ঢাকা ১০ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪

অবসরে দুই দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা উইসা

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৪, ১২:৩৭ পিএম
আপডেট: ১৬ জুন ২০২৪, ১২:৩৭ পিএম
অবসরে দুই দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা উইসা
সংগৃহীত

উজ্জ্বল ক্যারিয়ার ছিল ডেভিড উইসার। হতে পারতেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। কিন্তু ভুল পথে পা বাড়িয়ে তিনি ধ্বংসের মুখে ফেলে দেন তার সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার। সম্ভাবনার দরজা বন্ধ করা এই ক্রিকেটার অবসর নিলেন আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট থেকে, যিনি দুই দলের হয়ে খেলেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে ক্রিকেটে পথচলা শুরু উইসার। ২০১৩ সালে টি-টোয়েন্টি এবং ২০১৫ সালে ওয়ানডে অভিষেক হয় প্রোটিয়া হয়ে। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে ছিলেন তিনি। সেই আসরে গ্রুপপর্বেই থেমেছিল তার দল। ওই বছরে ‘কলপ্যাক’ চুক্তি করেন উইসা। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থামিয়ে তিন বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন সাসেক্সের সঙ্গে।

এরপর ফের ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরেন উইসা, নামিবিয়ার জার্সিতে। নতুন জাতীয় দলে তার অভিষেক হয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে। টুর্নামেন্টের গত আসরেও নামিবিয়া দলের অংশ ছিলেন তিনি। এবারও। তবে আর নয়। দলের গ্রুপপর্ব শেষ হওয়ার পরই অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন।

ইসা বলেছেন, ‘পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দুই বছর পর। আমার বয়স এখন ৩৯ বছর। আমি জানি না, আমার মধ্যে আরও কিছু বাকি আছে কিনা। আমি মনে করি, নামিবিয়ার হয়ে ক্যারিয়ার শেষ করার জন্য ভালো জায়গায় আছি। তাদের সঙ্গে অনেক ভালো সময় কাটিয়েছি এবং তাদের হয়ে আমার শেষ ম্যাচটি ইংল্যান্ডের মতো একটি বিশ্বমানের দলের বিপক্ষে খেলতে পেরেছি। এটাই অবসরের সঠিক সময় মনে হচ্ছে।’

শুভ জন্মদিন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ০৬:২৮ পিএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ০৬:৪৮ পিএম
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
ছবি : সংগৃহীত

কেউ বলেন এলিয়েন, কেউবা ভিনগ্রহের ফুটবলার। বিশ্ব ফুটবলের রাজপুত্তুর লিওনেল মেসিকে নিয়ে বিশেষণের শেষ নেই। ক্লাব থেকে শুরু করে জাতীয় দল আর্জেন্টিনা, সবখানেই মেসির আলোকময় উপস্থিতি। কাঁড়ি কাঁড়ি গোল আরও রেকর্ডে মোড়ানো বর্ণিল ক্যারিয়ারে সম্ভাব্য সব শিরোপা জেতা লিওনেল মেসিকে তাই অনেকে বলেন, GOAT, গ্রেটেস্ট অব অল টাইম। আর্জেন্টিনার খুদে এই ফুটবল জাদুকরের আজ জন্মদিন। ৩৭-এ পা রাখা লিওনেল মেসিকে নিয়ে খবরের কাগজের দুই পর্বের বিশেষ আয়োজন। আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

‘মেসিকে নিয়ে কিছু লিখো না। তাকে 
বর্ণনা করার চেষ্টাও করো না। শুধু তার খেলা দেখ এবং উপভোগ করে যাও’ 
-পেপ গার্দিওলা 

বাঁ পায়ের জাদু। সেটা অপার্থিব নাকি মায়াবী বিভ্রম। কেউ বলে ঐশী দক্ষতা, কেউবা বলে অত্যাশ্চর্য ক্ষমতা। সবুজ গালিচায় সর্পিল গতিতে তার আঁকাবাঁকা চলা মুগ্ধতার রেণু ছড়ায়। সঙ্গে ওলটপালট হয় রেকর্ড বুক। কত গোল, কত ট্রফি, কত কীর্তি, রোসারিও থেকে বার্সেলোনা, টিস্যু পেপারে সাইন করা থেকে ভুবন মাতানো এক ফুটবলার- লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।

২০২২ কাতার বিশ্বকাপের আগে পর্যন্তও মেসির নামের পাশে ছিল নানা বিশেষণ। কিন্তু সবই ছিল অর্থহীন। সর্বকালের সেরার প্রশ্নে গুটিয়ে যেত তর্কে জড়ানো মেসি ভক্তরা। কারণ মেসির শোকেসে ছিল না আকাশি-নীল জার্সিতে একটি সোনালি ট্রফি। মেসির মনের উঠোনজুড়ে তাই ছিল বিশাল অঙ্কের আঁকিবুঁকি। হিসাবটা তাই তিনি মেলালেন মরুর বুকে কাতারের ঐতিহাসিক লুসাইল স্টেডিয়ামে। ভক্তদের মনে রোমাঞ্চের কাঁপন তুলে জিতলেন পরম আরাধ্যের বিশ্বকাপ। মেসির হাতে বিশ্বকাপ দিয়ে যেন দায়মুক্ত হলো ফুটবলও। 

