প্রিমিয়ার লিগ হকির শেষ দিন শুক্রবার (১৯ এপ্রিল)। দেড় মাসের মাঠের লড়াই শেষে শিরোপার নিষ্পত্তি হবে আজ লিগের শেষ ম্যাচে। যে ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী ও মোহামেডান। কিন্তু আদৌ এই ম্যাচটি হবে কি না, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। কারণ হকি ফেডারেশনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে শিরোপানির্ধারণী ম্যাচটিতে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার হুমকি দিয়ে রেখেছে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান।
লিগ টেবিলের শীর্ষে মোহামেডান। নিজেদের শেষ ম্যাচে আবাহনীকে হারাতে পারলেই চ্যাম্পিয়নের মুকুট ফিরে পাবে তারাই। কিন্তু নিজেদের ক্লাব টেন্টে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে লিগজুড়েই নানা অবিচারের শিকার হওয়ার দাবি করেছে মোহামেডান। বিভিন্ন ম্যাচের কিছু ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে ক্লাবটির কর্মকর্তা সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘লিগজুড়েই আমরা অনেক ধরনের সূক্ষ্ম কারুচুপি, সূক্ষ্ম প্রতারণার শিকার হয়েছি। ফেডারেশনকে বিভিন্ন সময়ে এসব বিষয়ে অবহিত করলেও তারা কোনো প্রতিকার করেনি।’
মোহামেডানের এই মুহূর্তের একমাত্র দাবি কার্ডসংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার কারণে আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে নিষিদ্ধ হওয়া রাসেল মাহমুদ জিমির শাস্তি প্রত্যাহার করা। লিগের বাইলজ অনুযায়ী একজন খেলোয়াড় তিনটি হলুদ কার্ড পেলে পরের এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হবেন। গত ১৬ এপ্রিল ঊষা ক্রীড়াচক্রের বিপক্ষে ৬-৫ গোলে জেতা ম্যাচে লিগে তৃতীয় বারের মতো হলুদ কার্ড দেখেন মোহামেডান অধিনায়ক জিমি। ফলে আবাহনী ম্যাচে তিনি নিষেধাজ্ঞার খড়গে পড়েন।
ঊষার বিপক্ষে ম্যাচ শেষে জিমির নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি মোহামেডানকে চিঠি দিয়ে অবহিত করে ফেডারেশন। কিন্তু মোহামেডানের দাবি- বাইলজ অনুযায়ী জিমির দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের পর ফেডারেশন তাদের চিঠির মাধ্যমে সতর্ক করেনি। লিগ কমিটির বিরুদ্ধে বাইলজ পুরোপুরি অনুসরণ না করার অভিযোগ এনেছে ক্লাবটি। গত বুধবার এক চিঠিতে জিমির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে ফেডারেশনকে চিঠিও দেয় তারা। তবে সেদিনই হকি ফেডারেশন মোহামেডানের চিঠির জবাব দেয়। চিঠিতে তারা লিখেছে, ‘রাসেল মাহমুদ জিমি চলতি লিগে ৪২ ও ৬৩ নম্বর ম্যাচে দুটি হলুদ কার্ড পাওয়ায় মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়। পরবর্তী সময় ৬৬ নম্বর ম্যাচেও সে একটি হলুদ কার্ড প্রাপ্ত হওয়ায় মোট তিনটি কার্ড প্রাপ্ত হয়। তিনটি ম্যাচের ম্যাচ রিপোর্ট শিটে আপনার ক্লাবের ম্যানেজার সব কিছু বুঝে অবগত হয়ে সাক্ষাৎ করেছেন।’ কিন্তু মোহামেডান পাল্টা আরেকটি চিঠি দিয়ে ফেডারেশনকে বলেছে, ম্যানেজার সাক্ষাৎ করেছে ম্যাচের আগে। ম্যাচের শেষে নয়। এসব নিয়েই পরিস্থিতি এখন বেশ ঘোলাটে। যেখানে সবাই অপেক্ষায় রোমাঞ্চকর এক ম্যাচ দেখার, সেখানে ম্যাচটাই ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম। মোহামেডান কর্মকর্তা সারওয়ার হোসেন সরাসরি বলে দিয়েছেন, ‘যদি আমাদের ন্যায্য দাবি না মানে, তাহলে আমরা খেলায় অংশ নেওয়ার থেকে বিরতি থাকব।’ এমনকি মোহামেডান আর হকিতে থাকবে কি না, সে নিয়ে চিন্তা করবেন বলেও জানিয়েছেন ক্লাবটির কর্তারা। দলটির ম্যানেজার আরিফুল হক প্রিন্স তো সরাসরি বলেছেন, ‘জিমির কার্ডটি পরিকল্পিত।’ সারওয়ারের দাবি, ‘নির্দিষ্ট দুটি ক্লাবকে সুবিধা দিতে জিমিকে অন্যায়ভাবে তৃতীয় হলুদ কার্ডটা (ঊষার বিপক্ষে) দেওয়া হয়েছে।’ মোহামেডান ম্যানেজার প্রিন্স ফেডারেশন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও। এমন চেয়ারে থেকেও তিনি ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদের দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘সব সিদ্ধান্তই তিনি নেন একা, রাতের আঁধারে।’
সাঈদ অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। জিমির নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মোহামেডানের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সবকিছু বাইলজ মেনেই হয়েছে। মোহামেডান যদি ম্যাচে অংশগ্রহণ থেকে বিরতি থাকে, সে ক্ষেত্রে বাইলজ অনুযায়ীই কাজ হবে। আম্পায়ার মাঠে যাবে। তিনি তার হুইসেল বাজাবেন। প্রতিপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী পয়েন্ট পাবে। সে ক্ষেত্রে হকি ফেডারেশনের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।’
জিমি দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পাওয়ার পর ফেডারেশন চিঠি দেয়নি বলে যে অভিযোগ মোহামেডানের, এ নিয়ে সাঈদ বলেন, ‘বাইলজের কোথাও লেখা নেই চিঠির মাধ্যমে এটা জানাতে হবে। অবহিত করার যে বিষয়টি উল্লেখ আছে, সেটা যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তাদের করা হয়েছে।’
১৪ ম্যাচে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষ মোহামেডান। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আবাহনীর পয়েন্ট ৩৪। সমান ৩৪ পয়েন্ট ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন মেরিনার ইয়াংসের। এই তিন দলেরই রয়েছে শিরোপা জয়ের সুযোগ। আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের আগে বাংলাদেশ পুলিশের বিপক্ষে খেলবে মেরিনার্স। এই ম্যাচ যদি মেরিনার্স জেতে আর আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ ড্র হয় তাহলে চ্যাম্পিয়ন হবে মেরিনার্স। ঊষা ও আবাহনীর পয়েন্ট সমান হয়ে যাওয়ার সুযোগও আছে। কিন্তু মাঠের এই রোমাঞ্চই তো ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম।