দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে মোট প্রার্থী ১০ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ছাড়া অন্য কাউকে চেনেন না ভোটাররা। এলাকাবাসীদের কাছেও তাদের নাম অজানা। প্রচারের চতুর্থ দিনেও বাহাউদ্দিন নাছিম ছাড়া মাঠে দেখা যায়নি অন্যদের তেমন তৎপরতা। ফলে এই আসনে এখনো জমে ওঠেনি ভোটের আমেজ।
স্থানীয় কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, তারা নৌকার প্রার্থী বাহাউদ্দিন নাছিমকে চেনেন। তিনি এলাকায় গণসংযোগ চালিয়েছেন। বাকিদের তারা প্রচার করতে এখনো দেখেননি। বাকি ৯ জনের দল কিংবা নেতা-কর্মীদের কোনো কার্যক্রমও চোখে পড়েনি। তাদের অধিকাংশই এলাকায় অপরিচিত মুখ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ভোটের মাঠে না থাকায় উৎসবের আমেজে ভাটা পড়েছে। একই সুরে কথা বলছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা।
তাদের ভাষ্য, তিন মেয়াদ পর এবারই এই আসনে নৌকার প্রার্থী পেলেন নেতা-কর্মীরা। তাকে পেয়ে জনগণ যেমন খুশি, তেমনি নেতা-কর্মীদের এত দিনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে। এর আগে বৃহত্তর মতিঝিল থাকাকালীন সময়ে সাবের হোসেন চৌধুরীকে পেয়েছিলেন। অন্য দলের প্রার্থীদের তারাও চেনেন না।
ঢাকার প্রাণকেন্দ্র এই আসন মতিঝিল, রমনা, পল্টন, শাহবাগ, শাহজাহানপুর থানা নিয়ে গঠিত। এই আসনে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নয়টি ওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত। মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫০ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫১ হাজার ৯৩৮ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ১৮ হাজার ৭১১ জন।
এই আসনে বাকি প্রার্থীরা হলেন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য জোটের আবু নোমান মোহাম্মদ জিয়াউল হক মজুমদার (মিনার), তৃণমূল বিএনপির এম এ ইউসুফ (সোনালি আঁশ), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির খন্দকার এনামুল নাছির (একতারা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. আবুল কালাম জুয়েল (আম), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এস এম সরওয়ার (মোমবাতি), জাতীয় পার্টির মো. জুবের আলম খান (লাঙ্গল), বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান (ফুলের মালা), ন্যাশনালিস্ট ঐক্য ফ্রন্টের মো. সাইফুল ইসলাম (টেলিভিশন) ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের মো. রাসেল কবির (ছড়ি)। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কারাগারে রয়েছেন। নির্বাচনি এলাকায় তার কোনো পোস্টার নেই।
আরামবাগ মোড়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা মো. তাহেরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই আসনে এবারই প্রথম আওয়ামী লীগের প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। অন্য প্রার্থীদের তিনি চেনেন না। মির্জা আব্বাস থাকলে ভোট আরও উৎসবমুখর হতো। আগের এমপি রাশেদ খান মেনন এলাকার জনগণের খোঁজখবর রাখেননি বলেও অভিযোগ করেন।’
নয়াপল্টন মসজিদ গলিতে মাস্টার ফার্মেসির মালিক ও ভোটার মোহাম্মদ শামীম বলেন, ‘স্থানীয় নেতা-কর্মীরা, নৌকার প্রার্থীরা প্রচার চালাচ্ছেন। বাসা-দোকানে লিফলেট দিয়ে গেছেন। কিন্তু অন্য প্রার্থীরা আসেননি। বিএনপি এলে প্রচার আরও জমে উঠত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মতিঝিল ব্যাংকপাড়া, আরামবাগ, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা, পল্টন, সেগুনবাগিচা, ইস্কাটন রোড ও শান্তিনগরে এলাকার অলিগলিতে বাহাউদ্দিন নাছিমের পোস্টার ও ব্যানার। দৈনিক বাংলা-ফকিরাপুল রাস্তার দুই ধারে প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে পোস্টার টানানো হয়েছে। কাকরাইল-শান্তিগর ও বেইলি রোডেও একই দৃশ্য। কাকরাইলে ১৯নং ওয়ার্ডের পেট্রলপাম্প প্রবেশমুখে ব্যানার দিয়ে গেট তৈরি করা হয়েছে। মোড়ে মোড়ে ব্যক্তিগতভাবে নৌকার প্রার্থী নাছিমের পক্ষে ঝুলিয়েছেন পোস্টার-ব্যানার। এদিকে পোস্টার লাগানোর দিক দিয়ে অনেকটাই পিছিয়ে আছেন তৃণমূল বিএনপির এম এ ইউসুফ। সড়ক ও অলিগলিগুলো কয়েক মিনিট হাঁটলে দেখা মেলে দুএকটা পোস্টার। তবে প্রায় মোড়েই এম ইউসুফের পোস্টার থাকলেও বাকিদের কোনো পোস্টার দেখা যায়নি।
আরামবাগ হাইস্কুল ও কলেজ গলিতে চায়ের দোকানদার মো. নুরুন নবী বলেন, ‘ইউসুফ ভালো মানুষ। তিনি মগবাজারে থাকেন। তবে নির্বাচনে দাঁড়ালেও জয়ী হতে পারবেন না।’
রাজধানীর শান্তিনগর মোড়ের কাছে বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রধান নির্বাচনি ক্যাম্প। সেখানে দুপুর দেড়টার দিকে দেখা যায়, নিচতলায় নেতা-কর্মীদের ভিড় রয়েছে। নৌকার পরিচিত গানের সুরে চাওয়া হচ্ছে ভোট। কেউ কেউ রিকশা-ভ্যানে করে পোস্টার-লিফলেট নিয়ে ছুটে চলছেন। আজ শুক্রবার শান্তিনগর মোড় থেকে প্রচার শুরু করবেন বাহাউদ্দিন নাছিম। কার্যালয়ের দপ্তরের দায়িত্বে থাকা এইচ এম রায়হান বলেন, ‘৯টি ওয়ার্ডে রিকশায় করে নৌকার গান ও মাইকিং চলছে। এ ছাড়া পোস্টার, লিফলেট ও প্রার্থীর নম্বরসহ ভিজিটিং কার্ড ভোটারদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। যাতে এলাকাবাসী ফোন করে তাদের অভিযোগ সরাসরি জানাতে পারেন।’
ক্যাম্পের নিচে দাঁড়ানো শান্তিনগর পশ্চিম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক হোসেন রিপনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী পেয়ে জনগণ ও নেতা-কর্মীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। আগের এমপি আমাদের খোঁজখবর নেননি, আমরাও তার কাছে যাইনি।’
পল্টন টাওয়ারের সামনে নৌকার নির্বাচনি ক্যাম্পে দুপুর ১টার দিকে গিয়ে দেখা যায় কার্যালয়ে দুই-চারজন ছাড়া কেউ নেই। কার্যালয়ের ভেতরে কথা হয় পল্টন থানা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন ‘তিন মেয়াদ পর এবার প্রথম আওয়ামী লীগের প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। আগে নৌকার এমপি থাকলেও সেভাবে মূল্যায়ন করেননি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের।’