২০২২ কাতার বিশ্বকাপ জেতার পর লুসাইল স্টেডিয়ামে প্রিয় বন্ধু সার্জিও আগুয়েরোর কাঁধে লিওনেল মেসি। ছবি : সংগৃহীত

একটি বিশ্বকাপের জন্য কত হাপিত্যেশ ছিল এই মেসির, তা সবারই জানা। ম্যারাডোনার নেতৃত্বে ১৯৯০, মেসির কাঁধে চড়ে ২০১৪। দুই বিশ্বকাপের ফাইনালেই জার্মান মেশিনে বিকল হয়েছিল আর্জেন্টিনা।  ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের পর দুবার কোপা আমেরিকার খেতাব মিস। পেনাল্টি মিসে সূর্যাস্ত। অভিমান-দুঃখে অবসরও নিয়েছিলেন মেসি। তবে শেষ সেখানেই নয়। হেরে যাওয়ার মুহূর্ত থেকে যারা চ্যাম্পিয়নের সরণিতে ফিরে আসেন, তারাই প্রকৃত লিজেন্ড। মেসিও যেমন তাই। কাতার বিশ্বকাপ জিতে মেসি প্রমাণ করেছেন, তিনি ভিনগ্রহের ফুটবলার। আধুনিক ফুটবলের হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা।

অথচ কে জানত, ভাগ্য আরেকটু বিরূপ হলেই মেসি নামের কোনো ফুটবলারকেই হয়তো চিনত না বিশ্ব। দশ বছর বয়সে গ্রোথ হরমোনজনিত সমস্যায় ধরা পড়া মেসি ছোট্ট দুটি পায়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন নিওয়েলস ওল্ড বয়েজ ক্লাব। কিন্তু উচ্চতা না বাড়লে ফুটবল খেলতে পারবে না, তা নিয়ে শঙ্কা ছিল ঢের। এই রোগের যে চিকিৎসা ব্যয়ভার তা মেটাতে পারেনি নিওয়েলস বয়েজ কিংবা আর্জেন্টিনার বিখ্যাত ক্লাব রিভারপ্লেটও। কারণ প্রতি মাসে মেসির চিকিৎসার জন্য দরকার হতো ৯০০ মার্কিন ডলার। একপর্যায়ে মেসিকে নিয়ে হালই ছেড়ে দিয়েছিল তার পরিবার। কিন্তু যার কপালে বিশ্বজয়ের রাজটিকা, তাকে রুখতে পারে কে! এগিয়ে আসে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা। ২০০০ সালে ঐতিহাসিক ন্যাপকিন চুক্তিতে অসামান্য এই প্রতিভাকে নিজেদের করে নেয় বার্সা। সঙ্গে মেসির চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব। বাকিটা ইতিহাস।

কিন্তু মেসির এই ঝলমলে ক্যারিয়ারের পথ-পরিক্রমা মোটেও সহজ ছিল না। এসেছে নানা বাধা-বিপত্তি। তবে লক্ষ্য অটুট থাকলে সবকিছুই সম্ভব। মেসি তা প্রমাণ করেছেন। যেখানে ভাগ্যটাও পাশে পেয়েছেন তিনি, সঙ্গে ছিল বাঁ পায়ের ঐশ্বরিক জাদু। আর হার না মানার মানসিকতা। শুনুন মেসির মুখেই, ‘আর্জেন্টিনা থেকে একটা স্বভাব আমি আমার সঙ্গে এনেছিলাম, সেটা হলো পরাজয়ের প্রতি ঘৃণা। পরাজয়; সেটা যে ক্ষেত্রেই হোক না কেন, আমি মানতে পারি না। এখন মনে হয়, ছোটবেলায় আমরা যখন রাস্তায় ফুটবল খেলতাম, তখন ভাই-কাজিনরা মাঝেমধ্যে ইচ্ছা করে হেরে যেত। তারা আমাকে জিতিয়ে দিত। কারণ জানত, আমি হেরে গেলে তাদের কপালে দুঃখ আছে। ১৩ বছর বয়সে যখন এখানে (ন্যু ক্যাম্প) খেলা শুরু করলাম, তখনো আমি হার মানতে চাইতাম না। সতীর্থরা যখন হেরে গিয়েও মেনে নিত, আমার কাছে খুব অবাক লাগত।’

