যুক্তরাষ্ট্র থেকে সস্ত্রীক বাংলাদেশের খেলা দেখতে অ্যান্টিগা গিয়েছেন কাজী আজিজ মামুন। দুটি খেলাতেই বাংলাদেশ বাজেভাবে হেরে আসর থেকে বিদায়ের পথে। কিন্তু আফগানিস্তানের কাছে অস্ট্রেলিয়ার পরাজয়ে আবার নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ। সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সেমিতে খেলার। কিন্তু সেখানে আছে যদি-কিন্তুর হিসাব। কাজী আজিজ মামুন তাই ভেবে পাচ্ছেন না বাংলাদেশের খেলা দেখতে সেন্ট ভিনসেন্ট যাবেন কি না? তার মাঝেও যদি-কিন্তুর হিসাব বিরাজ করছে?
বাংলাদেশের জন্য যদি আর কিন্তুর হিসাবটা কী? হিসাবটা কিন্তু সহজ নয়। আফগানিস্তানকে হারাতে হবে বাংলাদেশকে আবার অস্ট্রেলিয়াকে হারতে হবে ভারতের কাছে। যদি এই সমীকরণ মিলে যায়, তাহলে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া-আফগানিস্তানের পয়েন্ট সমান ২ করে হয়ে যাবে। তখন বিবেচনায় আসবে নিট রাট রেট। এখানে কিন্তু বাংলাদেশ আবার বেশ পিছিয়ে। নিজ নিজ শেষ খেলায় নামার আগে নিট রান রেট বাংলাদেশের -২.৪৮৯, আফগানিস্তানের -০.৬৫০, অস্ট্রেলিয়ার ০.২২৩। কাজেই বাংলাদেশকে জিততে হবে বড় ব্যবধানেই!
এই জয়টা কাদের কাছে প্রত্যাশা করা হচ্ছে? এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যে খেলা খেলছে, তা তাদের নিয়ে গেছে ২০ বছর আগের জমানায়। যখন হারকে মেনে নিয়েই খেলতে নামত। মাঝে মাঝে পাওয়া জয় ছিল আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো। সুপার এইটে উঠতে পারাটাই যাদের কাছে সুখ নিবাস। যাদের কোনো লক্ষ্যই নেই সেমিতে খেলার, স্বয়ং কোচের কথায় কোনো কিছু পাওয়া বোনাস, এমন একটি দলের কাছে সেমিফাইনাল খেলার প্রত্যাশা করাটা কতটা যুক্তিসংগত?
যদি লক্ষ্য অটুট থাকে, তাহলে অর্জন সম্ভব। কিন্তু লক্ষ্যই যদি না থাকে, তাহলে যাবে কত দূর? কোচ জানিয়েছেন সুপার এইট নিয়ে তাদের কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। যা পাওয়া যাবে তাই বোনাস। তাওহীদ হৃদয় আবার দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের পর বলেছিলেন, এই দল নিয়ে তারা ফাইনাল পর্যন্ত খেলার প্রত্যাশা করেন।
নেপাল আর নেদারল্যান্ডস দলের বিপক্ষে জয়ে সাকিবের মতো বিশ্বসেরা ক্রিকেটারের কণ্ঠ থেকে সুখের আওয়াজ বের হয়েছে। অধিনায়ক নাজমুল দেশ ছাড়ার আগে জানিয়ে এসেছেন তাদের কাছে কোনো কিছু প্রত্যাশা না করতে? তাহলে এমন একটি দল কি আফগানিস্তানকে হারিয়ে যদি আর কিন্তুর হিসাবে নিজেদের দাঁড় করাতে পারবে?
