ভোটের হাওয়া লেগেছে রাজধানীর মতিঝিল, রমনা, পল্টন, শাহবাগ, শাহজাহানপুর থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৮ আসনেও। ব্যাংক-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষা, প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো এই আসনে রয়েছে। অন্য আসনগুলোর তুলনায় এই আসনে থানাও বেশি। রাজধানীর এত গুরুত্বপূর্ণ আসন হলেও এখানে স্থানীয় ভোটারের সংখ্যা অন্য আসনের তুলনায় কম। আসনটিতে বাসিন্দা যারা রয়েছেন তাদের বড় অংশই রাজধানীর বাইরের ভোটার। প্রয়োজনের তাগিদে তাদের এই আসন এলাকায় থাকতে হচ্ছে। তবে এখানকার ভোটারদের কেন্দ্রে আনার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন আসনটির প্রার্থীরা। স্থানীয় নেতা ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে মোট প্রার্থী ১০ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। নৌকার প্রার্থী হলেও নাছিম এর আগে মাদারীপুর-৩ আসনের এমপি ছিলেন। দ্বাদশ নির্বাচনে তিনি এই আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে লড়ছেন।
বাকি প্রার্থীরা হলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের আবু নোমান মোহাম্মদ জিয়াউল হক মজুমদার (মিনার), তৃণমূল বিএনপির এম এ ইউসুফ (সোনালি আঁশ), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির খন্দকার এনামুল নাছির (একতারা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. আবুল কালাম জুয়েল (আম), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এস এম সরওয়ার (মোমবাতি), জাতীয় পার্টির মো. জুবের আলম খান (লাঙ্গল), বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান (ফুলের মালা), ন্যাশনালিস্ট ঐক্য ফ্রন্টের মো. সাইফুল ইসলাম (টেলিভিশন) ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের মো. রাসেল কবির (ছড়ি)। এর মধ্যে নৌকার প্রাথী ছাড়া অন্যরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ভোটের মাঠে তাদের উল্লেখযোগ্য তৎপরতা দেখা যায়নি। এলাকাবাসীর সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ তেমন নেই বলে জানা গেছে। ভোট আসায় তাদের নাম শোনা যাচ্ছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত দুটি সংসদ নির্বাচনে অন্য আসনের মতো এই আসনেও কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। সে বিষয় নিয়েই চিন্তত প্রার্থীরা। এই আসনেই আওয়ামী লীগের রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস একাধিকবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপিবিহীন ভোটে দলটির অনুসারীরা ভোট দেবে কি না তা নিয়েও এক ধরনের চিন্তা রয়েছে প্রার্থীদের। এই আসনে মোট ভোটারসংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫০ জন।
পার্শ্ববর্তী ঢাকা-৭ আসনে মোট ভোটারসংখ্যা ৩ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি। ঢাকা-৯ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৫০ হাজার।
স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই আসনে নৌকার প্রার্থী বাহাউদ্দিন নাছিমের নাম আলোচনায় তারা শুনছেন। অন্য প্রার্থীরা নামে আছেন, কিন্তু ভোটের মাঠে প্রচারে তেমন দেখা যাচ্ছে না। তবে পল্টন মোড়ে তৃণমূল বিএনপির এম এ ইউসুফের সোনালি আঁশ ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সরওয়ারের ‘মোমবাতি’র পোস্টার ও ব্যানার দেখা গেছে। যদিও নৌকার পোস্টারের বাইরে অন্য পোস্টার দেখলে ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ করছেন প্রার্থীরা।
রাজধানীর শান্তিনগর মোড়সংলগ্ন বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রধান নির্বাচনি ক্যাম্প। গতকাল বিকেলে ঢাকাস্থ বৃহত্তর ফরিদপুর আইনজীবী কল্যাণ সমিতির নেতারা তার প্রধান নির্বাচনি কার্যালয়ে মতবিনিময় করেন। সেখানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাতে জনগণ ভোট দিতে না আসে, এ জন্য একটি চক্র ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে। তবে মানুষ ভোট দিয়ে দেশকে শক্তিশালী করতে চায়। তারা বিএনপিকে আর সমর্থন করে না। জনগণ এবারও নৌকায় ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় আনবে। এ সময় স্থানীয় ভোটারদের নিজ নিজ কেন্দ্রে এসে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে প্রতিপক্ষ থেকে প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী এম এ ইউসুফ। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা পোস্টার লাগালে রাতেই প্রতিপক্ষের লোকজন ছিঁড়ে ফেলছে। প্রাণনাশের হুমকিও পেয়েছি। তবে কারা এসব করছে তা জানতে চাইলে ইউসুফ কারও নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।