মেসি নামের শব্দটি শুনলেই এখন সবার চোখে ভাসে আর্জেন্টিনার সান্তা ফে প্রদেশের সবচেয়ে বড় শহর রোসারিও। শহরের দক্ষিণে ব্যারিও লাস হেরাস পাড়া। ছিমছাম সবুজেঘেরা একটি বাড়ি। কিন্তু ফুটবল খেলার জায়গার অভাব। দুই বেড়ার মাঝে খানিকটা ফাঁকা জায়গায় ফুটবল নিয়ে মেতে উঠত ছোট্ট এক ছেলে। কিন্তু সেখানে জমত না খেলা। শুকনো, কাঁচা রাস্তাই ছিল ভরসা। দুই পাশে গোলপোস্টের কোনো রকম চিহ্ন এঁকে চলত ফুটবল খেলা। 

শিশু মেসি। ছবি : সংগৃহীত

মেসির বয়স যখন তিন কিংবা চার বছর, জন্মদিনে উপহার পেয়েছিলেন একটি ফুটবল। যে ফুটবল জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল ছোট্ট শিশুটির। জন্মদিন এলেই মেসি অপেক্ষা করতেন নতুন ফুটবলের জন্য। এ প্রসঙ্গে একবার মেসি বলেছিলেন, ‘খুব ছোটবেলায় আমি আমার প্রথম ফুটবলটা পেয়েছিলাম। তখন কতই-বা বয়স, তিন বা চার। কে যেন উপহার দিয়েছিল। সেদিন থেকে যেকোনো উপলক্ষে আমি একটা উপহারই চাইতাম- ফুটবল, হোক সেটা বড়দিন বা জন্মদিন। আমি ফুটবল জমাতাম। ঘরের বাইরে নিতাম না, যদি কেউ নষ্ট করে ফেলে, সেই ভয়ে।’

বাবা হোর্হে হোরাসিও মেসি কাজ করতেন স্টিল ফ্যাক্টরিতে। মা সেলিয়া মারিয়া পার্ট টাইম ক্লিনার। বড় দুই ভাই রদ্রিগো ও মাতিয়াস, ছোট বোন মারিয়া সল। পাঁচ বছর বয়সে মেসি স্থানীয় ক্লাব গ্র্যান্দোলির হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন। মেসির কোচ ছিলেন তার বাবা হোর্হে। এই ক্লাবের হয়ে মেসির পরিবারের অনেকেই খেলেছেন। স্মৃতি বেশ সতেজ মেসির, ‘আমার বাবা ছিলেন ক্লাবের কোচ। রবিবার সারা দিন কাটত গ্র্যান্দোলির সঙ্গে। পুরো পরিবার মিলে খেলতাম। হয়তো আমি খেলছি, বিপক্ষ দলে বড়দের মধ্যে আমার চাচাও আছেন। এভাবেই কেটে যেত সারা দিন।’ 

একেক দলে তখন খেলত সাতজন করে। মেসির প্রথম ম্যাচ খেলার ঘটনা সবার জানা। মেসির মুখেই শুনন তা, ‘প্রথম ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম আমার দাদির কারণে। গ্র্যান্দোলির দলে আমার মতো ছোট্ট ছেলের জায়গা ছিল না। এক দিন বড় একজনকে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে দাদি আমাকে এগিয়ে দিলেন। কোচ শুরুতে রাজি ছিলেন না, পরে আপত্তি করেননি।’ ছোট্ট মেসির ড্রিবলিং দেখে সেই কোচের চোখ ছানাবড়া। চোখের নিমিষেই মেসির অসাধারণ সব কারিকুরি নজর কেড়েছিল সবার।

২০০৪-২০২১ পর্যন্ত দীর্ঘ ১৭ বছর খেলেছেন স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার জার্সিতে। ছবি : সংগৃহীত

কোনো ফুটবলার মেসির নায়ক ছিলেন না। তবে ভক্ত ছিলেন ম্যারাডোনার। ভবিষ্যতে কী হতে চাও, এমন প্রশ্নে ছোট্ট মেসি একবার বলেছিলেন, ‘আমি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলতে চাই, সব আর্জেন্টাইনের মতো আমিও ম্যারাডোনার ভক্ত ছিলাম। মুগ্ধ হয়ে তার খেলার ভিডিও দেখতাম, সেই স্মৃতি এখনো মনে পড়ে। পাবলো আইমার যখন প্রথম এলেন, তার খেলাও খুব ভালো লাগত। কিন্তু তারা কেউ আমার আদর্শ ছিলেন না। ভাই আর কাজিনদের সঙ্গে রাস্তায় খেলে আমি বড় হয়েছি। তাদের দেখেই শিখেছি। আমার পরিবার আমাকে বাঁচার কৌশল শিখিয়েছে, কিন্তু ফুটবলের কৌশল আমি শিখেছি নিজে নিজে।’

গ্র্যান্দোলির সঙ্গে বছর দেড়েক থাকার পর নিওয়েলসের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন মেসি। সমস্যা বাধে সেখানেই। ১১ জনের দলে আর সবার চেয়ে মেসি ছিলেন অপেক্ষাকৃত ছোট। কিন্তু প্রসঙ্গ যখন ফুটবল, এই ঘাটতি কখনোই মেসিকে ভাবাত না। কিন্তু খেলা শুরুর আগে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা তাকিয়ে থাকতেন, তাতে অস্বস্তি বাড়ত তার। কিন্তু খেলা শুরু হলে মেসির পায়ে বল আসার পর দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যেত সবার।

