![কূটনীতিকদের বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের বারবার প্রতিশ্রুতি সরকারের](uploads/2023/11/30/1701334412.BB.jpg)
জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য করতে পশ্চিমা দেশ ও সংস্থার চাপ রয়েছে। নানা বিষয়ের গুরুত্বারোপ করে এসব দেশ ও সংস্থা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে। এই অবস্থায় সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পাল্টা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে বাংলাদেশের মিশন স্থানীয় কূটনীতিক ও অংশীদারদের বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা নিয়মিত জানাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের এই প্রতিশ্রুতির কথা জানানোর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সাম্প্রতিক নয়াদিল্লি সফর। এই সফরকালে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ভারতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। উদ্দেশ্য হলো, বাংলাদেশ সরকার যে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে চায় সেই প্রতিশ্রুতির কথা জানানো।
জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এ কে এম আতিকুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভারত থেকে কূটনীতিকদের ব্রিফ করার একটা কারণ হলো, অনেক দেশ ও সংস্থার কূটনৈতিক মিশন বাংলাদেশে নেই। সেকারণেই হয়তো নয়াদিল্লিতে এমন একটা ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। এমনটা আমি আগে কখনো দেখিনি।’
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যেভাবেই হোক বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক কথা প্রচলিত হয়েছে। তাই কোনো বাধ্যবাধকতা থেকে নয়, এটাকে এক ধরনের অবহিতকরণ বলা চলে যে, তোমরা যা শুনছো তা ঠিক নয়। ওই সব কূটনীতিক নিজ নিজ দেশকে এসব জানায়। ফলে ওইসব দেশ বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে একটি ধারণা পায়।’
সম্প্রতি জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে মোট ১১০টি দেশের প্রতিনিধি বাংলাদেশ সরকারের মানবাধিকার পরিস্থিতির ব্রিফিং শোনেন এবং প্রশ্ন করেন। সেখানেও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন।
২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হওয়া ও সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় কর্মরত অন্তত ৫০টি দেশ ও সংস্থার দূতদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। সেখানেও বিএনপি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা বলে এসব বিদেশি কূটনীতিকদের জানান তিনি।
গত সেপ্টেম্বরের শেষার্ধে নিউইয়র্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক শোলে। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ডেরেক শোলে জানান, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। এর আগে ডেরেক শোলে বাংলাদেশ সফরও করেন।
বৈঠক সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চায় একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আমরাও চাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরা আশ্বাস দিচ্ছি এবং বলছি গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন বর্তমান সরকার উপহার দেবে।’
সম্প্রতি ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজরা জেয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এই বৈঠকেও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ওয়াশিংটনকে অঙ্গীকার করে ঢাকা। বৈঠকের কথা সালমান এফ রহমান ও আজরা জেয়া উভয়ই পৃথক পৃথক ফেসবুক পোস্টে নিশ্চিত করেন।
এ ছাড়া তফসিল ঘোষণার কয়েকদিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক। দুই মন্ত্রীই ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে আশ্বস্ত করেন যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।