![শেরপুরে তরুণ ভোটাররা চান উন্নয়নের নিশ্চয়তা](uploads/2023/12/18/1702919551.Sherpur.jpg)
ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুর। তিনটি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত এ জেলার জনসংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ। তাদের মধ্যে ভোটার সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এখন পর্যন্ত জেলায় নতুন ভোটার হয়েছেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৩৭ জন, যা মোট ভোটারের প্রায় ১৫ শতাংশ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে জেলাজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তাদের মধ্যে নতুন ভোটারদের আগ্রহ একটু বেশি।
তারা বলছেন, সুষ্ঠু পরিবেশ থাকলে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে তারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে যাদের অবদান বেশি থাকবে, সুখে-দুঃখে যাদেরকে পাশে পাবেন এবং জেলার যোগাযোগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে যারা অবদান রাখবেন তাদেরকেই তরুণ ভোটাররা পছন্দের তালিকায় এগিয়ে রাখবেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে প্রাধান্য দেওয়ার ব্যাপারে তারা কোনো আপস করবেন না।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত শেরপুর-১ আসন, নকলা-নালিতাবাড়ী নিয়ে শেরপুর-২ ও শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী নিয়ে গঠিত শেরপুর-৩ আসন। এর মধ্যে শেরপুর-১ আসনের নতুন ভোটার ৬৫ হাজার ৫৬১ জন। আর এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৯ জন। শেরপুর-২ আসনের নতুন ভোটার ৬৩ হাজার ১৫২ জন, আর এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১২ হাজার ৩১০ জন। শেরপুর-৩ আসনের নতুন ভোটার ৫৭ হাজার ৬২৪ জন। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৩ হাজার ১৪৪ জন। তিনটি আসনের মোট ভোটার ১২ লাখ ২২ হাজার ৩৯৩ জন। এর মধ্যে নতুন ভোটার হয়েছেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৩৭ জন।
শেরপুর সদরে বাসিন্দা নতুন ভোটার মাসুদ হাসান হৃদয় খবরের কাগজকে বলেন, ‘যারা দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে রূপান্তর করবে, আমরা তরুণরা সেই প্রার্থীকেই বেছে নেব। আমরা আশা করি, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তাহলে সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারব।’
পৌর শহরের বাকড়াশা এলাকার কলেজপড়ুয়া আরেক তরুণ ভোটার রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমার জীবনের প্রথম ভোটটা আমি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকেই দিতে চাই। যারা আমার মতো তরুণ রয়েছে, তাদের আমার আহ্বান তারাও যেন নতুন ভোটার হিসেবে জীবনের প্রথম ভোটটা মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের শক্তিকেই দেয়।’
গৃদ্দানারায়ণপুরের নতুন ভোটার হাসেম মিয়া বলেন, ‘যাকে সব সময় আমাদের কাছে পাব। যাকে ভোট দিলে আমাদের এলাকার উন্নয়ন করবেন, বিপদ-আপদে পাশে থাকবেন, নতুন ভোটার হিসেবে তাকেই ভোটটা দেব।’
পৌর শহরের শেরীপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন নামের আরেক তরুণ বলেন, ‘আমাদের শেরপুরে এখনো রেললাইন হয়নি, মেডিকেল কলেজ হয়নি, বিশ্ববিদ্যালয় হয়নি। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে এমন প্রার্থী, যারা আমাদের এই দীর্ঘদিনের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করবে। আমরা সবসময় অবহেলিত হয়ে আছি। অনেক কিছু থেকে এখনো বঞ্চিত। এসব বিষয় মাথায় রেখে ভোটররা এবার জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবেন।’
জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাউনিয়া এলাকার নতুন ভোটার জেনিয়া জান্নাত খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি এবার ভোটার হয়েছি। জীবনে প্রথম ভোট দেব। আমি অবশ্যই সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে দেখেশুনে আমার ভোটাধিকার প্রয়োগ করব। খুব সহজেই আমরা যার কাছে যেতে পারি, বিপদ-আপদে যিনি আমাদের পাশে থাকবেন, তাকেই আমি ভোট দেব।
শেরপুর সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, এবার যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তারা বয়সে তরুণ। তারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। তবে আমার বিশ্বাস তারা মুক্তিযুদ্ধকে লালন করেন, ভালোবাসেন। আশা করছি নতুন ভোটাররা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির সমর্থককে ভোট দেবেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ভোট দেবেন।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডের সাবেক সভাপতি নূরুল ইসলাম হিরু বলেন, ‘শেরপুরের তিনটি আসনে যারা নতুন ভোটার, তারা আগামী ৭ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। তাদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, কারও কথায় প্ররোচিত না হয়ে, বিবেক খাটিয়ে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘শেরপুর জেলার পাঁচ উপজেলা নিয়ে তিনটি সংসদীয় আসন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সময়ে এখানে নতুন ভোটার বৃদ্ধি পেয়েছে। সব বৈধ ভোটাররা আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটার তালিকায় আছেন। তারা সবাই নিজ নিজ আসনের কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।’