ঠিক কী কারণে মেসির আকৃতি ছোট। নিওয়েলস তাই মেসিকে পাঠাল ক্লিনিকে। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানালেন, মেসির শরীরে একটা অবর্ধনশীল হরমোন আছে। মেসি বেড়ে উঠছিলেন, তবে স্বাভাবিকের চেয়ে ধীরগতিতে। ডাক্তার বললেন, চিকিৎসা নিলে মেসি অন্যান্য ছেলেমেয়ের মতো বেড়ে উঠতে পারবে। যখন চিকিৎসা শুরু হলো, মেসির বয়স বড়োজোর ১১ কি ১২। প্রায় এক বছর চিকিৎসার ব্যয় মেসির বাবা বহন করেন। মাসে ৯০০ মার্কিন ডলারের খরচ কুলিয়ে উঠতে পারেনি মেসির পরিবার। দুঃসময়ের মুখোমুখি তখন হোর্হে। তখনই এগিয়ে আসে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা। ঐতিহাসিক ন্যাপকিন চুক্তিতে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেন মেসি। রোসারিও ছেড়ে মেসির পরিবারের নতুন ঠিকানা বার্সেলোনার ন্যু ক্যাম্প। 

চলবে....

নতুন সমীকরণ শুধুই সান্ত্বনার!

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ০৫:৪২ পিএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ০৫:৪২ পিএম
নতুন সমীকরণ
শুধুই সান্ত্বনার!
ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র থেকে সস্ত্রীক বাংলাদেশের খেলা দেখতে অ্যান্টিগা গিয়েছেন কাজী আজিজ মামুন। দুটি খেলাতেই বাংলাদেশ বাজেভাবে হেরে আসর থেকে বিদায়ের পথে। কিন্তু আফগানিস্তানের কাছে অস্ট্রেলিয়ার পরাজয়ে আবার নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ। সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সেমিতে খেলার। কিন্তু সেখানে আছে যদি-কিন্তুর হিসাব। কাজী আজিজ মামুন তাই ভেবে পাচ্ছেন না বাংলাদেশের খেলা দেখতে সেন্ট ভিনসেন্ট যাবেন কি না? তার মাঝেও যদি-কিন্তুর হিসাব বিরাজ করছে?

বাংলাদেশের জন্য যদি আর কিন্তুর হিসাবটা কী? হিসাবটা কিন্তু সহজ নয়। আফগানিস্তানকে হারাতে হবে বাংলাদেশকে আবার অস্ট্রেলিয়াকে হারতে হবে ভারতের কাছে। যদি এই সমীকরণ মিলে যায়, তাহলে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া-আফগানিস্তানের পয়েন্ট সমান ২ করে হয়ে যাবে। তখন বিবেচনায় আসবে নিট রাট রেট। এখানে কিন্তু বাংলাদেশ আবার বেশ পিছিয়ে। নিজ নিজ শেষ খেলায় নামার আগে নিট রান রেট বাংলাদেশের -২.৪৮৯, আফগানিস্তানের -০.৬৫০, অস্ট্রেলিয়ার ০.২২৩। কাজেই বাংলাদেশকে জিততে হবে বড় ব্যবধানেই!

এই জয়টা কাদের কাছে প্রত্যাশা করা হচ্ছে? এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যে খেলা খেলছে, তা তাদের নিয়ে গেছে ২০ বছর আগের জমানায়। যখন হারকে মেনে নিয়েই খেলতে নামত। মাঝে মাঝে পাওয়া জয় ছিল আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো। সুপার এইটে উঠতে পারাটাই যাদের কাছে সুখ নিবাস। যাদের কোনো লক্ষ্যই নেই সেমিতে খেলার, স্বয়ং কোচের কথায় কোনো কিছু পাওয়া বোনাস, এমন একটি দলের কাছে সেমিফাইনাল খেলার প্রত্যাশা করাটা কতটা যুক্তিসংগত?

যদি লক্ষ্য অটুট থাকে, তাহলে অর্জন সম্ভব। কিন্তু লক্ষ্যই যদি না থাকে, তাহলে যাবে কত দূর? কোচ জানিয়েছেন সুপার এইট নিয়ে তাদের কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। যা পাওয়া যাবে তাই বোনাস। তাওহীদ হৃদয় আবার দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের পর বলেছিলেন, এই দল নিয়ে তারা ফাইনাল পর্যন্ত খেলার প্রত্যাশা করেন।

