![ক্রিকেটের নগরীতে ঘুম ভাঙল মোরগের ডাকে](uploads/2024/06/14/sports-1718343743.jpg)
মোরগের ডাকে ঘুম ভেঙে যায়। এভাবে মোরগের ডাক শুনে কিছুটা অবাকই। কারণ বাংলাদেশ থেকে সেই হাজার হাজার মাইল দূরের সেন্ট ভিনসেন্টে এসে মোরগের ডাক শুনবো, তাও আবার সেই ডাকে ঘুম ভাঙবে- এটি বিশ্বাস করাও কঠিন। এভাবে মোরগের ডাক এক সময় বাংলাদেশে শোনা হত। বিশেষ করে গ্রামে গেলে। কিন্তু এখনতো সেই গ্রামেই মোরাগের ডাক শোনা যায় না। আবার মোরগের ডাকে ঘুম ভাঙবে- এটাতো এখন যেন রূপকথার গল্পই!
ঢাকা থেকে নিউইয়র্কের দূরত্ব ৮ হাজার মাইলের মতো। ইস্তাম্বুলে দেড় ঘণ্টার যাত্রা বিরতি দিয়ে পৌঁছাতে সময় লেগেছে ২২ ঘণ্টার মতো। কিন্তু নিউইয়র্ক থেকে সেন্ট ভিনসেন্টের দূরত্ব ২ হাজার মাইলের সামান্য বেশি। আসতে সময় লেগেছে সাড়ে ২৯ ঘণ্টার মতো! এর কারণ আর কিছুই নয়। সরাসরি ফ্লাইট না পাওয়া। যে কারণে দুটি ট্রানজিট নিতে হয়েছে। একটি পোর্ট অব স্পেনে, অন্যটি ব্রিজটাউনে।
বিমানে ভ্রমণের সময় ছিল সাড়ে ৭ ঘণ্টা। বাকি ২২ ঘণ্টাই ট্রানজিট। এর মাঝে পোর্ট অব স্পেনে ছিল ১৮ ঘণ্টা, আর ব্রিজটাউনে ৪ ঘণ্টার মতো। তাই শরীরের ওপর দিয়ে বেশ ভালোই ধকল গিয়েছে। যাত্রা পথে একবার আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের চেহারা নিজেরই চিনতেই কষ্ট হচ্ছিল।
সেন্ট ভিনসেন্ট আসার পর মোবাইল সিম কার্ড নেওয়া, হোটেলে ওঠা, খাওয়া-দাওয়া করে ফ্রি হতে হতে সময় গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়। তাই হোটেলে এসে বিছানায় শরীর ঠেলে দেওয়ার পর আর কিছুই মনে করতে পারেনি। গভীর ঘুমে ডুবে যাই। রাতের খাবারও খাওয়া হয়নি। এ রকম গভীর ঘুম এবারের সফরে আসার পর প্রথম হয়েছে। সেই গভীর ঘুম ভাঙে মোরগের ডাকে। মোরগের ডাক শুনার পর সেন্ট ভিনসেন্টের সকালের আকাশ অন্য রকম মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিল।
অবশ্য সেন্ট ভিনসেন্টের সকালের আকাশই যে মুগ্ধতা ছড়ায় তা কিন্তু নয়, এখানে আসার পর প্রতিটি মুহূর্তই আপনাকে মুগ্ধতা ছড়াবে।
৩৮৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে একটি দেশ। তাও দুটি দ্বীপ মিলে। সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রানাডাইন। রাজধানী কিংসটন। জনগণের সংখ্যা শুনলে চোখ কপালে ওঠার মতো। মাত্র ১ লাখ ১০ হাজার। বাংলাদেশের যেকোনো জেলা শহরের আয়তন ও লোক সংখ্যাও এর চেয়ে বেশি। তাই ছোট্ট এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি পর্যটকদের পছন্দের স্থান। যে দিকে নয়ন যাবে শুধু ক্যারাবিয়ান নগরের নীল জলরাশি। শহরের কোনো বাস সার্ভিস নেই।
মাইক্রোবাসই গণপরিবহন হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গানবাজনা শুনতে খুব বেশি পছন্দ করে এখানকার মানুষ। ছোট্ট এই শহর এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভেন্যু। যার সূচনা হচ্ছে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস ম্যাচ দিয়ে। ‘ডি’ গ্রুপের তিনটি ম্যাচের ভেন্যু এটি। অপর দুটি হলো দক্ষিণ আফ্রিকা-নেপাল ও বাংলাদেশ-নেপাল।
দ্বীপরাষ্ট্রটি ক্রিকেটপাগল। নিজেদের কোনো ম্যাচ না থাকার পরও ভিনদেশি দুটি দলের খেলা নিয়ে তাদের উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস ম্যাচ নিয়ে তাদের মাঝে বেশ আগ্রহ। ক্রিকেট কাভার করতে বাংলাদেশ থেকে এসেছি জানার পর যে কেউ আগ বাড়িয়ে এসে পরিচিত হচ্ছেন, কথা বলছেন। হাত মেলাচ্ছেন। বাংলাদেশ জিতবে বলে শুভ কামনাও জানাচ্ছেন।
তাদের এ রকম উচ্ছ্বাসের আরেকটি কারণ হলো ১০ বছর পর আন্তর্জাতিক ম্যাচের স্বাদ নেওয়া। এই ভেন্যুতে ছেলেদের সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশই। ২০১৪ সালের ৫ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই টেস্ট। ১০ উইকেটে জয় পেয়েছিল স্বাগতিকরা। পালকি নামে এক ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে চাকরিরত স্থানীয়দের ম্যাচ নিয়ে কি রকম উচ্ছ্বাস।
অনেক পুরোনো এই ভেন্যুতে খেলা কিন্তু খুবই কম হয়ে থাকে। ১৮ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা। ১৯৮১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছিল যাত্রা। এরপর ওয়ানডে ম্যাচ হয়েছে মাত্র ২৩টি। যেখানে ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের স্বাগতিক হওয়ার পরও কোনো ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি।
এরপর ২০১০ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেরও স্বাগতিক হওয়ার পরও কোনো ম্যাচ ছিল না এই ভেন্যুতে। সে হিসেবে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের। ইতিহাসের সাক্ষীও। তাই জনগণের মাঝে বাড়তি উন্মাদনা কাজ কারাটই স্বাভাবিক।
সেন্ট ভিনসেন্ট বাংলাদেশের জন্য পয়মন্তও বটে। এই ভেন্যুতে এখন পর্যন্ত যে তিনটি টেস্ট হয়েছে তার দুটিই খেলেছে বাংলাদেশ। সবশেষটিতেও ছিল বাংলাদেশ। যদিও সেই ম্যাচে হার সঙ্গী হয়েছে। কিন্তু ২০০৯ সালে এই ভেন্যুতে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট জিতেছিল ৯৫ রানে। অধিনায়ক মাশরাফির ইনজুরিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। এই ভেন্যুতেই বাংলাদেশের নতুন করে আরও একটি সাফল্য গাঁথার সুযোগ। সুপার এইট বাংলাদেশকে নিশ্চিত করতে হবে এই ভেন্যুতেই।