বাংলাদেশ কি আসলেই আফগানিস্তানকে হারানোর মতো পর্যায়ে আছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আফগানিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে ঢের শক্তিশালী। এই বিশ্বকাপে তারা খেলছে দুর্দান্ত। গ্রুপ পর্বে নেপাল-নেদারল্যান্ডসকে হারানোর মাঝে সুখ পাওয়া বাংলাদেশ দল সেমিতে যাওয়ার সমীকরণে শামিল হয়েছে সুপার এইটের কোনো ম্যাচ না জিতেই।
আফগানিস্তান গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডকে বিধ্বস্ত করে সুপার এইটে আসার পর সেখানে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সেমিতে যাওয়ার লড়াইয়ে শামিল হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে এমন আফগানিস্তানকে হারানো সম্ভব? বাজি ধরতে গেলে বাংলাদেশের পক্ষে লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে।
সুপার এইটে দুই দলের সর্বশেষ ম্যাচের কথাই ধরা যাক। ভারতের ৫ উইকেটে করা ১৯৬ রান তাড়া করে জেতার মনমানসিকতা কখনোই ছিল না বাংলাদেশ দলের মাঝে। সেখানে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬ উইকেটে ১৪৮ রান করে বল হাতে প্রতিটি ক্ষণেই ছিল আফগানদের জয়ের অদম্য স্পৃহা। এবারের আসরে তারাই প্রথম অস্ট্রেলিয়াকে অলআউট করেছে। আফগানদের লড়াকু খেলা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাব্য তালিকায় অনেকেই তাদের নাম লিখে রেখে দিয়েছেন।
আগামীকাল বাংলাদেশ সময় ভোরে দুই দল যখন খেলতে নামবে, তখন ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ শেষ হয়ে যাবে। অস্ট্রেলিয়া জিতে গেলে বাংলাদেশের সামনে তখন আর কোনো সমীকরণ থাকবে না। শুধু আফগানদের সমীকরণ মেলাতে হবে। আর যদি অস্ট্রেলিয়া হেরে যায়, তখন বাংলাদেশও সমীকরণ মেলানোর সুযোগ পাবে। নতুন যে সমীকরণ তৈরি হয়েছে, বাংলাদেশের জন্য আসলে এটা শুধুই একটা সমীকরণ। এর কোনো ফায়দাই তারা নিতে পারবে না বা নেওয়ার মতো দলও নয়। টেস্ট বা ওয়ানডে ক্রিকেটে আফগানদের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে থাকলেও টি-টোয়েন্টিতে বিপরীত। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ভগ্ন অবস্থা, আফগানরা লড়াকু। দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়েও আফগানদের কাছে পিছিয়ে বাংলাদেশ। ১১ বারের মোকাবিলায় আফগানদের জয় ৬টিতে, বাংলাদেশের জয় ৫টিতে।
বাংলাদেশ সুপার এইটে এসেছে বোলারদের একতরফা সাফল্যে। ব্যাটারদের ভয়াবহ ব্যর্থতায় নিজেদের নিংড়ে দিয়ে এক একটি জয় দলকে এনে দিয়েছেন বোলাররা। সুপার এইটে এসেও ব্যাটাররা নিজেদের ফিরে পাননি। কিন্তু বোলাররা আর নিজেদের গ্রুপ পর্বের মতো ধরে রাখতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়ার পর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে তাদের সে অবস্থা ফুটে উঠেছিল। অস্ট্রেলিয়া ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে জয়ী হলেও বাংলাদেশের ৮ উইকেটে করা ১৪০ রান বৃষ্টির আগ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ১১.২ ওভারে ১০০ রান। অর্থাৎ ওভারপ্রতি রান ছিল ৯-এর কাছকাছি। আর ভারত আগে ব্যাট করে রান করেছিল ওভার দশের কাছাকাছি। বোলাররা যদি নিজেদের গ্রুপ পর্বের মতো ফিরে পান আর আফগান ব্যাটারদের অল্প রানে আটকে রাখতে পারেন, তখন হয়তো ব্যাটাররা একটা কিছু করার সুযোগ পাবেন? কিন্তু সেখানেও কথা আছে। বোলাররা কত রানের টার্গেট দিলে, ব্যাটারদের জন্য ভালো হবে? এরও কোনো সঠিক জবাব কিন্তু নেই। কারণ বাংলাদেশের ব্যাটারদের লিমিট যে ১২০-১৩০ থেকে ১৪০ পর্যন্ত। আবার আফগানদের পেস ও স্পিন মিলিয়ে যে দুর্ধর্ষ বোলিং আক্রমণ। এমন আক্রমণের সামনে বাংলাদেশের নড়বড়ে ব্যাটিংলাইন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে কি না, সেটাই বিরাট প্রশ্ন?
তাই বলা যায়, নতুন এই সমীকরণ বাংলাদেশ দলের জন্য শুধুই সান্ত্বনার!