নেপাল আর নেদারল্যান্ডস দলের বিপক্ষে জয়ে সাকিবের মতো বিশ্বসেরা ক্রিকেটারের কণ্ঠ থেকে সুখের আওয়াজ বের হয়েছে। অধিনায়ক নাজমুল দেশ ছাড়ার আগে জানিয়ে এসেছেন তাদের কাছে কোনো কিছু প্রত্যাশা না করতে? তাহলে এমন একটি দল কি আফগানিস্তানকে হারিয়ে যদি আর কিন্তুর হিসাবে নিজেদের দাঁড় করাতে পারবে?
বাংলাদেশ কি আসলেই আফগানিস্তানকে হারানোর মতো পর্যায়ে আছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আফগানিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে ঢের শক্তিশালী। এই বিশ্বকাপে তারা খেলছে দুর্দান্ত। গ্রুপ পর্বে নেপাল-নেদারল্যান্ডসকে হারানোর মাঝে সুখ পাওয়া বাংলাদেশ দল সেমিতে যাওয়ার সমীকরণে শামিল হয়েছে সুপার এইটের কোনো ম্যাচ না জিতেই। 

আফগানিস্তান গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডকে বিধ্বস্ত করে সুপার এইটে আসার পর সেখানে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সেমিতে যাওয়ার লড়াইয়ে শামিল হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে এমন আফগানিস্তানকে হারানো সম্ভব? বাজি ধরতে গেলে বাংলাদেশের পক্ষে লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে।

সুপার এইটে দুই দলের সর্বশেষ ম্যাচের কথাই ধরা যাক। ভারতের ৫ উইকেটে করা ১৯৬ রান তাড়া করে জেতার মনমানসিকতা কখনোই ছিল না বাংলাদেশ দলের মাঝে। সেখানে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬ উইকেটে ১৪৮ রান করে বল হাতে প্রতিটি ক্ষণেই ছিল আফগানদের জয়ের অদম্য স্পৃহা। এবারের আসরে তারাই প্রথম অস্ট্রেলিয়াকে অলআউট করেছে। আফগানদের লড়াকু খেলা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাব্য তালিকায় অনেকেই তাদের নাম লিখে রেখে দিয়েছেন।

আগামীকাল বাংলাদেশ সময় ভোরে দুই দল যখন খেলতে নামবে, তখন ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ শেষ হয়ে যাবে। অস্ট্রেলিয়া জিতে গেলে বাংলাদেশের সামনে তখন আর কোনো সমীকরণ থাকবে না। শুধু আফগানদের সমীকরণ মেলাতে হবে। আর যদি অস্ট্রেলিয়া হেরে যায়, তখন বাংলাদেশও সমীকরণ মেলানোর সুযোগ পাবে। নতুন যে সমীকরণ তৈরি হয়েছে, বাংলাদেশের জন্য আসলে এটা শুধুই একটা সমীকরণ। এর কোনো ফায়দাই তারা নিতে পারবে না বা নেওয়ার মতো দলও নয়। টেস্ট বা ওয়ানডে ক্রিকেটে আফগানদের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে থাকলেও টি-টোয়েন্টিতে বিপরীত। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ভগ্ন অবস্থা, আফগানরা লড়াকু। দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়েও আফগানদের কাছে পিছিয়ে বাংলাদেশ। ১১ বারের মোকাবিলায় আফগানদের জয় ৬টিতে, বাংলাদেশের জয় ৫টিতে।

বাংলাদেশ সুপার এইটে এসেছে বোলারদের একতরফা সাফল্যে। ব্যাটারদের ভয়াবহ ব্যর্থতায় নিজেদের নিংড়ে দিয়ে এক একটি জয় দলকে এনে দিয়েছেন বোলাররা। সুপার এইটে এসেও ব্যাটাররা নিজেদের ফিরে পাননি। কিন্তু বোলাররা আর নিজেদের গ্রুপ পর্বের মতো ধরে রাখতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়ার পর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে তাদের সে অবস্থা ফুটে উঠেছিল। অস্ট্রেলিয়া ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে জয়ী হলেও বাংলাদেশের ৮ উইকেটে করা ১৪০ রান বৃষ্টির আগ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ১১.২ ওভারে ১০০ রান। অর্থাৎ ওভারপ্রতি রান ছিল ৯-এর কাছকাছি। আর ভারত আগে ব্যাট করে রান করেছিল ওভার দশের কাছাকাছি। বোলাররা যদি নিজেদের গ্রুপ পর্বের মতো ফিরে পান আর আফগান ব্যাটারদের অল্প রানে আটকে রাখতে পারেন, তখন হয়তো ব্যাটাররা একটা কিছু করার সুযোগ পাবেন? কিন্তু সেখানেও কথা আছে। বোলাররা কত রানের টার্গেট দিলে, ব্যাটারদের জন্য ভালো হবে? এরও কোনো সঠিক জবাব কিন্তু নেই। কারণ বাংলাদেশের ব্যাটারদের লিমিট যে ১২০-১৩০ থেকে ১৪০ পর্যন্ত। আবার আফগানদের পেস ও স্পিন মিলিয়ে যে দুর্ধর্ষ বোলিং আক্রমণ। এমন আক্রমণের সামনে বাংলাদেশের নড়বড়ে ব্যাটিংলাইন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে কি না, সেটাই বিরাট প্রশ্ন?
তাই বলা যায়, নতুন এই সমীকরণ বাংলাদেশ দলের জন্য শুধুই সান্ত্বনার!

