তিনি জানান, রেলওয়ের সক্ষমতা অনুযায়ী সাড়ে ৩৩ হাজার আন্তনগর টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। এই ৩৩ হাজার ৫০০ টিকিটের বিপরীতে চার থেকে পাঁচ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়তে চেয়েছিলেন। অনেক যাত্রী মেইল ও কমিউটার ট্রেনে করে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আটটি কমিউটার ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। অনলাইনে এসব ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায় না। তাই যাত্রা শুরুর আগে স্টেশনের কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি হয়। এসব কাউন্টারে প্রচুর ভিড় দেখা গেছে। কাউন্টারের সামনে শত শত যাত্রী কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই লাইন কাউন্টার থেকে কমলাপুর স্টেশনের পার্কিং পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে।
এদিকে ঢাকা নৌবন্দরের পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন খবরের কাগজকে রাত ৯টায় জানান, সকাল থেকে এ সময় পর্যন্ত ঢাকা থেকে মোট ৮০টি যাত্রীবাহী লঞ্চ দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটে ছেড়ে যায়। গত তিন দিনের তুলনায় আজ (শনিবার) যাত্রীদের ভিড় কিছুটা বেশি ছিল।
অন্যদিকে ঢাকার সদরঘাট টার্মিনালে নোঙর করার সময় এক লঞ্চের ধাক্কায় আরেক লঞ্চের রশি ছিঁড়ে দুজন আহত হয়েছেন। শনিবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে টার্মিনালের ৩ নম্বর পন্টুনে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন এমভি আল সাফিন সাত্তার খান লঞ্চের কেরানি সুমন মিয়া (৪২) এবং ওই লঞ্চের যাত্রী সুমন খান (৩৫)। তাদের মধ্যে কেরানি মাথায় ও যাত্রী বুকে গুরুতর আঘাত পান। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠান।