![চোরাই চিনির ‘হরিপুরযাত্রা’ হরণ](uploads/2024/06/16/cini-baba-1718511578.jpg)
সিলেটের তামাবিল মহাসড়কের পাশে হরিপুর। জমজমাট এই বাজারে দিনে-রাতে চোরাই চিনি বাজারজাতকরণের কারবার চলে। রাতে চোরাচালানের ‘লাইন’ থেকে সংগ্রহ করা অবৈধ চিনি যেন হরিপুর পৌঁছাতে পারলেই বৈধ হয়ে যায়। সীমান্ত পথে আসা অবৈধ চিনির লাইন বন্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) প্রথম অভিযানেই চোরাই চিনির হরিপুরযাত্রা হরণ করা হয়েছে। মিনি ট্রাক ও ডিআইসহ (পিকআপ) ১১টি ট্রাক জব্দ করা হয়। এতে প্রায় ৫৬ হাজার কেজি চোরাই চিনি ছিল। যার বাজারমূল্য প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা।
শনিবার (১৫ জুন) সকাল ১০টার দিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সিলেট সেক্টরের অধীন ১৯ বিজিবির আওতাধীন জৈন্তাপুর রাজবাড়ি ক্যাম্প বিজিবি এ অভিযান পরিচালনা করে। বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে ট্রাক রেখে চালক ও চোরাকারবারিরা পালিয়ে যায়। অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ১৯ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার মো. আসাদুন্নবী। গণমাধ্যমে পাঠানো বিজিবির প্রেসনোটে বলা হয়, বিজিবির টহল দলের উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাচালানিরা পালিয়ে যায়। বিজিবির টহল দল ট্রাক ও পিকআপগুলো তল্লাশি করে আনুমানিক ৫৬ হাজার কেজি ভারতীয় চিনি জব্দ করে। যার বাজারমূল্য ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি। ভারত থেকে চোরাচালান করে আনা এই চিনি কাস্টমস বিভাগে জমা দেওয়ার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
সিলেট অঞ্চলের সীমান্ত পথ দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে চোরাই চিনির বিরুদ্ধে বিজিবির এটাই সবচেয়ে বড় অভিযান। এই চিনিগুলো তামাবিল মহাসড়কের পাশে জৈন্তাপুর থানার পুলিশের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। গন্তব্য ছিল সিলেটের অন্যতম প্রাচীন হাট হরিপুর। জৈন্তাপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকা থেকে গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর থেকে চোরাই পথের ‘লাইনম্যান’ সক্রিয় হয়। ঈদের বাজার ধরতে এই চিনিগুলো একসঙ্গে ১টি মিনি ট্রাক ও ১০টি ডিআই ট্রাকে করে ভোরে রওনা হয়। গন্তব্য ছিল হরিপুর।
চোরাই চিনির লাইভ ফেসবুকে
চোরাই চিনি সংগ্রহ করে গন্তব্যে পৌঁছানোর সময় রাতে ঝড়বৃষ্টি ছিল। জৈন্তাপুরের পলাশী রেস্টুরেন্ট থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় উপজেলা মৎস্য অফিসের সামনে বৃষ্টিপাতের ভিডিও করছিলেন এক তরুণ। এ সময় চোরাই চিনির ‘লাইনম্যান’ কয়েকজন তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ওই তরুণ তাৎক্ষণিকভাবে বাড়ি ফিরে ঘরে থাকা অন্য মোবাইল ফোন নিয়ে প্রশাসনসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিষয়টি অবহিত করেন। রাত সাড়ে তিনটায় চিনিবোঝাই একটি ডিআই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তরুণের বাড়িতে আঘাত করে। তখন তিনি ফেসবুকে সরাসরি লাইভ দেন। লাইভটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, ভাইরাল হওয়া ফেসবুক লাইভ সিলেট সেক্টর কমান্ডারের দৃষ্টিগোচর হলে তাৎক্ষণিক অভিযানের নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৯ বিজিবি এই অভিযান পরিচালনা করে। চোরাই চিনি জব্দ করার স্থানটি হচ্ছে জৈন্তাপুর মডেল থানার পশ্চিম দিকে ২০০ গজ এবং ১৯ বিজিবির জৈন্তাপুর রাজবাড়ি ক্যাম্পের দক্ষিণ দিকে ৩০০ গজ দূরে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের উত্তর-পূর্ব দিকে ঘিলাতৈল রাস্তা।
চিনি কার?
অভিযানের পর হরিপুর থেকে পাওয়া তথ্য হচ্ছে, এই চিনিগুলো দেশি চিনির মোড়কে ভরে ঈদে বাজারজাত করার জন্য প্রস্তুত ছিল হরিপুরের একটি ব্যবসায়ী দল। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় এই ব্যবসায়ীরা ভোর থেকে বাজারে অপেক্ষায় ছিলেন। চোরাই পথের লাইনম্যানদের মাধ্যমে চোরাই চিনি গ্রহণকারী কয়েকজন ব্যবসায়ীর নাম পাওয়া গেছে। তারা হচ্ছেন হরিপুরের ব্যবসায়ী জাকারিয়া মাহমুদ, ইয়াহিয়া মাহমুদ, আলী হোসেন, আলমগীর হোসেন, হেলাল উদ্দিন, আব্দুল্লাহ, আজির উদ্দিন ওরফে আজিজুর রহমান। চোরাই পথের খবর নিতে গিয়ে ঘটনাটি জেনে ব্যবসায়ী দলটি কৌশলে বাজার থেকে সরে পড়ে। বিজিবি অভিযানে নেমেছে শুনে হরিপুর বাজারের দৃশ্যপটও তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টে যায়।