বাংলাদেশের পশ্চাৎপদ ব্যাটিং

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ০৫:০০ পিএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ০৪:৫১ পিএম
বাংলাদেশের পশ্চাৎপদ ব্যাটিং
ছবি : সংগৃহীত

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ‘টাইমড আউট’-র ঘটনার পর দুই দেশের ম্যাচকে ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এর আগে তা ছিল ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে। ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে শুরু। এরপর থেকে যখনই যেখানে হোক, দুই দল খেলতে নামার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উত্তপ্ত হয়ে উঠত। যার রেশ খেলোয়াড়দের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ত বেশ। কিন্তু টাইমড আউটের ঘটনার পর বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের সেই উত্তেজনা প্রশমিত হয়ে গেছে। সেটা এমনই যে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল জেতার মানসিকতাই ভুলে গেছে।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের অবস্থা এমনিতেই রুগ্ণ। সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেই অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে। এই অবনতি আবার সর্বজনীন নয়, শুধুই ব্যাটারদের ক্ষেত্রে। বর্তমান ব্যাটিং লাইন একটা বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছে তাদের সীমাদ্ধতা নিয়ে। তাদের কাছে বড় কোনো কিছু প্রত্যাশা না করতে। তাদের লিমিট ১২০-১৩০ থেকে ১৪০ পর্যন্ত। তা আগে-পরে যখনই ব্যাটিং করা হোক না কেন। পরে ব্যাট করে এর থেকে বেশি টার্গেট থাকলে তারা তাদের লিমিট ক্রস করবেন না। লিমিট মেনেই ব্যাটিং করবেন। সেখানে থাকবে না জয়ের কোনো মানসিকতা। বোলাররা যদি দয়াপরবশ হয়ে ১২০-১৩০ রানের টার্গেট দেন, সে ক্ষেত্রে তারা চেষ্টা করতে পারেন। যেমনটি তারা গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার ১২৪ রান কোনো রকমে পাড়ি দিয়েছেন। আবার দক্ষিণ আফ্রিকার ১১৩ রান পাড়ি দেওয়া সম্ভব হয়নি। অবশ্য তাদের চেষ্টার কমতি ছিল না।

ব্যাটারদের সেই চেষ্টা আবার দেখা যায়নি ভারতের বিপক্ষে। সুপার এইটে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ভারত ৫ উইকেট করেছিল ১৯৬ রান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই রান অতিক্রম করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে এই রান খুবই নিরাপদ। বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে আরও বেশি করে নিরাপদ, আরামদায়ক। বোলাররা আরামসে বোলিং করে যেতে পারেন। এভাবে শেষ হয়ে যাবে ২০ ওভার। পরে দেখা যাবে তাদের জয়ের ব্যবধান বেশ।

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উইকেট আর বাংলাদেশ দলের সীমাবদ্ধ ব্যাটিং এই দুইয়ে মিলে ভারতের ইনিংস শেষ হওয়ার পরই যেন ম্যাচের ফলাফল নির্ধারিত হয়ে যায়। আর এই ধারণার বাস্তবায়ন হতে খুব বেশি সময় লাগেনি। বাংলাদেশ দল ব্যাটিং করতে নামার পরপরই স্পষ্ট হয়ে যায় রান তাড়ায় কোনো ইচ্ছেই নেই তাদের। বাংলাদেশ দলের মনমানসিকতা ছিল ২০ ওভার খেলে দলের রান বাড়িয়ে নেওয়ার পাশাপাশি হারের ব্যবধান যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। ৮ উইকেটে ১৪৬ রান করে হার মেনেছিল ৫০ রানে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৫০ রানের হার কিন্তু অনেক বড় ব্যবধান।

গ্রুপ পর্ব থেকে শুরু করে সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং ছিল এক রকম। যেখানে ফুটে উঠেছিল ব্যাটিং ব্যর্থতা। আর ভারতের বিপক্ষে ফুটে উঠেছে সীমাবদ্ধতা। এত রান তাড়া করে জয়ের সক্ষমতা নেই এই দলের। ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে কিন্তু মড়ক লাগেনি। উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৩৫ রান। দলীয় শতরান আসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৪ ওভারের মাঝে। কিন্তু কখনই কারও মাঝেই জয়ের অদম্য ইচ্ছে দেখা যায়নি। এ যেন পশ্চাৎপদ ব্যাটিং। এমন নেগেটিভ ব্যাটিং সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ কবে করেছে, তার জন্য পরিসংখ্যানে চোখ বুলাতে হবে। বোলাররা যখন নিজেদের মেলে ধরে সেরা দশে ঢুকে গেছেন। ১১টি করে উইকেট নিয়ে নাম আছে তানজিম সাকিব ও রিশাদ হোসেনের, সেখানে ব্যাটারদের অবস্থান তলানির দিকে। ৬ ম্যাচ খেলে শতরানের ওপরে করেছেন মাত্র তিনজন নাজমুল (১০৭), তাওহীদ হৃদয় ( ১৩৯) সাকিব আল হাসান (১১১)।

এমন নেগেটিভ ব্যাটিং নিয়েই বাংলাদেশ দল সেমি ফাইনালে যাওয়ার সমীকরণ মেলাতে দুর্ধর্ষ আফগান বোলারদের সামনে নামবে। আফগানরা যদি আগে ব্যাট করে ১৫০ এর ওপরে রান করে, তাহলে বাংলাদেশের খেলা শেষ। আর বোলাররা যদি আফগানদের অল্প রানে আটকে রাখতে পারেন, সে ক্ষেত্রে ব্যাটাররা একটু চেষ্টা করতে পারেন?

এমন জটিল অবস্থায় আর পড়তে চান না মার্করাম

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ০৪:৩৪ পিএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ০৪:৩৪ পিএম
এমন জটিল অবস্থায় আর পড়তে চান না মার্করাম
ছবি : সংগৃহীত

চলমান বিশ্বকাপে দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনালে পা দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ চারে পা দেওয়ার পথে সাত ম্যাচ অপরাজেয় ছিল দলটি। এবারের আসরে তাদের জেতা প্রায় সব ম্যাচই ছিল স্নায়ুক্ষয়ী লড়াই। বরাবরই স্নায়ুর পরীক্ষায় দুর্বল আফ্রিকানরাই এবার স্নায়ুচাপ ধরে রেখে জিতেছে প্রতিটি ম্যাচ। যদিও এমন ম্যাচ আর খেলতে চান না প্রোটিয়াদের অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। এমনকি এমন জটিল অবস্থায়ও আর পড়তে চান না তিনি।

গ্রুপ পর্বে নিউইয়র্কে শ্রীলঙ্কাকে ৭৭ রানে অলআউট করে সেই ম্যাচ সহজেই জিতেছিল মার্করামরা ৬ উইকেটে। কিন্তু, এরপর প্রায় সব ম্যাচই তারা জিতেছে কষ্ট করে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪ ও নেপালের বিপক্ষে গ্রুপের বাকি দুই ম্যাচ তারা জিতেছিল। এরপর সুপার এইটে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১৮ রানে জেতার পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়টি ছিল ৭ রানে। ম্যাচ জিতলেও এমন ক্লোজ ম্যাচ খেলে নেট রানরেটে পিছিয়ে পড়েছিল দলটি। এমন অবস্থায় স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচটি রূপ নেয় নকআউটে। বৃষ্টইবিঘ্নিত সেই ম্যাচও তারা জিতেছে শেষ ওভারে ৩ উইকেট হাতে রেখে।

উইন্ডিজদের হারিয়ে শেষ চারে নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করলেও এমন ম্যাচ আর খেলতে চান না বলে জানিয়েছেন প্রোটিয়া অধিনায়ক মার্করাম, ‘সেমিফাইনালে যাওয়াটা অনেক স্বস্তির, তবে আমরা এটিকে মাথায় চড়তে দেব না। ব্যাট হাতে আমরা আরও দাপুটে হতে চাই। বৃষ্টি–বিরতির পর উইকেট ভালো আচরণ করছিল, সেখানেই ম্যাচ শেষ করে দেওয়ার মতো জুটি পাইনি। ম্যাচ বেশি আগেভাগে শেষ করতে চেয়েছি।’

উইন্ডিজের স্পিনার রস্টন চেজকে মারতে গিয়ে আউট হন প্রোটিয়ার তিন ব্যাটার ডেভিড মিলার, ট্রিস্টান স্টাবস ও কেশব মহারাজ। সে প্রসঙ্গে মার্করাম বলেন, ‘এই জয় আমাদের জন্য বিশাল, ড্রেসিংরুমের জন্যও দারুণ। তবে আশা করি আমরা এমন জটিল অবস্থায় পড়ব না। আমরা দারুণ বোলিং করেছি বলে মনে হয়, কন্ডিশন বুঝেছি, তাদের গড়পড়তার চেয়ে কম সংগ্রহে রাখতে পেরেছি। জুটি গড়ার ব্যাপারটি বুঝতে হবে। ম্যাচ আগেভাগে শেষ করার ভক্ত আমি, তবে আজ সেটি একটু বেশিই আগে করে ফেলতে চেয়েছি। এখানে শেখার ব্যাপার আছে। আশা করি (ভুলের) পুনরাবৃত্তি করব না।’

এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচ হারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। স্বাগতিকদের বিপক্ষে নামার আগে ছয় ম্যাচ অপরাজেয় ছিলেন মার্করামরা। সবগুলো ম্যাচ অল্প ব্যবধানে জেতায় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল ছিটকে পড়ার। সেই শঙ্কাকে উড়িয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩ উইকেটের জয়ে।

সেমিফাইনালে কাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে পেতে যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা তা নিয়ে ভাবতে চান না তাদের অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। প্রতিপক্ষ যেই হোক নিজেদের সর্বোচ্চটা দেওয়ার বার্তা দিয়ে রেখেছেন প্রোটিয়া অধিনায়ক, ‘আমরা নিজেদের সেরা ক্রিকেট ম্যাচটি এখনো খেলিনি। সেমিফাইনালে সেটি করার চেষ্টা করব।’

ক্ষুধার্ত সাকিবই এখন তৃপ্ত!

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ০৩:৩৯ পিএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ০৩:৩৯ পিএম
ক্ষুধার্ত সাকিবই এখন তৃপ্ত!
ছবি : সংগৃহীত

দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা সাকিব আল হাসান। দূরদর্শী ক্রিকেটারও বটে। এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। নিজের দূরদর্শী চিন্তা-ভাবনা এবং ক্ষুধার্ত মনোভাব দেখিয়েই তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটে ‘পোস্টার বয়’। সময়ের স্রোতে এই সাকিবই যেন তৃপ্ত অল্পতে!

চলমান বিশ্বকাপে সুপার এইটে দুই ম্যাচ হেরেও আফগানিস্তানের জয়ে সমীকরণের মারপ্যাঁচে সুতোয় টিকে আছে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল ভাগ্য। সেই সমীকরণ নিয়ে বাংলাদেশ কতটুকু ভাবছে তা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও ফর্মের সঙ্গে লড়াই করা সাকিব এবারের আসরকে উল্লেখ করলেন ‘খারাপ নয়’ বলে। তার কথায়, ‘আমরা ৩টা জিতেছি, ৩টা হেরেছি। ৫০ শতাংশ সফল। সেদিক থেকে খুব একটা খারাপ নয়।’

সাকিবের এমন সন্তুষ্টি অবশ্য প্রথম নয়। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে এশিয়া কাপের পারফরম্যান্স নিয়েও সাকিব জানিয়েছিলেন নিজের সন্তুষ্টির কথা। বেসরকারি এক চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটা (সুপার ফোর) জিততাম তাহলে আর কোনো অভিযোগ থাকত না কারো।’

এশিয়া কাপের সুপার ফোরে পাকিস্তানের বিপক্ষেও ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। যাদের বিপক্ষে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারেনি সাকিবরা। পাকিস্তানের বিপক্ষে হওয়া সেই গলদঘর্ম অবস্থাকে খুব একটা আমলে নেননি সাকিব। খুব সম্ভবত ফাইনালে যাওয়ার আশা শেষ হয়ে যাওয়ার পর ভারতের বিপক্ষে মূল্যহীন জয়ে।

দিন কয়েক আগে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের ক্যারিয়ারের অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সাকিব কথা বলেছিলেন বাংলাদেশ দলের ২০১৯ বিশ্বকাপ নিয়েও। যে বিশ্বকাপে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত ছিলেন তিনি। সেই বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগ পর্যন্ত লড়াইয়ে টিকে থাকায় বড় স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপে পাড়ি দেওয়া সাকিবই সেই আসরকে আখ্যায়িত করেছেন এক হিসেবে ভালো আসর হিসেবে। বলেছিলেন, ‘একভাবে বললে ভালো বিশ্বকাপ, আমরা ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলেছি। ধারাবাহিক ছিলাম ব্যাটিং ও বোলিংয়ে। দুয়েকটা ম্যাচে ভালো করতে পারিনি। কিন্তু সবমিলিয়ে আমরা ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফর্ম করেছি।’

অথচ সেই বিশ্বকাপ খেলে এসে সেসময় অন্য আরেক সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেছিলেন, ‘আমি সব সময়ই বিশ্বাস করেছি যে এবার অনেক দূরে যাওয়া সম্ভব। হয়তো সবার সাহায্য পেলে আমরা সেমিফাইনালেও চলে যেতাম।’ ২০১৯ বিশ্বকাপ নিয়ে ২০২৪ সালে এসে সাকিবের মন্তব্যে কমে গেছে ধার। যেই ধারের ঘাটতি দেখা গেছে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে করা মন্তব্যেও। ভুলেভরা আসর নিয়ে নিজের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তিনি ‘খারাপ নয়’ বলে।

ধারণা করা হয় পেশাগত জীবনের পারফরম্যান্স প্রভাব ফেলে ব্যক্তির মানসিকতা থেকে ব্যক্তিগত জীবনেও। ২০২৩ বিশ্বকাপ থেকেই ব্যাটে-বলে হতশ্রী সাকিব যেন হারিয়ে খুঁজছেন নিজেকে। সবসময় মাঠের ক্রিকেটে দাপুটে দেশের ক্রিকেটের আকাশে ১৮ বছর ধরে সবচেয়ে জ্বলজ্বল করা তারাটার এমন অল্পতে তৃপ্ত হয়ে যাওয়াটা খুব সম্ভবত পারফরম্যান্সে পিছিয়ে থাকার প্রভাবেই। ব্যাপারটা খানিকটা ‘নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়’ চরণের মতোই।